প্রয়োজনীয় ঔষধ পেতে হাপিত্যেশ!
নিউজ ডেস্ক:রাতে হাসপাতাল এলাকায় ভালো ঔষধের দোকান খোলা না থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি রোগী ও তার স্বজনদের। জরুরী মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ন ঔষধ হাতের নাগালে না পাওয়ায় যেতে হয় বড় বাজারের জনতা ফার্মেসীতে। সেটিও রাত ২টার পর বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে পৌছুনোর জন্যও রাতে পাওয়া যায় না ইজিবাইক ও রিক্সাসহ কোন যানবাহন। এদিকে হাসপাতাল এলাকায় মামুন ফার্মেসী নামে একটি ঔষধের দোকান খোলা থাকলেও সেখানে পাওয়া যায় না গুরুত্বপূর্ণ ঔষধের অধিকাংশই। একাধিক রোগীর স্বজনসহ গত রাতে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসকের দাবি- হাসপাতাল এলাকায় ভালো ফার্মেসীর দোকানগুলো পালাক্রমে প্রতিরাতেই যেন একটি করে খোলা রাখে। সেটি ঔষধ ব্যবসায়ী দোকান মালিক সমিতির নীতিনির্ধারকরাসহ ঔষধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ, সিভিল সার্জন ভেবে দেখবেন; প্রত্যাশা সকলের।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাতে পুরাতন জেল খানা এলাকা থেকে বড় বাজার রাস্তায় পঞ্চাশোর্ধ এক বৃদ্ধা লোকের ভোদৌড় দেখে প্রতিবেদকরে মনে কৌতুহল সৃষ্টি হয়। এত রাতে দৌড়ানোর কারণ জানতে চাইলে বৃদ্ধা জানান, তিনি আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী বন্দরভিটার মৃত বনমালী মন্ডলের ছেলে জায়গীজ মিয়া। তার মেয়ে নাজমুন নাহার পুত্র সন্তান প্রসব করেছে। হাসপাতালে সরবরাহ না থাকায় কর্তব্যরত নার্স তাকে একটি ইনজেকশন (পিটন) লিখে দিয়েছেন বাইরে থেকে আনার জন্য। তিনি বলেন, ‘বাবা ওষুধ লাগবে। হাসপাতালের সামনের একটা ফার্মিসি খোলা আছে। ওই দুকানে এই ওষুদডা নেই। দোকানদার বেডা বললো বড় বাজারে যান, জনতাই পাওয়া যাবে। কিন্তু এটটাও অটো-রিক্সা কিচ্চু না পেয়ে দৌড় শুরু করলাম।’ তখন প্রতিবেদক তার মোটরসাইকেলে বৃদ্ধাকে তুলে জনতা থেকে ঔষধ নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে পৌছুতে সহায়তা করেন।
হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, বৃদ্ধার মেয়ের দ্বিতীয় সন্তান এটি। বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ১০টার দিকে প্রসব বেদনা উঠলে সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয় তাকে। কিন্তু বেড না পাওয়ায় ফ্লোরে জায়গা হয় তার।
এদিকে সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবন প্রস্তুত রয়েছে। তবে জনবল সংকটের কারণে সেখানে সেবাদান কার্যক্রম চালু করতে পারছে না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে অত্যাধিক তাপ প্রবাহ বয়ে চলার কারণে জন জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রকোপ বেড়েছে ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ গরম জনিত বহু রোগের। এই সকল সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়িত শত শত রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অথচ রাতে একটিও ভালো ঔষধের দোকান খোলা থাকে না, যেখানে প্রয়োজনীয় সকল ঔষধ পাওয়া যায়। ফলে কূলকিনারা না পেয়ে ছুটে যেতে হয় বড় বাজারের জনতা ফার্মেসীতে।
এ প্রসঙ্গে একাধিক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগের সুরে বলেন, ‘কী দরকার হাসপাতাল এলাকা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো ফার্মেসী-ঔষধের দোকান রেখে? যেখানে একটু রাত গভীর হলেই একটি প্রয়োজনীয় ঔষধের জন্য দিকবিদিক ছুটে বেড়াতে হয়। যেতে হয় হাসপাতাল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে। প্রতিনিয়ত রোগীর এমন সমস্যা জেনেও কেনো হাসপাতালে রাখা হয় না ওই সকল ঔষধের সরবরাহ? যদি নিয়ম করে প্রতিদিন একটি ভালো ঔষধের দোকান খোলা রাখা হয় তাহলে, এই দুর্ভোগ অনেকাংশেই কমে যাবে।
এ সমস্যার সমাধান চেয়ে সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, ‘উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ চাইলে হাসপাতাল এলাকায় দু’একটি ভালো ঔষধের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। তাহলে রোগী ও রোগীর স্বজনদের আর দুর্ভোগে পড়তে হবে না।’