*নির্বাচনের পরপর অনলাইনে জামায়াতের সব ধরনের তথ্য সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে
*এরই মধ্যে দলের কার্যক্রম নিয়ে যে ওয়েবসাইটগুলো ছিলো তাও মুছে ফেলা হয়েছে
*রাজনৈতিক কার্যক্রম ও দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে আরো বেশ কয়েকটি সাইট থাকলেও এগুলোকেও কেন্দ্র থেকে বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে
নিউজ ডেস্ক:বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই নামে থাকবে না আর কোনো রাজনৈতিক দল! শিগগিরই আসতে পারে এমন ঘোষণা। দলের ভেতরে-বাইরে এ নিয়ে চলছে বড় গুঞ্জন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ফের সরকার গঠন করায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কোনো নতুন ষড়যন্ত্রে আর কিছু হারাতে চান না তারা। নির্বাচনের পর থেকে এ নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে ইসলামী দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সাথে চলছে বৈঠক। মেলানো হচ্ছে নানান রাজনৈতিক সমীকরণ। হঠাৎ করে ঘোষণা দিয়ে কিভাবে দলটি হারিয়ে যাবে। কতদিন পর্যন্ত তারা আড়ালে থাকবে। জামায়াতের পুরনো আদর্শের কর্মীরা অর্থাৎ বৃহৎ তৃণমূল শেষ পর্যন্ত নতুন নামে দলটির আত্মপ্রকাশ করলে নতুনদের গ্রহণ করবে তো! বিরতির সংখ্যাটা কতদিন হবে। একাধিক বৈঠকে বিষয়গুলো খোঁজা হচ্ছে। এ নিয়ে করা হচ্ছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
জামায়তের একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নির্বাচনের পরের সপ্তাহে জামায়াত সংবাদ সম্মেলন করে দল ছাড়ার ঘোষণা করার কথা থাকলেও দলের গঠনতন্ত্রে আমিরের পদত্যাগের বিষয়টি স্পষ্ট না থাকায় সংশোধনের সময় নিচ্ছে। তাছাড়া দলের ভেতরে বড় একটি অংশ শত ঝড়-তুফানের মাঝেও এ নামেই থাকতে চাচ্ছে। তবে নতুনদের বড় একটি অংশ দলের কলঙ্ক ডুবিয়ে নতুন নামে আসতেই অনড় রয়েছে। এ নিয়ে জামায়াতের কয়েকটি সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ শীর্ষ নেতাদের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি হওয়ার পর দলটি বড় ধরনের নেতৃত্ব শূন্য রয়েছে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশের পলিসি, ক্ষমতাসীনদের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং বিএনপি জোটে থাকার কারণে রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হচ্ছেন। এছাড়া এ দলের যারা ব্যবসা-বাণিজ্যর সাথে সম্পৃক্ত তারাও দীর্ঘ সময়ের আলোর মুখ দেখছেন না। দেশে কাদা ছিটানোর রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে জামায়াত। দীর্ঘ সময় দলীয় আদর্শ প্রচারণাও করতে পারছেন না। তরুণদের থেকেও দাবি উঠেছে প্রশ্নবিদ্ধ লোকদের বিদায় দিয়ে নতুনদের নিয়ে দল গঠন করতে। এছাড়া ইসলামী দল হওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন বলেও দলটির অভিযোগও রয়েছে, সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকার ফের ক্ষমতায় আসায় দেশে এখন রাজনীতির উত্তাপ মুহুর্ত পার হচ্ছে। সব দলের তোপের মুখে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপির লজ্জার হারের পরও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বিএনপিকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ থেকেও জামায়াতকে নিয়ে নানান ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে।
যদিও বিএনপির বিশ্বস্ত একটি সূত্রের মত, সম্প্রতি কারাগার থেকে খালেদা নির্দেশ দিয়েছেন কোনো চাপের মাঝেও জামায়াত ছাড়ার প্রলোভনে যাওয়া যাবে না এবং সংসদে গিয়ে শপথ গ্রহণ করে এই সরকারকে বৈধতা দেয়া যাবে না। এ দুটির ইঙ্গিতেও বিএনপিতে আস্থা রাখছেন না জামায়াত। তারা তাদের স্বীয় সিদ্ধান্তে হাঁটছেন। জামায়াত নামে কোনো দল না রাখার পক্ষে দলটির নীতিনির্ধারকদের আরও ভাষ্য, তাদের বর্তমানে আন্দোলনের কর্মী আছে কিন্তু রয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা। দীর্ঘ ৮-১০ বছর তৈরি হচ্ছে না নতুন কর্মী। দলের কলঙ্ক আসার পরে অনেকে পদ পেয়ে জামায়াত নামক কোনো কাদাও গায়ে লাগাতে চাচ্ছেন না। অন্যদিকে জামায়াতের সংস্কারবাদী নেতাদের ভাষ্য, এর আগে আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক মাস্টার প্ল্যানিং ষড়যন্ত্রে তারা তাদের শীর্ষ নেতাদের হারিয়েছেন। এখন নির্বাচনের পর ফের নতুন কৌশলে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছেন, কী আভাস সেটি না জানালেও ঘটনার মোকাবিলা করার রাজনৈতিক শক্তি নেই বলে মত দলটির।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, জামায়াতে ইসলামীকে জোটে রাখায় বহুদিন থেকে বিএনপি ভারতসহ আন্তর্জাতিক দেশগুলোর চাপে আছে। দেশের বামপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও বিএনপি থেকে সরে গেছে। আদর্শিক অনেক দলীয় নেতাকর্মীও জামায়াতকে জোটে রাখায় মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এছাড়াও ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, বিজেপি এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বিএনপিকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ভারতের আস্থা অর্জন করতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গ ছাড়তে হবে। যে দাবি দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও করে আসছে। এবার বিএনপি হেরে যাওয়ার পেছনে জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীকে এত সংখ্যক আসন দেয়ার কারণকেও পর্যবেক্ষণে নিয়ে আসছেন অনেকে। সবদিক বিবেচনা করে রাজনৈতিক আক্রমণ থেকে বাঁচতে জামায়াতও এ নামে রাজনীতি থেকে আপাতত সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার আগে আরও কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করছেন। দলটি কিছু সময় হারিয়ে গেলেও এরপর নতুনরূপে কলঙ্ক মুছে আসতে পারে তরুণ নেতৃত্বে।
দলের অসমর্থিত একটি সূত্রের মত, নতুনদের কেউ ক্ষমতায় আসলে তালিকায় রয়েছে রফিকুল ইসলাম খানের নাম। যিনি শিবিরের রাজনীতি থেকে দীর্ঘ সময় জামায়াতে পছন্দের লোকদের দিয়ে রাজশাহী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। পাবনা, সিরাজগঞ্জ, উল্লাপাড়ার বিভিন্ন মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করেন তিনি। ৯২-৯৬ সময়কালে কেন্দ্রীয় শিবিরের সেক্রেটারি ও পরে সভাপতি হন। ওই সময় নেতৃত্ব থাকাকালে তার পছন্দের দিয়ে সারাদেশে শিবিরে সেটআপ নিয়ে আসেন। তখন বাদ পড়ে কেন্দ্রীয় শিবিরে সম্ভাব্যময় বহু নেতা। এরপর ১৯৯৬-তে জামায়াতে যোগ দিলে খুব অল্প সময়ের মাঝেই ঢাকা মহানগর কমিটিতে স্থান পেয়ে যান। ধীরে ধীরে নগরের আমির এবং একই সাথে কেন্দ্রের নির্বাহী সদস্য ও মজলিশে সুরার সদস্যও হয়ে যান। ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে (উল্লাপাড়া) জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তখন আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. শফিকুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন। এরপর কিছুদিন নীরব থাকার পর ২০১২ সালে জামায়াতের প্রথম সারির শীর্ষ নেতারা জেলে চলে গেলে কোপাল খুলে যায় রফিকুল ইসলাম খানের। ২০১২ সালে শফিকুর রহমানের গ্রেপ্তারের পর জামায়াতের খানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্বও দেয়া হয়। পরবর্তীতে শফিকুর রহমান মুক্তি পেলেও থেকে যায় আধিপত্য। স্বীয় পদে যতটুকু ক্ষমতা তার চেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে আসছেন তিনি। দীর্ঘ ৭-৮ বছর চলছে তার এমন রাজত্ব। তবে তরুণরা তার নেতৃত্বে আস্থা বলেও মত দলের বড় একটি অংশের!
সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের এক নেতা বলেন, নির্বাচনের পর প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা দিয়ে জামায়াত নামক কোনো দল না থাকার ঘোষণা দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দলের সংবিধান ও গঠনতন্ত্রে কিছু জটিলতা থাকায় এগুলোকে সংশোধনে আনার চেষ্টা চলছে। আবার বড় একটি অংশ থেকে আপত্তিও আসছে ঝুঁকি থাকলেও জামায়াত নামক দলেই টিকে থাকতে। ওই নেতার দাবি, দল না থাকার ঘোষণা দিলেও আমিরের পদত্যাগের বিধান জামায়াতের গঠনতন্ত্রে নেই। ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭ নাম্বার ধারাগুলোতে স্পষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে আমিরের দায়িত্ব ও ক্ষমতা কতটুকু। এছাড়াও দীর্ঘ বছরের রাজনীতিতে নামে-বেনামে রয়েছে বহু সম্পদ! দল না থাকলে এগুলোর সংরক্ষণ নিয়েও দলে বড় প্রশ্ন রয়েছে। তাই শেষ সিদ্ধান্তে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে আরেকটি সূত্র জানায়, জামায়াত নামক দল না থাকার ইঙ্গিতের পরই অনলাইন থেকে জামায়াতের সব ধরনের ডকুমেন্ট সরিয়ে নেয়ার কাজ চলছে। এরই মধ্যে দলের কার্যক্রম নিয়ে লধসধধঃ-ব-রংষধসর.ড়ৎম নামের যে ওয়েবসাইট ছিলো তাও মুছে ফেলা হয়েছে! জামায়াতের রাজনৈতিক কার্যক্রম ও দাওয়াতি কার্যক্রম নিয়ে আরও বেশ কয়েকটি সাইট থাকলেও এগুলোকেও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তবে ফেসবুক ফেস সক্রিয় রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এটিও কিছুদিনের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হতে পারে। যদিও ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে কিছু পেজ বা সাইট গোপনে কেউ চালালে তার দায়িত্ব কেন্দ্র থেকে নেবে না এমন ঘোষণা শিগগিরই আসতে পারে। এ নিয়ে জামায়াতের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি আমার সংবাদকে বলেন, এটি জামায়াতের প্রচার বিভাগের বিষয়। মতিউর রহমান আকন্দের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন উনি আপনাদের গণমাধ্যমকে সহযোগিতা করতে পারেন।