চুয়াডাঙ্গার হাসনহাটিতে পূর্বশত্রুতার জেরে হেদায়েত আলী হত্যার ঘটনা
নিউজ ডেস্ক:আদালতে মিথ্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দাখিলের অভিযোগের সত্যতা মেলায় দাফনের ৪৯ দিন পর চুয়াডাঙ্গা সদরের হাসনহাটি গ্রামের হেদায়েত আলী নামের এক ব্যক্তির গলিত লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে গতকাল বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিব্বির আহমেদের উপস্থিতিতে এ লাশ উত্তোলন করে সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়। এ সময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি-চুয়াডাঙ্গার ইন্সপেক্টর ময়েন উদ্দীন আহমেদ বিশ্বাস, স্থানীয় সিন্দুরিয়া ফাঁড়ি পুলিশের ইনচার্জ মুশফিক রহমানসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধি এবং নিহত ব্যক্তির পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৮ জুলাই তারিখে মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির মেজো ছেলে আক্তার হোসেনের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চুয়াডাঙ্গা সদর আমলি আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাজেদুর রহমান জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে লাশ উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। আজ ওই ময়নাতদন্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, মামলার বর্ণনায় জানা যায়, হেদায়েত আলীর ছোট শ্যালক আছির উদ্দীনের ইটভাটার জায়গা-জমির মালিকানা ও দখলদারিত্ব নিয়ে হাসানহাটি গ্রামের মৃত সনজের আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল পরিবারটির। ১৯ জুন মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হাসানহাটি গ্রামের জমিদার মোড়ে পূর্ববিরোধের জের ধরে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই গ্রামের মৃত সাদেক আলীর ছেলে আব্দুল কাদের (৪৫), রমজান আলীর ছেলে মাসুদ ওরফে বোমা মাসুদ (৩০) ও শাহীন আলী (৩৪) এবং সনজের আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামরা (৪০) হেদায়েত আলীকে মারধর করে গুরুতর জখম করেন। পরে তাঁকে সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় হামলাকারীদের নাম উল্লেখ করে তাঁদের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন নিহত ব্যক্তির মেজো ছেলে আক্তার হোসেন।
আক্তার হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘হামলাকারীদের হাতে আমার পিতা মারা গেছে, এ ঘটনা এ অঞ্চলের সবাই জানে। মৃত্যুর পর তার বাঁ চোয়ালে ও কানে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন থাকলেও তা আদৌ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করেননি ময়নাতদন্তকারী ডা. মো. আবুল হোসেন ও ডা. মো. শামীম কবির। এমনকি তাঁদের দেওয়া ময়নাতদন্ত রিপোর্ট অনুসারে আমার পিতা জীবিত থাকা অবস্থায়ই ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আর এ সমস্ত বিষয়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন চুয়াডাঙ্গার সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম খাইরুল আলম। সিভিল সার্জন ও দুজন ডাক্তার একত্রে আমার পিতার হত্যাকারীদের সঙ্গে হাতমিলিয়ে এ মিথ্যা ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রস্তুত করেছেন। তাঁরা দুর্নীতি করে আদালতে সঠিক রিপোর্ট দেননি এবং প্রকৃত সত্য গোপন করেছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার রাতে আমার পিতার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার এসআই অচিন্ত কুমার পাল। আমার পিতার শরীরের একাধিক স্থানে এবং বাঁ চোয়ালে ও কানে আঘাতে স্পষ্ট চিহ্ন থাকলেও সুরতহাল রিপোর্টে তা উল্লেখ করা হয়নি। বরং সবকিছু স্বাভাবিক আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্ট প্রস্তুতের সময় আমি, আমার ভাইসহ অনেকে আঘাতের চিহ্নের ব্যাপারে তাঁকে অবগত করলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি ওই আঘাতের চিহ্ন সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেনি।’
উল্লেখ্য, নিহত হেদায়েত আলী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের হাসনহাটি গ্রামের মৃত পুটি ম-লের ছেলে। গত ১৯ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে পূর্ববিরোধের জেরে তুচ্ছ ঘটনা থেকে সৃষ্ট গোলযোগে প্রতিপক্ষের লোকজন তাঁকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন। তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরদিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে হাসনহাটি গ্রামের কবরস্থানে তাঁর লাশের দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়।