নিউজ ডেস্ক:
সিরিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের জন্যে রাশিয়াকে প্রস্তুত থাকার কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাজধানী দামেস্কের কাছে কথিত রাসায়নিক হামলার জবাবে মি. ট্রাম্প এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র যে ধরনের আক্রমণের পরিকল্পনা করছে তাতে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সহযোগিতা নেওয়া হবে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। তাতে যেসব সমরাস্ত্র ব্যবহার করা হবে সেগুলো যুদ্ধজাহাজ, জঙ্গিবিমান ও ডুবোজাহাজ থেকে নিক্ষেপ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেসব যুদ্ধবিমান থেকে অস্ত্র নিক্ষেপ করা হবে সেগুলো সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বাইরে অবস্থান করবে এবং সেখান থেকেই হামলা চালাবে। অথবা ড্রোন দিয়ে আক্রমণ করা হবে যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে।
রুশ কর্মকর্তারা সতর্ক করে দিয়েছেন, এসব ক্ষেপণাস্ত্রকে গুলি করে মাটিতে নামিয়ে আনার পাশাপাশি যেসব জায়গা থেকে এসব নিক্ষেপ করা হবে সেগুলোকেও তারা ধ্বংস করে দেবে।
কিন্তু এই যুদ্ধে যেসব শক্তিধর দেশ অংশ নেবে বলে এখনও পর্যন্ত ধারণা করা হচ্ছে তাদের কাছে কি ধরনের অস্ত্র আছে? রাশিয়া এবং সিরিয়া এর জবাব দিতে পারে কিভাবে?
যুক্তরাষ্ট্র: প্রতিরক্ষা বাজেট- ৬০,০০০ কোটি ডলার
যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্র-বিধ্বংসী ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ডোনাল্ড কুক ইতোমধ্যেই ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকে সিরিয়ার রাসায়নিক স্থাপনাগুলোতে ক্রুজ মিসাইল দিয়ে আঘাত করা হবে।
এর ফলে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঝুঁকি কমে আসবে।
এক বছর আগে, যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব ভূমধ্যসাগরে মার্কিন নৌবাহিনির দুটো ডেস্ট্রয়ার থেকে ৫৯টি টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিলো। সেটা চালানো হয়েছিলো সিরিয়ার হম্স প্রদেশের শায়রাত বিমানঘাঁটিতে।
ওয়াশিংটন বলেছে, এই বিমানঘাঁটি রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ করে রাখার জন্যে ব্যবহার করা হচ্ছিলো। যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক আক্রমণের মাত্র ৭২ ঘণ্টা আগে এসব রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিলো বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত একটি শহরের উপরে।
এই টমাহক ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু দিক আছে- এটি খুব নিচ দিয়ে উড়ে যায় এবং এটিকে শনাক্ত করা কঠিন। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি থেকে অল্প তাপ নির্গত হয় যার ফলে ইনফ্রারেড ডিটেকশনের মাধ্যমে এটি ধরা সম্ভব হয় না।
যুদ্ধবিমান বহনকারী বেশ কিছু যুদ্ধজাহাজও পারস্য উপসাগরে মোতায়েন করছে মার্কিন নৌবাহিনি। তবে সেগুলোর এখনই সিরিয়ার আকাশসীমার ভেতরে ঢুকে হামলা চালানোর সম্ভাবনা নেই।
মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটি হচ্ছে কাতারে। সেখানে আছে এফ-১৬ জঙ্গিবিমান, যা ওয়ার্টহগ নামেও পরিচিত। তুলনামূলকভাবে এগুলো খুব দ্রুত পরিচালনা করা সম্ভব।
এফ- ১৬ খুব নিখুঁতভাবে হামলা চালাতে পারে বলে এর সুখ্যাতি আছে। সারা বিশ্বে যতো সামরিক বিমান আছে তার মধ্যে এটিকে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে ব্যবহার করা যায়। এর পাল্লা প্রায় ২,০০০ মাইল। এর ফলে অন্য যেকোন যুদ্ধবিমানের চেয়ে এটি বেশি সময় ধরে রণাঙ্গনে অবস্থান করতে পারে।
আমেরিকার এছাড়াও আছে সাবসনিক বি-৫২ বোমারু বিমান। এই যুদ্ধবিমানটিকে ওয়াশিংটন এই অঞ্চলে এর আগেও ব্যবহার করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে উত্তর সিরিয়ার সাথে তুরস্কের সীমান্তে কুর্দীদের ছোট্ট একটি শহর কোবানেকে তাদের বিমানঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেখানে সামরিক ট্রান্সপোর্ট বিমান সি ১৩০ এবং সি ১৭ পরিচালনা করা হয়েছে, যাতে করে সৈন্য এবং যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
রাশিয়া: প্রতিরক্ষা বাজেট -৬,৯০০ কোটি ডলার
রাশিয়া যে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোন আক্রমণ প্রতিহত করার হুমকি দিয়েছে তাতে প্রশ্ন উঠেছে যে রাশিয়া কি তাদের উন্নত এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করবে? এটি এখনও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি।
রাশিয়ার একটি জেট বিমান ভূপাতিত হওয়ার পর তারা বহুস্তরের এই বিমানবিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত সেটি কাজ করেছে নিরোধক হিসেবে কিন্তু কখনো ব্যবহৃত হয়নি।
এটি তিন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করতে পারে। করতে পারে খুব দ্রুত গতিতে ও নিখুঁতভাবে। ২৫০ মাইলের মধ্যে বিমান কিম্বা ক্ষেপণাস্ত্রকেও লক্ষ্য করতে পারে। এর সাহায্যে সিরিয়ার বেশিরভাগ এলাকাকেই হামলার হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে কভারেজ দেওয়া সম্ভব।
রাশিয়া বলছে, এই ব্যবস্থার সাহায্যে এর সাহায্যে তারা যেকোন যুদ্ধবিমানকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে এস ৪০০ প্রতিরোধী ব্যবস্থা থেকে কিভাবে কোন বস্তুকে চিহ্নিত করে, সম্ভাব্য ঝুঁকি যাচাই এর পর সেটিকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। এটি একসাথে ১২টি ক্ষেপণাস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একসাথে হামলা চালাতে পারে ৬টি বস্তুকে লক্ষ্য করেও।
কিংস কলেজ লন্ডনে ওয়ার স্টাডিজ বিভাগের ড. মার্টিন এস নাভিয়াস বলেছেন, এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার কারণে যুদ্ধের কৌশল জটিল হয়ে পড়েছে। সাধারণত বিমান হামলা চালিয়ে কোন একটি দেশের ভূমি থেকে আকাশে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের ক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া হয় কিন্তু সিরিয়ার ভেতরে রাশিয়ার এই প্রতিরক্ষা ক্ষমতা বাধা হয়ে উঠতে পারে।
এর পাল্লা সিরিয়ার আকাশসীমার বাইরেও বিস্তৃত। এর অর্থ হলো সিরিয়াকে লক্ষ্য করে কিছু নিক্ষেপ করা হলে সেটি সিরিয়ার ভেতরে আসার আগেই ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। অনেক বিশ্লেষক এস-৪০০ প্রতিরোধী ব্যবস্থার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
সিরিয়াতে রাশিয়ার আরো কয়েক ধরনের যুদ্ধবিমান মোতায়েন রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে সুখয় -২৪ বোমারু বিমান, সুখয়-২৫ যুদ্ধবিমান, বহু ভূমিকা পালন করতে পারে এরকম জঙ্গি বিমান, পরিবহন বিমান, গোয়েন্দা বিমান এবং হেলিকপ্টার গানশিপ।
এসবের অনেকগুলোই আছে হেমেইমিম বিমানঘাঁটিতে। বিদ্রোহীদের উপর বিমান হামলার জন্যে এটিই রাশিয়ার প্রধান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাশিয়ার সামরিক বাহিনী শায়রাত ঘাঁটিও ব্যবহার করছে বলে খবরে বলা হচ্ছে। সেখান থেকে মিগ ২৪ এবং মিগ ৩৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টার পরিচালনা করা হচ্ছে।
ক্রেমলিন বলেছে, ভূমধ্যসাগরে রস্তভ-অন-ডন ডুবোজাহাজ থেকে তারা সিরিয়ায় বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে এর আগে কালিবর ক্রুজ মিসাইল নিক্ষেপ করেছে।
কাসপিয়ান সাগরের যুদ্ধজাহাজ থেকেও তারা রকেট ছুঁড়েছে যা কিনা সিরিয়াতে আই এসের উপর আঘাত হেনেছে বলে রাশিয়া দাবি করেছে।
রাশিয়া সম্প্রতি সিরিয়ার বন্দর শহর তারতুস থেকে তাদের রণতরী প্রত্যাহার করে নিয়েছে বলে বিভিন্ন খবরে জানা গেছে।
ব্রিটেন: প্রতিরক্ষা বাজেট – ৫,০০০ কোটি ডলার
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, সিরিয়ার যুদ্ধে সামরিক বিমান মোতায়েন করতে ব্রিটেন প্রস্তুত।
এসবের মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধবিমান যা সাইপ্রাসে রাফ এক্রোতিরি ঘাঁটিতে অবস্থান করছে। এবং যেকোন সময় এসব বিমানকে যুদ্ধের জন্যে কাজে লাগানো যেতে পারে।
ওই ঘাটিতে আছে ব্রিটেনের আটটি সুপারসনিক টর্নেডো যুদ্ধবিমান।