ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছেন ২০২৪ বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হবে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস (সি৩এস) জানিয়েছে, তাপমাত্রা রেকর্ড শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণ বছর হতে যাচ্ছে এটি। উষ্ণতায় এই বছরটি ২০২৩ সালকে যে পিছনে ফেলে দেবে এ বিষয়ে ‘কার্যত নিশ্চিত’ তারা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে।
আজারবাইজানে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের কপ-২৯ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে, এই তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অর্থায়নে বিশাল বৃদ্ধি নিয়ে সম্মত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় আলোচনার এই প্রত্যাশার গুড়ে বালি দিয়েছে। ২০১৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দেশটিতে পরিবেশ সুরক্ষাসংক্রান্ত নানা আইন বাতিল করেন ট্রাম্প। তখন প্রথম দেশ হিসেবে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র।
সি৩এস বলেছে, জানুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, এটি প্রায় নিশ্চি করেই বলা যায়, বছরের বাকি অংশে তাপমাত্রার বৈপরীত্য শূন্যের কাছাকাছি না এলে ২০২৪ সালই হবে বিশ্বের উষ্ণতম বছর।
সি৩এস-এর পরিচালক কার্লো বুওনটেম্পো রয়টার্সকে বলেছেন, ‘চলতি বছরের রেকর্ডের মৌলিক ও প্রধান কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত জলবায়ু উষ্ণ হচ্ছে। এটি সব মহাদেশে, সব সাগর অববাহিকায় উষ্ণ হচ্ছে। তাই আমরা সেই রেকর্ডগুলো ভাঙতে দেখতে বাধ্য।’
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ২০২৪ই হবে প্রথম বছর যখন প্রাক-শিল্প যুগের (১৮৫০-১৯০০) তুলনায় বিশ্ব ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি উষ্ণ হবে। প্রাক-শিল্প যুগে মানুষ শিল্পখাতে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াতে শুরু করেছিল।
কয়লা, তেল ও গ্যাস পোড়ানোর ফলে নির্গমন হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইড বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রধান কারণ।
পাবলিক রিসার্চ ইউনিভার্সিটি ইটিএইচ জুরিখের জলবায়ু বিজ্ঞানী সোনিয়া সেনেভিরত্নে বলেছেন, তিনি এই মাইলফলক দেখে বিস্মিত নন এবং কপ-২৯ এ দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতিকে কার্বন নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুক্ত করতে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ায় সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোনিয়া বলেন, ‘প্যারিস চুক্তিতে যে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল তা বিশ্বজুড়ে জলবায়ু বিষয়ক কাজে খুব ধীর গতির কারণে তা ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধের চেষ্টা করতে সম্মত হয়েছিল।
বিশ্ব সেই লক্ষ্যমাত্রায় এখনও পৌঁছায়নি। তবে সি৩এস বলছে, ২০৩০ সালের দিকেই বিশ্ব প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তাপমাত্রার প্রতিটি ভগ্নাংশই আবহাওয়ার চরম অবস্থাকে ত্বরান্বিত করে।
অক্টোবরে বিপর্যয়কর আকস্মিক বন্যায় স্পেনে শত শত মানুষের মৃত্যু হয়। পেরুতে রেকর্ড দাবানল ছড়িয়ে পড়ে এবং বাংলাদেশে বন্যায় ১০ লাখ টনেরও বেশি চাল ধ্বংস হয়। এতে খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী হয়ে পড়ে। মানব সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন মিলটন আরও খারাপ প্রভাব ফেলেছিল।