ঝিনাইদহ প্রতিনিধি॥
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার আরশেদ আলী চৌধূরীর বিরুদ্ধে দূর্ণীতি, স্বজনপ্রীতি প্রশিক্ষনের টাকা আত্বসাৎসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ উঠেছে। হরিণাকুন্ডুর অসহায় কৃষক দূর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার হাতে জিম্মি হয়ে পড়লেও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার আরশেদ আলী চৌধূরী যোগদানের পর থেকেই দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি গাছ কেটে বিক্রিসহ বিভিন্ন অনিয়ম শুরু করেন। উপজেলা কৃষি অফিসার হিসেবে প্রায় বছর চারেক পূর্বে এ উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের সময় থেকেই তিনি নানা বিতর্কের জন্ম দিয়ে একাধিকবার আলোচনার কেন্দ্রবৃন্দুতে উঠে আসেন। একজন উপ-সহকারী কৃষি অফিসারের একঘন্টা দেরি হওয়ায় তাকে পৃরো একদিনের বেতন কর্তন করেছেন এ কর্মকর্তা। কৃষি দপ্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ে অনিয়ম-দুণর্িিত ছাড়া কোন কাজ সম্পাদন করার সুযোগ নেই দূর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তার দাপটে। অনিয়ম ছাড়া হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসে হয় না এমন কোন কাজের নজীর নেই। সকাল থেকেই অনিয়ম-দূর্ণীতির হাট বসে এ দপ্তরটিতে। অফিস না করে তিনি উপজেলার অন্যান্য দপ্তরে সারাদিন সময় কাটান। কৃষি অফিসার আরশেদ আলীর বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদ করায় এবং তার সিন্নিকেটে যোগ না দেয়ায় সৎ অফিসার হিসাবে খ্যাত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফারুক আহম্মেদকে অন্যত্র বদলী হতে হয়েছে। হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দূর্নীতিবাজ কৃষি অফিসারের কাছে জিম্মি হয়ে আছেন। কিন্তু ন্যায্য সুবিধা বঞ্চিত অসহায় কর্মকর্তাগণ বিভিন্ন ধরনের হুমকি, চাকরী হারানোর ভয় এবং হয়রানির ভয়ে প্রকাশ্যে কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় পান। যে কর্মকর্তা-কর্মচারী তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে তাকেই ওই উপজেলা থেকে বদলী হতে হয়েছে।
শাহিন নামের একজন এসও কৃষি অফিসার আরশেদ আলীর অনিয়মের প্রতিবাদ করাই তাকে ওই উপজেলা থেকে বদলী করেছেন। এছাড়া কলের লাঙল বিতরনেও চরম অনিয়ম করেছেন এ কর্মকর্তা। প্রকৃত কৃষকদের বাদ দিয়ে যাদের মোটেও চাষাবাদ নেই তাদের মাঝে ভর্তুকির এ লাঙল বিতরন করা হয়েছে। কৃষি অফিস চত্বরে থাকা গাছ কেটে বিনা টেন্ডারে বিক্রি করার চাঞ্জল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। স্ব স্ব ইউনিয়নে বিসিআইসি সার ডিলার থাকা সত্বেও কৃষি অফিসার আরশেদ আলী তার পছন্দের ডিলার মাহবুব ট্রেডার্স দিয়ে সকল অনিয়ম দূর্নীতি করে থাকেন। উপজেলার প্রদর্শনীর সব বাগান মারা গেছে। পৈলানপুর গ্রামের শহিদুল্লাহ, দৌলতপুর গ্রামের রাজ্জাক, দারিয়ারপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান, বিনেদপুর গ্রামের মিরাসহ উপজেলার একাদিক কৃষকের প্রদর্শনী ব্লক মারা গেছে। এবং প্রদর্শনীর কৃষকদের কোন টাকা দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনিয়ম-দূর্ণীতি করে নামে বেনামে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এই আলোচিত কৃষি অফিসার আরশেদ আলী চৌধুরী। কৃষকদের নাম মাত্র প্রশিক্ষন দিয়ে সেখান থেকে টাকা লুটপাট করেন এ কর্মকর্তা। গুদামে প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে গম নেয়ার বিধান থাকলেও তিনি ভুয়া কৃষকের তালিকা প্রেরণ করে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা। মুজিব নগর সমন্বিত প্রকল্প, মালটা প্রদর্শনী, ওল এবং অন্যান্য কৃষি প্রদর্শনী থেকে টাকা লুটপাটের মহৌৎসব চলছে এ কর্মকর্তার নেতৃত্বে। উপজেলার শাখারীদহ ব্লকে মালটাসহ যেসব প্রদর্শনী দেয়া হয়েছে সম্প্রতি পরিদর্শনে গিয়ে তার কোন হদিস পায়নি কৃষি বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। শতাধিক আম গাছ লাগানো হলেও একটি আম গাছেরও অস্তিত্ব পাওযা যায়নি। কৃষকদের সার বাবদ টাকা বরাদ্ধ থাকলেও কয়েক কেজি সার দিয়ে তিনি পুরা টাকায় লোপাট করে থাকেন।
৩ বছর পরপর সরকারি চাকুরীজীবিদের বদলীর বিধান থাকলে দূর্নীতি স্বজনপ্রীতি ও বিভিন্ন অনিয়ম করার কারনে হরিণাকুন্ডু ত্যাগ করেন না। বদলীর আদেশ প্রাপ্ত হলেও অজ্ঞাত ক্ষমতার জোরে শেষ পর্যন্ত হরিণাকুন্ডুতে বসতী হয়ে উঠেছে এ কর্মকর্তা। প্রায় ৪ বছর ধরে হরিণাকুন্ডুতে চাকরী করার সুবাদে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেছেন। হরিণাকুন্ডুর অসহায় কৃষকসহ সচেতন নাগরিক সমাজের মাঝে আরশেদ আলীর খুটোঁর জোর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলেছেন এতদিন কিভাবে একজন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এক উপজেলায় চাকুরী করেন। এক নাগাড়ে এতদিন ধরে একই উপজেলায় চাকরী করায় কুষি বিভাগের যে কর্মকর্তায় আসুক না কেন তারা সবাই আরশেদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েন। ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে উপর মহলে তার লোক আছে কেউ কিছু করার ক্ষমতা রাখে না বলে হঙ্কার দেন এ কর্মকর্তা। তার অসদাচারণের কারণে কয়েকজন সৎ কর্মকর্তা হরিণাকুন্ডু কর্মস্থল থেকে বদলী হতে বাধ্য হয়েছেন। বর্তমান কর্মস্থলে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন অনুপস্থিত থাকেন তিনি। প্রাপ্ত তথ্যে আরো জানা গেছে, আরশেদ আলী চৌধূরী ফরিদপুর জেলার বালিয়াকান্দি কৃষি অফিসারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অনিয়ম, দূর্নীতি করার কারনে তার বিরুদ্ধে একাধিক পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। হরিণাকুন্ডু কৃষি অফিসার হিসেবে আরশেদ আলী ২০১৪ সালের জুলাই মাসে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি শুরু করেন। উপ-সহকারী কৃষি অফিসারদের সবসময় আতংক গ্রস্ত করে রাখেন ও চাকরি খেয়ে নেবেন বলে হুমকি দেন। তার সমস্ত অপকর্ম কর্মচারীরা ভয়ে মুখ বুজে সহ্য করেন।
আরশেদ আলী চৌধুরীর মত একজন কর্মকর্তা কৃষি বিভাগের এক মূর্তিমান আতংক বলে অনেকে মনে করেন। একজন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার উদ্বৃতি দিয়ে ওই কর্মকর্ত বলেন, মাদূর্গারমত দশহাত নিয়ে আবিভর্’ত হয়েছি। কেউ আমার বিরুদ্ধে কোন তথ্য দিলে তাকে উপজেলা ছাড়া করা হবে বলে দম্ভোক্তি করেন। তিনি অনেক সময় বলে থাকেন রাষ্ট্রপ্রতির ছেলে আমার বন্ধু। এছাড়াও অফিসের সকল কাজ কর্ম তার পছন্দের লোক হিসেবে খ্যাত মনিশংকর কে দিয়ে করিয়ে থাকেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দিয়ে কোন কাজ করা হয়না এবং তাদের কোন মতামত নেয়া হয়না। হরিণাকুন্ডু কৃষি অফিসে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাকে বাগে নিতে তিনি অনিয়ম করার পথ দেখিয়ে দেন। বলতে গেলে আরশেদ আলীর দাপটেই যেন অফিসের অন্যান্যরা চাকরী করেন বলে ভূক্তভূগিরা জানান। তিনি নিয়ম নীতির কোন তোয়াক্কা করেন না। অবৈধ অর্থের বিনিময়ে সমস্থ অনিয়মই তার কাছে নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলায় প্রথম চাকরীতে যোগদান করেন আরশেদ আলী। তখন তার বেতন ছিল অনেক কম। কিন্তু মাত্র ৪ বছরে তিনি ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। নামে বেনামে অঘাত টাকা জমিয়েছেন তিনি। ঢাকায় কিনেছেন ফ্লাট। চার বছরে তার লাইফ স্টাইল বদলে গেছে। এতো অপকর্ম করলেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নেই তদন্তের উদ্যোগ। তার সম্পদের খোঁজ নিলেই মাত্র চার বছরে ফুলে ফেঁপে ওঠার তথ্য ফাঁস হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এসব বিষয়ে জানতে উপজেলা কৃষি অফিসার আরশেদ আলীর কাছে একাধিকবার ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলার কৃষকসহ সচেতন নাগরিক সমাজ কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ওই দূণীতিবাজ কর্মকর্তার বদলীসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানিয়েছেন।