মানব সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই দেখা যাবে যে, পাগলাটে কাজকর্ম আর বড় বড় উদ্ভাবকদের মাঝে রয়েছে এক নিবিড় সম্পর্ক। হয়ত অতীতের জামানার বিখ্যাত উদ্ভাবকগন নিজেদের কাজ নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকতেন যে নিজেদের এই পাগলাটে কাজকর্ম নিয়ে তাদের নিজেদেরই কোন মাথা ব্যাথা ছিল না। যা হোক তাদের কি চিন্তা ছিল তা তো আর আমাদের জানা সম্ভব না। আজ আপনাদের এমন পাঁচ জন বিখ্যাত উদ্ভাবকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যাদের আবিষ্কার পৃথিবী বদলে দিয়েছে কিন্তু তাদের পাগলাটে কাজকর্ম আরো বেশি হতবাক করেছে আমাদের। তাহলে চলুন শুরু করা যাক, আর জেনে নেওয়া যাক এসব বিখ্যাতদের একটু অন্যভাবে।
০১) স্যামুয়েল মোর্সঃ অস্ট্রিয়া অ্যাংলো-স্যাক্সন আমেরিকানদের ধ্বংস করতে যাচ্ছিলেনঃ
‘মোর্স কোড’ (Morse code) সম্পর্কে তো সকলেই কমবেশি জানেন। আর এই মোর্স কোড তৈরি করেন স্যামুয়েল মোর্স, অবশ্য তিনি শুধু মোর্স কোড আবিষ্কার করেন নাই, আবিষ্কার করেছিলেন টেলিগ্রাফও। প্রতিভাবান এই আবিস্কারক মানব সভ্যতার যোগাযোগের ধারাটাই বদলে দিয়েছিলেন। মানব সভ্যতাকে নিয়ে এসেছিলেন নতুন এক যুগে। তিনি যতই প্রতিভাবান হক না কেন, তার কিন্তু মানষিক অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। তিনি ছিল অনেকটা কল্পনার জগতে বিচরণশীল। তিনি ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বিশ্বাস করতেন অনেকটা অন্ধভাবে। তিনি বিশ্বাস করতেনঃ নিগ্র, ইহুদীরা, ক্যাথোলিক খ্রিস্টানেরা এবং অস্ট্রিয়ার সকলে অস্ট্রিয়া অ্যাংলো-স্যাক্সন আমেরিকানদের ধ্বংস করতে চান এবং তিনিও এই কাজে আগ্রহী ছিলেন।
০২) উয়োশিরো নাকামাটসুঃ প্রায় আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতেন, কিন্তু তিনি ১৪৪ বছর বাঁচতে চাইতেনঃ
উয়োশিরো নাকামাটসু (Yoshiro Nakamatsu) খুব একটা নাম করা ব্যক্তিত্ব না হলেও তার আবিষ্কার কিন্তু বিশ্ব সেরা। তিনি আবিষ্কার করেনঃ ডিজিটাল ঘড়ি, টেক্সি মিটার, সিডি এবং ডিভিডি। কি অবাক হচ্ছেন নাকি? যখনই আপনি ডিজিটাল ঘড়ির দিকে তাকাবেন তখনই তার কথা মনে করবেন বা যখনই সিএনজি বা ক্যাবে কোথাও যেয়ে ভাড়া দিবেন তখনই তার কথা মনে করবেন বা নিজের কোন প্রিয় গানের সিডি বা সিনেমার ডিভিডি কিনবেন তখনই তার কথা মনে করবেন। অবিখ্যাত এই আবিস্কারকের আবিস্কারও কিন্তু মানব সভ্যতাকে পাল্টে দিয়েছে। তার নিত্যনতুন আবিস্কারের চিন্তা করার জন্য তিনি নিজেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে পানির মধ্যে ডুবে যেতেন অনেকটা মৃত্যুর কাছাকাছি চলে যেতেন। আর তার এই পরিকল্পনা এতটাই সফল হয়েছে যে এর মধ্যে তিনি ৩,০০০ এর উপর আবিষ্কার নিজের নামে প্যাটেন্ট করিয়েছেন। যা হোক তার ইচ্ছা ১৪৪ বছর বেঁচে থাকা আর এই কারনে তিনি তার দৈনিক কার্যক্রম লিপিবদ্ধ করে রাখেন (যেমনঃ খাওয়া, ঘুম এমন কি পায়খানার সময়সূচীও)।
০৩) জন হার্ভে কেলোগঃ হস্তমৈথুন সমাজ ধ্বংস করেঃ
এই সেই ব্যক্তি যে আবিষ্কার করে ছিল ‘কেলোগ কর্ন ফ্লেক্স’ (Kellogg’s Corn Flakes)। সুস্বাস্থকর এই খাবার যদিও আমাদের অনেক উপকারে আসে সকালের নাস্তা হিসেবে এবং বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমানিত যে এর থেকে ভাল সকালের খাবার আর হয় না, কিন্তু জন হার্ভে এই নাস্তা আবিষ্কার করেছিলেন মূলত হস্তমৈথুনের ঔষধ বা প্রতিকারক হিসেবে। সে মনে প্রানে বিশ্বাস করত হস্তমৈথুন সমাজ ধ্বংস করে, আর একারনে তিনি সমাজ থেকে হস্তমৈথুন দূর করার জন্য মারাত্মক কিছু পদক্ষেপ নেন। যা শুনলে আপনি শিউরে উঠবেন। এই যেমন ধরুন করুন ছেলে যদি বেশি সময় গোসলখানায় কাটাত তাহলে তাকে খৎনা দিয়ে দেওয়া হত, আর কোন বালিকা যদি বার বার গোছলখানায় যেত তাহলে তার ক্লাইটরিছে সরাসরি কার্বনিক এসিড ঢেলে দিতেন। এমন কি কেলোগ নিজের তৈরি কর্ন ফ্লেক্স খেতেন মার্কারি দিয়ে, কেননা তিনিও হস্তমৈথুনের দাস ছিলেন। এছাড়াও তিনি কিশোর বালকদের হস্তমৈথুন থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন। কিশোর বালকদের হাত বেঁধে বৈদ্যুতিক ঝটকা দিতেন। আর এই বৈদ্যুতিক ঝটকা দেবার এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিলেন যা ছিল অত্যান্ত বেদনাদায়ক। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন, কিন্তু আরো অবাক হবেন যখন জানবেন যে সে একবার ৯ বছর বয়স্ক এক কিশোরির ক্লাইটরিস কেটে ফেলেছিল হস্তমৈথুন থেকে তাকে বিরত রাখার জন্য। কি বিশ্বাস হচ্ছে না? গুগল করে দেখুন।
০৪) পিথাগোরাসঃ ফলের বিচির বিরুদ্ধে ধর্ম বিশ্বাস এবং নিজের মতবাদের পক্ষে একটা বিশেষ দলঃ
বিখ্যাত ব্যক্তি এই পিথাগোরাসের অবদান বলে শেষ করা যাবে না। স্কুল কলেজে এই পিথাগোরাসের তথ্য নিয়ে তো সকলেই পড়েছেন। বর্তমান গণিতে, জ্যামিতি ও ত্রিকোণমিতিতে তার অবদান অস্বীকার্য। এমন কি পদার্থ বিজ্ঞানের অনেক তত্ত্ব তার তত্ত্বের উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত। বিখ্যাত এই জ্ঞানী ব্যক্তির কার্যক্রম আপনাকে বেশ অবাক করবে। কেননা সে ছিল বিচি খাবার বিরোধী। এমন কি এটাকে সে অনেকটা ধর্মীয় বিশ্বাসে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার এই ধর্মে যোগদান করেছিল অনেক ব্যক্তিবর্গ। তার মতে বিচি হল শয়তান। কেননা বিচি খেলে পাদ আসে আর তা দেখতে জননেনি্দ্রয়ের মত। যে অবশ্য অনেকটাই ঠিক বলেছিল! কি বলেন?
০৫) টমাস আলভা এডিসনঃ AC বিদ্যুতের বিরুদ্ধে ছিলেনঃ
টমাস আলভা এডিসনকে কে না চিনেন! সবাই তাকে চিনেন বৈদ্যুতিক বাল্বের আবিস্কারক হিসেবে। তাই না? আসলে কিন্তু তিনি বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেন নাই, বরং অন্যের আবিষ্কারকে নিজের সংস্করণে চালিয়ে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে ‘১০টি মিথ্যা আমাদের শিখানো হয় (১ম পর্ব)’ লেখায় আলোচনা করেছিলাম তাই এখানে আর করলাম না। যা হোক, তিনি আরো আবিষ্কার করেছিলেন DC কারেন্ট। যারা AC আর DC বিদ্যুতের মধ্যে পার্থক্য বোঝেন না তাদের জন্য একটু বিস্তারিত বলি। DC (Direct Current) বিদ্যুৎ পাওয়া যায় সাধারনত ব্যাটারির মাঝে। এই বিদ্যুতে মানুষ বৈদ্যুতিক শক খায় না। কিন্তু বাণিজ্যিক ভাবে এই বিদ্যুৎ উৎপাদন করা লাভজনক নয়। কেননা বৈদ্যুতিক তারের মাধ্যমে এই বিদ্যুতকে খুব একটা দূর পর্যন্ত বিতরন করা সম্ভব নয়। আর এই কারনেই এই বিদ্যুতের বিকাশ খুব একটা বাণিজ্যিক ভাবে হয় না। কিন্তু বিখ্যাত আবিষ্কারক টেসলার আবিষ্কার AC (Alternative Current) তারের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত বিতরন করা সম্ভব। আর এই কারনেই বাণিজ্যিক ভাবে এর উৎপাদন হয়। আর এর প্রমান বর্তমানে আপনার বাসার বিদ্যুৎ। তো টমাস যখন জানলেন যে তার থেকে টেসলার বিদ্যুৎ সকলের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য, তখন তিনি উঠে পরে লাগলে AC বিদ্যুতের বদনাম করার জন্য। আর এর ধারাবাহিকতায় তিনি বানান অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার বৈদ্যুতিক চেয়ার। যাতে মানুষ বোঝে যে টেসলার আবিষ্কার কতটা বিপদজনক আর সকলে AC বিদ্যুৎ ছেড়ে DC বিদ্যুৎ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে ওঠে। তাতেও খুব একটা লাভ না হওয়ায় তিনি জনসম্মুখে এক হাতিকে বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট করে মেরে ফেলেন। দেখেন তারপরেও কিন্তু খুব একটা লাভ হয় নি টমাসের।