জিপু চৌধূরীর বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ : অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ইউএনও’র ঘটনাস্থল পরিদর্শন : চাল ভর্তি ট্রাক থানা হেফাজতে
নিউজ ডেস্ক: চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা এলাকার গরীব-দুখীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ’র চাল ভর্তি একটি ট্রাক রাতের বেলায় পৌরসভার প্রধান ফটক অতিক্রমকালে স্থানীয়দের হাতে আটক হয়েছে। এসময় ট্রাকের কেবিনে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানিফসহ ছাত্রলীগের একজন সাধারন কর্মিকে দেখে স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে নানারকম বিরুপ মন্তব্যসহ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ এনে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। পৌরসভা থেকে চাল ভর্তি ট্রাক রাতের বেলা অন্যত্র পাচারের ঘটনা শহরে ছড়িয়ে পড়লে দ্রতই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন সাংবাদিক-পুলিশসহ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা। এ রকম পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে ক্রমশই উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে। এরমধ্যেই চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ. সহকারি পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) আহসান হাবিব, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খান ঘটনাস্থলে সঙ্গীয় ফোর্সসহ উপস্থিত হন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌর মেয়র জিপু চৌধূরী ঘটনাস্থলে আসেন এবং একটি তালিকা দেখিয়ে বলেন, ট্রাকটিতে বোঝাই ভিজিএফ’র চাল পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে তালিকাভূক্ত ভাতাভোগীদের মাঝে বিতরণের উদ্দেশ্যে নেওয়া হচ্ছে। সুতরাং পাচার কিম্বা আত্মসাতের কোন প্রশ্নই আসে না। একটি পক্ষ আমার সুনামক্ষুণœ করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গরীব-দুখীদের চাল বোঝাই ট্রাকটি আটক করেছে। এসময় স্থানীয়দের অনেকেই মেয়রের এই বক্তব্যের বিরোধীতা করে প্রশ্ন রাখেন, তবে কেন রাতের আধারে এই চাল নেওয়া হচ্ছে? কেনইবা ট্যাগ অফিসার উপস্থিত নেই? মাথাপিছু ২০ কেজি চালের বরাদ্দের স্থলে কেনইবা ৭ থেকে ১০ কেজি চাল দেওয়া হচ্ছে? স্থানীয়দের এমন সব প্রশ্নের তাৎক্ষণিকভাবে কোন জবাব পৌর মেয়র দেননি। এসময় স্থানীয়দের বিক্ষোভ ও চাপের মুখে ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাকটি হেফাজতে নেয় সদর থানা পুলিশ। চাল ভর্তি ট্রাকটি পুলিশ হেজাফতে নেওয়ার পরেই যুবলীগ, ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মির একটি বিক্ষোভ মিছিল পৌর মেয়র জিপু চৌধূরীকে চাল চোর আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে পৌরসভা মোড় থেকে শহীদ হাসান চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে আবার পৌরসভা মোড় এসে প্রতিবাদ সভা করে। প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহাবুল হোসেন প্রমূখ। প্রতিবাদ সভায় পৌর মেয়র জিপু চৌধূরীর অপসারণ ও গরীব-দুখীর চাল আত্মসাতের ঘটনায় দ্রত আইনগত ব্যবস্থাগ্রহনের দাবি জানানো হয়।
এ ঘটনায় পৌর মেয়র জিপু চৌধূরীর দেওয়া ভাতাভোগীদের তালিকা ও বক্তব্যের সত্যতা যাচাইয়ে সদর থানা পুলিশের একটি তদন্তদল তাৎক্ষনিকভাবে পৌরসভার ৩ ও ৫নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন ভাতাভোগীর বাড়ীতে যায় এবং চাল পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে, ভাতাভোগীরা চালের ছোট বস্তা নিয়ে পুলিশকে দেখিয়ে প্রাপ্তি স্বীকার করেন। তবে পৌর মেয়রের বেশকয়েকজন দলীয় কর্মির কাছে ভিজিএফ’র চালের মজুদ দেখে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেন, কিছুক্ষণ আগে চাল বুঝে পেয়েছি। আগামীকাল রোববার (আজ) বিতরণ করবো।
এদিকে, ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাকটি থানা হেফাজতে নেওয়ার পর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াশীমুল বারী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহসহ ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন মহিলা কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে ট্রাকে থাকা চালের বস্তা গণনা করা হয়। গননায় মোট ৭৪টি বস্তার প্রতিটিতে ছোট ৬টি প্যাকেটে যার প্রতিটিতে ৭ কেজির অধিক চাল রয়েছে। এই তালিকা প্রস্তুত শেষে উপস্থিত ৭জন কাউন্সিলরের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। আজ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানা গেছে।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওয়াশীমুল বারী বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও গরীব মানুষের প্রাপ্য সংরক্ষণে এই ভিজিএফ’র চাল থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। আজ রোববার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কলিমুল্লাহ বলেন, ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাকটি আটক করা হয়নি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ এই ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
এদিকে, ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাক আটকের ঘটনায় শহরজুড়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় পুলিশ সর্তক অবস্থায় রয়েছে।
ভিজিএফ’র চাল ভর্তি ট্রাক আটকের এ ঘটনায় মেয়র জিপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে আজ পৌরবাসীর ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
অপরদিকে, মেয়র জিপু চৌধুরী ও কাউন্সিলরদের পক্ষ থেকেও সংবাদ সম্মেলনের কথা রয়েছে।