নিউজ ডেস্ক:
সিরিয়ার গোলযোগপূর্ণ বাগোউজ এর কাছাকাছি এলাকা। শুষ্ক রুক্ষ অঞ্চলটির চারদিকে শুধু পানির জন্যে হাহাকার। মানুষ ‘পানি পানি!’ বলে চিৎকার করছে। আর ট্রাকে করে নিয়ে আসা বেশকিছু পানির বোতল তাই নিমিষেই খালি হয়ে যায়।
ক্ষুধার্ত তৃষ্ণার্ত শরণার্থীরা খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছে। অন্তত ৩শ নারী ও শিশুকে মরুভূমির ঝোপঝাড়ের পাশেই ঘুমাতে হচ্ছে। এদের অধিকাংশই ইরাকী। সর্বস্ব হারানো অসহায় মানুষগুলো সিয়িয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বাগোউজ থেকে পালিয়ে এসেছে। এটি ইসলামিক স্টেট (আইএস) এর নিয়ন্ত্রণাধীন সর্বশেষ এলাকা।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
অল্প কয়েকজন ভাগ্যবান তাঁবু পেয়েছে। তবে অধিকাংশই কম্বলের নিচে রাত কাটিয়েছে। তারা কয়েকটি খাবারের প্যাকেট ও পানির বোতল পেয়েছে।
মার্কিন সমর্থিত সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) শরণার্থীদের এই কম্বল, তাঁবু ও খাবার সরবরাহ করেছে।
ওই স্থানে কোন মানবিক সংগঠন বা সংস্থা পৌঁছেনি।
বাগদাদ থেকে আগত ফাতিমা বলেন, ‘প্রচ- ঠা-ায় বাচ্চারা রাতভর কেঁদেছে।’
তিনি বাগোউজ থেকে প্রাণ বাঁচাতে চার শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। শিশুগুলোর বয়স ১৫ বছরের কম।
তিনি আরো বলেন, ‘বাগোউজে ব্যাপক বোমা বর্ষণ হচ্ছে। সেখানে বাড়িতে থাকার চেয়ে এখানে খোলা আকাশের নিচে ঘুমানোও নিরাপদ।’
বাস্তুচ্যুতরা এসডিএফ সদস্যদের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। এরপর তাদেরকে ট্রাকে করে উত্তরে আল-হোল শারণার্থী শিবিরে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে পৌঁছতে ছয় ঘন্টা লাগবে।
ফাতিমা বলেন, ‘অন্তত একটি ক্যাম্পে গেলে আমরা তাঁবু পাব।’
বুধবার বিকেলে সূর্য মাঝ আকাশে পৌঁছালে ত্রাণ বিতরণ স্থানটি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। খালি পায়ে শিশুরা মাটিতে বসে। তাদের সারা মুখে বালুতে মাখামাখি। একটি শিশুকে প্লাস্টিকের চামচ চিবুতে দেখা গেছে।
শিশুদের চারপাশে খালি বোতল ও নোংরা কাপড় পড়ে আছে।
মাথায় স্কার্ফ বাঁধা এক তরুণী এসডিএফ এর ট্রাক থেকে খাবার নিতে গেলে তার বয়সী একটি ছেলে দ্রুত চাল ও কাঁচা মরিচের কন্টেইনার প্রায় ছিনিয়ে নিয়ে নেয়।
ছেলেটি গোগ্রাসে খাবার খেতে থাকলে মেয়েটি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করে ‘আমাকে কিছু খাবার দেবে?’
ছেলেটি তাকে তাড়িয়ে দেয়। মেয়েটি নিরবে কান্না শুরু করে।
বাগৌউজে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিরাপদ পানি, খাবার ও চিকিৎসার তীব্র সংকট চলছে।
এসডিএফ ওই অঞ্চলকে আইএসমুক্ত করার জন্য চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেছে। উভয়পক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে।
যারা উভয়পক্ষের ওই ভয়াবহ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসতে পেরেছে তারা জানান, জিহাদিরা সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা স্থানীয়দের ওই এলাকা ত্যাগে বাধা দিচ্ছে।
৩২ বছর বয়সী নারী হুদা বলেন, তার প্রতিবেশীদের বাড়ি থেকে বেরুতে দেখে তিনি পালিয়ে আসার সাহস পান।
শিশুকে নিয়ে পালিয়ে আসা এই নারী বলেন, ‘আমরা কোন দ্বিধা ছাড়াই ছুটতে শুরু করি। যদিও ¯œাইপাররা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ছিল এবং ব্যাপক বোমা বর্ষণ হচ্ছিল।’
সাহসী এই তরুণী বলেন, ‘আমরা কাপড় ও বাচ্চাদের সাথে নিয়ে তিন থেকে চার ঘন্টা একটানা হেঁটেছি। আমরা অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত ছিলাম। কিন্তু আমার কাছে পানি ছিল না।’
তিনি সাথে করে কম্বল নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু ভারী হওয়ায় বাগৌজের বাইরের একটি রাস্তায় সেটি ফেলে এসেছেন।