মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তে মাঠে দুদক : তালিকায় চার শতাধিক নাম
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ঘটনায় সজা দৃষ্টি রাখছে জাতিসংঘ। অভিযান পরিচালনায় কনভেনশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা এবং মানবাধিকার সুরক্ষার জন্যও সরকারকে জোর তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারান্তরীণের ঘটনায় আগের উদ্বেগ আবারও তুলে ধরেছে জাতিসংঘ। শুক্রবার সদর দপ্তরের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে এ নিয়ে জাতিসংঘের অবস্থান তুলে ধরেন মহাসচিবের ডেপুটি মুখপাত্র ফারহান হক। প্রশ্নোত্তরপর্বের সূচনাতে বাংলাদেশি সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আগের দিনের (বৃহস্পতিবার) ব্রিফ্রিংয়ে বাংলাদেশের বিষয়ে করা প্রশ্নের আপডেট জানানোর কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির অভিযোগ তুলে প্রশ্ন কর্তা বলেন, বাংলাদেশে চলমান বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সম্পর্কে বৃহস্পতিবারের ব্রিফ্রিংয়ে আমি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। বাংলাদেশে চলমান অভিযানে মাদক দমনের নামে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে ১৬ দিনে ১২৫ জন লোক প্রাণ হারিয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে ছিল গতকাল আমার প্রথম প্রশ্ন আর মুখপাত্র বিষয়টি নিয়ে শনিবার আপডেট জানাবেন বলে উল্লেখ করেছিলেন। আর দ্বিতীয় যে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছিল তা হলো- প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে অমানবিক অবস্থায় আটক রয়েছেন। যেখানে আটকে রাখা হয়েছে সেখানে প্রায়ই বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয়, তাকে যে খাবারটুকুও দেয়া হয় তা অত্যন্ত নিম্নমানের। যদিও তিনি বিতর্কিত এই মামলাটিতে জামিন পেয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার তাকে মুক্তি দেয়নি। বরং আরো ৩টি মামলা দিয়ে আটকে রেখেছে। এই দুটি বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যাপারে জাতিসংঘ আগের অবস্থানে রয়েছে- এমন ইঙ্গিত করে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, আপনি দ্বিতীয় যে প্রশ্নটি করেছেন সে বিষয়টিতে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। এ (মামলার) প্রক্রিয়াটি নিয়ে অতীতে যে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি তার বাইরে নতুন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। বাংলাদেশে মাদক দমনে সম্প্রতি যে অভিযান চলছে সে দিকে জাতিসংঘ সজাগ দৃষ্টি রেখেছে উল্লেখ করে ফারহান বলেন, বাংলাদেশে চলমান মাদক অভিযানের বিষয়ে সজাগ রয়েছে জাতিসংঘের ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম। অভিযানে মানবাধিকার যেন লঙ্ঘন না হয় সে আহ্বান জানিয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান বলেন, ইউএন অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি)’র আওতাভুক্ত সব সদস্যদেশগুলোর উচিত মাদক দমন করার ক্ষেত্রে তাদের প্রতিশ্রুতির দিকে খেয়াল রাখা, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা।
এদিকে, বৈধ কোনো ব্যবসা-বাণিজ্য নেই কিন্তু কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক। তারা ব্যবসা করেন গোপনে। কারখানা পরিচালনা, পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, ঠিকাদারি, আমদানি-রফতানি বাণিজ্য এমন কি মুদি দোকান- কোনো কিছুই নেই তাদের। তবুও তাদের বাড়ি, গাড়ি, জমি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে জমানো টাকার অভাব নেই। এমন সব লোকের সম্পদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, এরাই মাদক ব্যবসায়ী। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, দুদক সারাদেশের চার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে। তাদের সম্পদের হিসাব করা হবে কড়ায়-গ-ায়। বৈধ ব্যবসা-বাণিজ্য না থাকার পরও জৌলুসপূর্ণ জীবন-যাপন, বিপুল সম্পদ কোথা থেকে এলো- এর জবাব চাওয়া হবে। সম্পদের উৎস সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ চাওয়া হবে। অনুসন্ধানে তাদের সম্পদ অবৈধ বলে প্রমাণ পাওয়া গেলে তা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হবে। দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সমকালকে বলেন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদক- এই তিন সমস্যা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। যারা সন্ত্রাস করছে, মাদক ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। সমাজের এই ব্যাধি দূর করতে কমিশন নিরন্তর যুদ্ধ করে যাবে। তিনি আরও বলেন, মাদক দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করছে। এই অপরাধ চলতে পারে না। মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারিদের সমূলে উৎপাটন করা জরুরি। আগামী দিনে তাই করা হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে। পুলিশ-র্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এরই মধ্যে শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি মারা গেছে। দুদক মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছিল গত বছরের জুনে। এবার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ায় দুদকের অনুসন্ধানও জোরদার করা হলো। দুদক সচিব ড. মো. শামসুল আরেফিন বলেন, মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদের ওপর দুদকের নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। যাদের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদ পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক আইন অনুযায়ী দুর্নীতি, প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে যে কোনো ব্যক্তির আবাসিক ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আস্তানা তল্লাশি করতে পারেন কমিশনের কর্মকর্তারা। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে অবৈধ যে কোনো বন্তু সম্পদ জব্দ করতে পারেন তারা। আদালতের অনুমতি নিয়ে রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তও করতে পারেন অবৈধ সম্পদ। অনুসন্ধানকালে গ্রেফতার করতে পারেন অভিযুক্ত ব্যক্তিকে। দুদক সূত্র জানায়, এসব ক্ষমতা হাতে নিয়েই মাদক ব্যবসায়ীদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছেন কমিশনের শতাধিক কর্মকর্তা। চার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর জন্য খোলা হয়েছে শতাধিক ফাইল। একেকটি ফাইলে ২০-৫০ জন মাদক ব্যবসায়ীর নাম রয়েছে। ফাইল অনুযায়ী ওইসব অভিযোগ অনুসন্ধানে ঢাকায় ও দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়গুলোতে বিশেষ টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ বিভাগের চার শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীর নামের তালিকা রয়েছে কমিশনের হাতে। মাদক ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।