নিউজ ডেস্ক:হঠাৎ করেই নতুন বছরের (২০১৯ সাল) শুরুতে ধান-চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। মান ভেদে ধানের দাম মনে বেড়েছে ১০০-১২০ টাকা। আর চালের দাম ৫০ কেজির বস্তায় বেড়েছে ১০০-৩০০ টাকা পযর্ন্ত। সে হিসেবে নতুন বছরে কেজিতে ধানের দাম বেড়েছে আড়াই থেকে ৩ টাকা। আর চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৫ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, চালের মিল মালিকরা কারসাজি করে চালের দাম বাড়ি দিচ্ছেন। তবে মিল মালিকদের একটি পক্ষের দাবি, চালের দাম স্বাভাবিক রয়েছে। সরকারের বেঁধে দেয়া দামের মধ্যেই চাল বিক্রি হচ্ছে। আর ব্যবসায়ীদের একপক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের পর চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। ৭-১০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমে স্বাভাবিক হয়ে আসবে। কারণ, বতর্মানে ধান বা চালের কোনো ঘাটতি নেই।
গতকাল সোমবার বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় দিন বা বুধবার থেকে চালের দাম বাড়া শুরু হয়। বতর্মানে খুচরা পর্যায়ে ভালো মানের মিনিকেট চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৮ টাকা, যা নিবার্চনের আগে ছিল ৫০-৫২ টাকা। সে হিসাবে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪-৬ টাকা। তবে সব থেকে বেশি বেড়েছে মাঝারি মানের চালের দাম। বতর্মানে মাঝারি মানের চাল বিআর-২৮ ও লতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৮ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ৩৮- ৪২ টাকা। অথার্ৎ নতুন বছরে মাঝারি মানের চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৬ টাকা। নিবার্চনের আগে ৩৪-৩৬ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মোটা চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৩৮-৪০ টাকা। এই হিসাবে মোটা চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪ টাকা।
চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ঝিনাইদহের ডাকবাংলার একটি চাতালে কাজ করা মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরেই ধানের দাম বাড়তি। সব ধরনের ধানের দাম মণে ১০০-১২০ টাকা বেড়েছে। ধানের দাম বাড়ার এই প্রভাব পড়েছে চালের দামের ওপর। আরেক রাইস মিল ব্যবসায়ী মো. জানে আলম ভূঁইয়া বলেন, ৩-৪ দিন ধরে চালের দাম বাড়তি। প্রথমে রশিদের চালের দাম বেড়েছে। এরপর একে একে সব কোম্পানি চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ব্যবসায়ী বলেন, নিবার্চনের আগে ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট চাল বিক্রি করেছি ২৬০০-২৬৫০ টাকা। এখন সেই চাল ২৭৫০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। ১৯৫০ টাকা বিক্রি করা বিআর-২৮ চালের বস্তা এখন বিক্রি করতে হচ্ছে ২২৫০ টাকা। এভাবে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে।
ব্যবসায়ী মো. শিপলু বলেন, সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। ২-৩ দিনের মধ্যে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়ে গেছে। হঠাৎ কি কারণে যে চালের দাম এমন বাড়ল, কিছুই বুঝতে পারছি না। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো রাইসমিল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, এখন চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। বন্যা, খরা, বৃষ্টি কোনো কিছুই হয়নি। সরবরাহও স্বাভাবিক রয়েছে। তাহলে কেন চালের দাম বাড়বে। চালের দাম বাড়ার যদি কোনো কারণ থাকে, তাহলো সিন্ডিকেট। মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, চালের দাম বাড়ানোর এই সিন্ডিকেটের মূল হোতা রশিদ (রশিদ এগ্রো ফুট প্রডাক্টস লিমিটেডের মালিক মো. আবদুর রশিদ)। কোনো কারণ ছাড়াই নিবার্চনের পর রশিদের চালের দাম বস্তায় বাড়ানো হয়েছে ৩০০ টাকা। দেশে কি এমন ঘটল যে, হঠাৎ করে চালের দাম এমন বাড়িয়ে দিতে হবে। চালের দাম স্বাভাবিক করতে হলে মিল মালিকদের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। সেই সঙ্গে বাজারে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। চালের দাম বাড়ার জন্য একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ অটো রাইসমিল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজ।
পাবনার ঈশ্বরদীর রোজ এগ্রো প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক আবদুল আজিজ বলেন, নিবার্চনের কারণে সরবরাহে কিছু সমস্যা হয়েছিল, যে কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে সাবির্কভাবে দেশে চালের কোনো সংকট নেই। আগামী সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে চালের দাম কমে যাবে। ইতোমধ্যে তারা হাসকি চালের দাম বস্তায় প্রায় ২০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছেন। ঢাকার বাজারে দাম কমতে হয়ত ২-১ দিন সময় লাগবে। সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল আজিজের এই মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো রাইসমিল ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, আবদুল আজিজ কোনো বড় ব্যবসায়ী না। চালের ব্যবসা সম্পর্কে তার কোনো ধারণা আছে বলে মনে হচ্ছে না। বাস্তবতা হলো, সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে চালের দাম কমবে না। বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও রশিদ এগ্রো ফুট প্রডাক্টস লিমিটেডের মালিক মো. আবদুর রশিদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং ওনার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কেএম লায়েক আলী বলেন, মোট চালের দাম সরকারের বেঁধে দেয়া দামের মধ্যেই রয়েছে। কোনো জেলায়ই মোটা চালের কেজি ৩৬ টাকা পার হয়নি। ঢাকায় কেন ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে, এটা সরকারের খোঁজ নেয়া উচিত। তিনি বলেন, আগের থেকে এখন হয় তো চালের দাম একটু বাড়ছে। এটা স্বাভাবিক। চালের দাম কমে যাওয়াটাই অস্বাভাবিক ছিল। এখন কিছুটা দাম বেড়ে, সেটা সমন্বয় হয়েছে। আর মিনিকেট চালের দাম বাড়া এটা কোনো বিষয় না। এ নিয়ে সরকারেরও কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ, মিনিকেট চাল বছরে একবার হয়। এখন মিনিকেট চাল শেষ হয়ে আসছে। সুতরাং, ১-২ টাকা করে বাড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া এই চাল খাওয়ার মানুষ আলাদা। সাধারণ মানুষ এই চাল খায় না।