দর্শনা-চুয়াডাঙ্গা সড়কের পৃথক স্থানে রাতভর ছিনতাইকারীদের তা-ব
নিউজ ডেস্ক:দর্শনায় একই রাতে পৃথক তিনটি স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইকারীরা পথচারীদের গতিরোধ করে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নগদ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল ফোনসহ বিভিন্ন মালামাল ছিনিয়ে নিয়েছে। সেই সঙ্গে ছিনতাইকারীদের ধারালো অস্ত্রের কোপে হাতের একটি আঙুল হারিয়েছেন আবুল বাশার আজাদ নামের অবসরপ্রাপ্ত এক সেনা সার্জেন্ট। এ ছিনতাই ঘটনায় দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় সন্দেহজনকভাবে তুহিন ওরফে তনু নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে দর্শনা-দামুড়হুদা সড়কের রেলগেট-ফায়ার সার্ভিস অফিসের মাঝামাঝি স্থানে মুখোশ পরা একদল ছিনতাইকারী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একটি ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যানের গতিরোধ করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে ভ্যানে থাকা দামুড়হুদার হউলী ইউনিয়নের জয়রামপুর মাঠপাড়ার সিরাজের ছেলে আকাশ (২৫), হাজি আব্দুল মান্নানের ছেলে নূরুল ইসলাম (২৮) ও তাইজেল হোসেনের ছেলে মজনুরকে (২৭) জিম্মি করে। পরে তাঁদের কাছে থাকা নগদ ৩৩ শ টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়া ভ্যানচালক নূর ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাতিজা মজনু একজন টাইলস মিস্ত্রি। সে সীমান্ত ট্রেনযোগে কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে দর্শনা হল্ট স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় পথের মধ্যে দর্শনা ফায়ার সার্ভিস-রেলগেট নামক স্থানের মাঝামাঝি পৌঁছালে মুখোশ পরা তিনজন ছিনতাইকারী ভ্যানের গতিরোধ করে। এরপর ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে আমাদেরকে জিম্মি করে আমাদের কাছে থাকা নগদ ৩৩ শ টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে সেখানে দ্রুত দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ পৌঁছায়।’
এ ঘটনার পর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে দর্শনা কেরুজ জেনারেল অফিসের সামনে একদল ছিনতাইকারী দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এক ভ্যানযাত্রীর পথ রোধ করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা ভ্যানযাত্রী দামুড়হুদার হাউলী ইউনিয়নের দুধপাতিলা গ্রামের গোরস্থানপাড়ার আকবার মিস্ত্রির ছেলে আব্দুল্লাহর কাছ হতে নগদ ৩ হাজার টাকা, একটি সোনার আংটি, দুটি মোবাইল ফোন, একটি হাতঘড়ি ও সাড়ে ৪ কেজি ইলিশ মাছ ছিনিয়ে নেয়।
এ বিষয়ে আব্দুল্লাহ জানান, ‘ঢাকা থেকে যাত্রীবাহী একটি পরিবহনে দর্শনায় পৌছাই। এরপর গ্রামের কাউছার নামের এক ভ্যানচালকের ব্যাটারিচালিত ভ্যানযোগে বাড়ি ফিরছিলাম। এ সময় দর্শনা কেরুজ চিনিকলের জেনারেল অফিসের অদূরে কেরুজ ক্লাব ক্যান্টিনের নিকট পৌঁছালে তিনজন মুখোশধারী ছিনতাইকারী দেশীয় অস্ত্রে-সজ্জিত হয়ে পাখিভ্যানের গতিরোধ করে। এরপর ছিনতাইকারীরা দেশীয় অস্ত্রের মুখে আমাদের জিম্মি করে ছিনতাই করে।’
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়েন কেরুজ আনোয়ারপুরের মৃত পিয়ার আলীর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট আবুল বাশার আজাদ (৫২)। ছিনতাইকরীরা তাঁকে পেছন থেকে আক্রমণ করে। এ সময় ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আবুল বাশার আজাদের ওপর হামলা চালালে তাঁর ডান হাতের বৃদ্ধ আঙুলের ওপরের অংশ কাটা যায় এবং তিনি মুখের বাঁ দিকে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
আবুল বাশার আজাদ বলেন, ‘আমি বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা থেকে রয়েল এক্সপ্রেস পরিবহনযোগে রাত দুইটার দিকে দর্শনায় পৌঁছাই। এরপর ভ্যান না পেয়ে পায়ে হেঁটে নিজ বাড়ি আনোয়ারপুরে ফিরছিলাম। ফেরার সময় দর্শনা কেরুজ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে পৌঁছালে ছিনতাইকারীরা আমাকে পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে। এ সময় অস্ত্রের আঘাতে আমার ডান হাতের বুড়ো আঙ্গুল কেটে যায়।’ এ ঘটনায় সাবেক সেনা সার্জেন্ট আবুল বাশার আজাদ বাদী হয়ে দামুড়হুদা মডেল থানায় মামলা করেছেন।
এ বিষয়ে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহবুবুর রহমান বলেন, ছিনতাই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দর্শনা আনন্দবাজার পাড়ার বিল্লাল হোসেনের ছেলে তুহিন ওরফে তনুকে (২৬) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাসের নেতৃত্বে এসআই জাকির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে গতকাল বিকেলে দর্শনা আনন্দবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ওসি সুকুমার বিশ্বাস জানান, ছিনতাই ঘটনায় ছিনতাইকারীদের কবলে পড়া দর্শনা আনোয়ারপুরের সাবেক সেনা সার্জেন্ট আবুল বাশার আজাদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন। এ ছিনতাইয়ের ঘটনায় তুহিন ওরফে তনু নামের এক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।