বিদ্যুতের ঝলকানিতে আলো যখন অন্ধকারে
হুসাইন মালিক: রাত সাড়ে ১১টা দৈনিক সময়ের সমীকরণের বার্তা বিভাগে কাজের চাপে ফুসরত ফেলার জো নেই কারোর। এর মধ্যে অফিস ডেস্কে বসে নিউজ লেখার ফাঁকেফাঁকে পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক এসএম শাফায়েত চুয়াডাঙ্গার প্রধান সড়কে সদ্য উদ্বোধন হওয়া আধুনিক এলইডি সড়ক বাতির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তার গল্পে বিরক্তি লাগলেও শহরের নতুন আলোর সাথে সাক্ষাত করতে মন উসখুশ করে উঠলো। নিউজ ডেস্কের সব কাজ ফেলে চুয়াডাঙ্গা শহরের প্রধান সড়কে গতরাতেই উদ্বোধন হওয়া আধুনিক এলইডি সড়ক বাতির আলোর ঝলকানি দেখতে বের হয়ে পড়লাম। অফিসের সবাইকে এই আলো দেখার আমন্ত্রণও জানালাম। কিন্তু সবাই (সম্ভাবত) তাচ্ছিল্য মাখা কন্ঠে বললো আলো দেখার মত কিছু? তবে, সঙ্গী পেলাম অফিসে বসা চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীক নেতা সুমন পারভেজ ভাইকে। নিজের সিঙ্গাপুর থেকে আসা ডিএসএলআর ক্যামেরাটা ঘাড়ে নিতেই অফিসে নিউজে ব্যস্ত থাকা প্রধান সম্পাদক নাজমুল হক স্বপন ভাই একবার চোখের চশমাটা হালকা নামিয়ে এবং অফিসের সোফায় বসা তার স্ত্রী মোবাইলে (মনে হয়) নিউইয়র্কের ফুপুর সাথে চ্যাটে ব্যস্ত বিভা ভাবি আমাকে ও সুমন ভাইকে একবার আপাদমস্তক দেখে নিলেন। তারপর চিরচেনা মুচকি হেসে অজানা কোন সঙ্কেত দিলেন। তখন বুজিনি মুচকি হাসিটার মানে কি হতে পারে! বুঝতে পারলাম, সড়কের নতুন আলো দেখতে বেরিয়ে। কারন আমরা অফিস থেকে বেরুনোর পর পরই শুরু হলো বিদ্যুতের লোডশেডিং। আলো নয় শুধু অন্ধকার দেখেই ফিরলাম। সময়ের সমীকরণ অফিস থেকে শুরু করে বড় বাজার হয়ে রেল বাজার টু কবরী রোড, রুপসা (পান্না) সিনেমা হল রোড সবশেষে একাডেমী মোড়ও ঘুরতে বাদ রাখেনি। কোথাও নেই ডিজিটাল আলোর ঝলকানি। শুধুই আবছা অন্ধকার। রাগ করে অন্ধকারেই দাড় করিয়ে সুমন ভাইয়ের একটা ছবি তুলে সোজা চলে এলাম অফিসে। সাথে নিয়ে এলাম একগাদা আলো না দেখার আক্ষেপ।
আমার আর সুমন ভাইয়ের আক্ষেপ দেখে বিভা ভাবি আমাদের আরো খেপাতে পত্রিকার শহর প্রতিবেদক আনিছ বিশ্বাস ও প্রধান কম্পিউটার অপারেটর বিএ জীবনকে বললো অফিসের লাইট গুলো অফ করে দাও, এতো আলো চোখ সহ্য করছে না। পত্রিকার কম্পিউটার টেকনেশিয়ান রাহুল কিছু না বুঝেই বললো ভাবি আলো বেশি কই? ঠিকই তো আছে। এবার বিভা ভাবি বললো কেন তোমাদের বার্তা সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক রাস্তা থেকে কত আলো অফিসে নিয়ে এসেছে দেখছো না। ভাবির এ দুষ্টুমি মাখা তিরস্কার সহ্য করতে না পেরে শেষমেশ সুমন ভাই প্রস্থান করলো। আর আমি বার্তা কক্ষের লকটা দিয়ে “বিদ্যুতের ঝলকানিতে ডিজিটাল অন্ধকার দেখার আক্ষেপ নিয়ে প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদ কাটা ছেড়াই ব্যস্ত হলাম। কিন্তু পুরো অফিস তখন ভাবির কথায় দুষ্টমির হাসি হাসছে। হাসির উচ্চস্বর মনে হলো কে যেন কানে গরম পারদ ঢালছে।
সবকিছুর জন্য দায়ি বিদ্যুতের অসময়ের লোডশেডিং। তাই যতই আধুনিক এলইডি সড়ক বাতির লাগানো হোক না কেন? বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান না হলে ডিজিটাল আলো ম্যানুয়াল অন্ধকারে হারিয়ে যাবে। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট একটাই চাওয়া বিদ্যুতকে আরো ডিজিটাল করুন। লোডশেডিং নামক যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিন।