নিউজ ডেস্ক:
স্বাস্থ্য বিমা করমুক্ত হচ্ছে। একই সঙ্গে ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলো এখন থেকে আর কোনো ধরনের বিমা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাগুলোর বিমা ব্যবস্থা পরিচালনা করার কোনো অধিকার নেই। তারা যদি এমন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে তা বন্ধ করা হবে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ) এর একটি প্রতিনিধিদল দেখা করে দেশের বিমা খাতে বিদ্যমান বিভিন্ন অবস্থা তুলে ধরে এবং আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিমা খাতে বিদ্যমান পরিস্থিতি সমাধানে বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরে। এ সময় প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে ক্ষুদ্রঋণ দান সংস্থা কর্তৃক বিভিন্ন নামে বিমা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে বলে অভিযোগ করা হয়।
বিআইএর ভাইস প্রেসিডেন্ট রুবিনা হামিদের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে মোজাফফর হোসেন পল্টু, নাসির উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আব্দুশ শহীদ এমপি, আফতাবুল ইসলামসহ সংগঠনটির অন্যান্য পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিআইএর পক্ষ থেকে আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৭ দফা সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়।
এসব সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- জীবন বিমা পলিসির ডিপোজিট হোল্ডারদের মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহার, বর্তমানে সাধারণ বিমা ও জীবন বিমা কোম্পানির জন্য করপোরেট ট্যাক্স কমানো। বিশেষ করে লিস্টেট বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ এবং নন-লিস্টেড বিমা কোম্পানির ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ করার সুপারিশ করে।
এ ছাড়াও বৈঠকে বিমা এজেন্ট কমিশনের বিপরীতে ১৫ শতাংশ উৎসে কর প্রত্যাহার, বিমা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে আইনের সংশোধন করার দাবি জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়। আর সে কারণে ওই সব জটিলতা মিমাংসা করতে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানিগুলো আইনের আশ্রয় নিলে তা বছরের পর বছর পড়ে থাকে ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিধানটি সহজ করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে নবায়ন ফি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য বিমা খাত করমুক্ত করা হবে। করপোরেট ট্যাক্স অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সমপর্যায়ে আনা, বড় বড় কোম্পানিগুলোকে বাধ্যতামূলক বিমার আওতায় আনার বিষয়ে বিবেচনা করা হবে।
এর আগে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল কাসেম খানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় মিলিত হন। এ সময় তারা দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করার জন্য বেশকিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
বৈঠকে বলা হয়, বিনিয়োগের স্থবিরতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আর বেসরকারি বিনিয়োগ ২২ শতাংশ থেকে ২৯ শতাংশে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বর্তমান বেসরকারি বিনিয়োগ অবস্থান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সচল ও টেকসই করতে হলে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা মূলত সূচকে এ অবস্থান উন্নয়ন প্রয়োজন। ব্যবসায় প্রতিযোগিতাপূর্ণ অবস্থান উন্নয়নের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণ, শিল্পায়ন সহজীকরণে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, বর্তমান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নে গত ৮ বছর বড় ধরনের ভূমিকা নিয়েছে বিশেষত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে। ফলত অবকাঠামো খাতে ২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৬.৩২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে গত ৫ বছর। তারপরেও আমরা মনে করি, ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন করার জন্য অবকাঠামো খাত উন্নয়নে বিনিয়োগ আরো বৃদ্ধি করা উচিত যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। কেননা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়ন পূর্বশর্ত। বাংলাদেশ তার ব্যবসার পরিপূর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারছে না ব্যবসা পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও অদক্ষ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। আধুনিক অবকাঠামোর অভাব, ধীরগতির প্রজেক্ট বাস্তবায়ন, ভূমিবিরোধ ও ভূমি আইনের কারণে আমরা দুঅঙ্কের প্রবৃদ্ধিতে পৌঁছাতে পারছি না।
বর্তমানে অবকাঠামোখাতে আমাদের বিনিয়োগ জিডিপির ২.৮ শতাংশ, যেখানে ভিয়েতনামের বিনিয়োগ ১০ শতাংশ, চীনের ৯ শতাংশ, ভারতের ৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ৫ শতাংশ ও ফিলিপাইনের ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আপনি আগামী অর্থবছর ২০১৭-১৮ এর বাজেট ঘোষণা করবেন- যা জাতীয় শিল্পনীতি ২০১৬ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী শিল্পায়ন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ২৯ শতাংশ থেকে ৩৩.৫ শতাংশে এ উন্নীত করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে সম্পূর্ণ বাজেট প্রস্তাব রাজস্ব বোর্ডে প্রদান করেছি। আর এখন ব্যবসা-বাণিজ্য সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে আমরা কিছু মৌলিক ক্ষেত্রে আপনার মনযোগ আকর্ষণ করছি। আগামী অর্থবছরের বাজেট আরো বিনিয়োগবান্ধব করার জন্য আমরা মনে করি শিল্প খাতে কর্মসংস্থান ১৮ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে উন্নীতকরণ, নতুন ১২.৯ মিলিয়ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও এসএমই খাতের উন্নয়ন, রপ্তানিমুখী বাজার সম্প্রসারণে রপ্তানি বহুমুখীকরণ, বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো, পুরাতন অবকাঠামো পুনঃর্মিাণ করা, করের আওতা বাড়ানো ও কর-অবকাঠামো ব্যবস্থা সহজীকরণ, ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি প্রয়োজন।