দর্শনায় সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, দোকান ভাঙচুর
নিউজ ডেস্ক:দর্শনায় ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়ে কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিনভর চলে দফায় দফায় অস্ত্রের মহড়া। এ সময় একপক্ষ দর্শনা রেলবাজারের জিমি ইলেকট্রিক নামের একটি দোকানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। পরে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। এ সময় রামদা, ছুরিসহ ছাত্রলীগের ছয় কর্মীকে আটক করা হয়।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে দর্শনা সরকারি কলেজের ছাত্রলীগের সদস্য দর্শনা পৌর এলাকার দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের ইমন (২২) ভর্তির জন্য আটজন শিক্ষার্থীকে কলেজ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। এ সময় কলেজ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক হঠাৎপাড়ার রায়হান উদ্দিনের সঙ্গে ইমনের বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধটি একপর্যায়ে কলেজ প্রাঙ্গণেই সংঘর্ষের রূপ নেয়। এ সময় ইমনকে চড়-থাপ্পড় মেরে কলেজ থেকে বের করে দেন রায়হান। এ সংঘর্ষের জেরে ইমন তাঁর লোকজনকে নিয়ে দক্ষিণ চাঁদপুরে নিজের বাড়ি ফেরার সময় দর্শনা বাসস্ট্যান্ড চৌরাস্তার মোড়ে মিলনের চায়ের দোকানে কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিনকে আচমকা মারধর করেন। এ খবর পেয়ে দর্শনা কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রভাত আলম ও দপ্তর সম্পাদক রায়হান উদ্দিনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের ১০-১৫ জনের একটি দল দর্শনা বাসস্ট্যান্ডে যেয়ে আল আমিনকে উদ্ধার করেন। এ সময় ইমনের পক্ষের কলেজ ছাত্রলীগের নেতা দর্শনা দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের কেরামত আলীর ছেলে জালাল উদ্দিনকে (২১) মারধর করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। স্থানীয় লোকজন জালাল উদ্দিনকে উদ্ধার করে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে ভর্তি করেন। এরপর প্রভাত আলম ও রায়হানের পক্ষের ছাত্রলীগের কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে দর্শনা রেলবাজারে অবস্থিত কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মিল্লাত হোসেনের বড় ভাই জিলকদ হোসেনের জিমি ইলেকট্রিক নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। প্রকাশ্যে এভাবে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দেখে রেলবাজারের দোকানিরা আতঙ্কে দোকান বন্ধ করে দেন। জিমি ইলেকট্রিক দোকানের মালিক জানান, তাঁর দোকানের প্রায় ৫০ হাজার টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
খবর পেয়ে দামুড়হুদা থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মিল্টনের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এ সময় রামদা, ছুরিসহ দর্শনা সরকারি কলেজের সামনে থেকে ছয় ছাত্রলীগের কর্মীকে আটক করা হয়।
দর্শনা বাজার কমিটির সভাপতি টিপু সুলতান ও সাধারণ সম্পাদক সাবির হোসেন মিকা জানান, ‘এ ঘটনার সঙ্গে রেলবাজারের ব্যবসায়ী জিমি ইলেকট্রিকের মালিক জিলকদের কোনো সম্পর্ক নেই। যদি সুষ্ঠু বিচার না করা হয়, তাহলে প্রয়োজনে আমরা সব দোকান বন্ধ করে দেব।’
এ ব্যাপারে কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক প্রভাত আলম ও দপ্তর সম্পাদক রায়হান উদ্দিন বলেন, ইমনসহ ৮-১০ জন আগ থেকেই কলেজ এলাকায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আসেন। অস্ত্রগুলো তাঁরা ফেলে গেলে কুড়িয়ে নিয়ে আসার সময় পুলিশের হাতে ছয়জন আটক হন।
এদিকে ইমন জানান, ‘আমি উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু ভাইয়ের কাছ থেকে আটজনের ভর্তি করার অনুমোদন নিয়ে কলেজে এসেছি, এ কথা বলার পর রায়হান আমাকে লাঞ্ছিত করে। এ নিয়েই মূলত উভয়ের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়।’
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, আটক হওয়া ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টি আজ (রোববার) তাঁরা দলীয় কার্যালয়ে বসে মীমাংসা করে নেবেন।