নিউজ ডেস্ক:
র্যানসমওয়্যার গত দু’বছর ধরেই সাইবার ত্রাসের শীর্ষে। আক্রান্ত হলে কিছুই করার থাকে না। হয় পণ দিয়ে সিস্টেম পুনরুদ্ধার অথবা সব হারিয়ে নতুন করে আবার শুরু করা। ব্যাকআপ থাকলে ভালো, না থাকলে একেবারেই নতুন করে শুরু করতে হয়। বিষয়টা অনেকটা বাস্তব জীবনের অপহরণ ঘটনার মতো। বাস্তবের জঙ্গিরা যেমন কাউকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করে, তেমনি সাইবার সন্ত্রাসীরা কোনো কম্পিউটার, সিস্টেম, নেটওয়ার্ক, সার্ভার, বা মোবাইল ডিভাইসের কর্তৃত্ব নিয়ে তা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য অর্থ দাবি করে। এই অর্থ পরিশোধ করতে হয় ভার্চুয়াল কারেন্সি ‘বিটকয়েন’ দিয়ে। আবার পণ পরিশোধ করলেও অপহৃত সিস্টেম যে ফেরত পাওয়া যাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। ‘ওয়ানাক্রাই’ হামলার প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য পণ চাওয়া হয়েছে ৩০০ ডলার সমপরিমাণ বিটকয়েন। যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০ ডলার সমপরিমাণ। হামলার শিকারকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে পণ পরিশোধের। না হলে পণের পরিমাণ বাড়তে থাকবে। বিটকয়েন হল এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা বা সাঙ্কেতিক মুদ্রা (ক্রিপ্টো কারেন্সি)। ডলার কিংবা ইউরোর বিনিময়ে বিটকয়েন কেনা-বেচা যায়। ঠিক অন্যান্য দেশের মুদ্রার মতোই। এটি অনলাইন ওয়ালেটে জমিয়ে রাখা যায়। অনলাইনে বিটকয়েন খরচ করে পাওয়া যায় বাস্তবের বিভিন্ন ধরনের পরিষেবাও। বিটকয়েননের লেনদেন হয় গ্রাহক থেকে গ্রাহকের কম্পিউটারে। এটি কোনো ‘সেন্ট্রাল ক্লিয়ারেন্স হাউজ’ (যে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের চেক এবং আর্থিক লেনদেন হয়)-এর নজরদারির মধ্য দিয়ে। যায় না। কিংবা এটি নিয়ন্ত্রণের জন্য কোনো নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানও নেই। বিটকয়েননের সমস্ত প্রক্রিয়াব সম্পন্ন হয় অনলাইনে একটি উন্মুক্ত সোর্স সফটওয়্যারের মাধ্যমে। উপায় না পেয়ে অনেকেই বিটকয়েনে পণ পরিশোধ করেছেন। তা করে ক’জন এই বিপদ থেকে মুক্তি পেয়েছেন তা এখন জানা যায়নি। তবে এটুকু স্পষ্ট বিশ্বজুড়ে একসঙ্গে এমন সাইবার হামলার এত বড় ঘটনা আগে কোনওদিন ঘটেনি। ওয়ানাক্রাইকে নির্দ্বিধায় বলা যায় প্রথম বিশ্ব সাইবার হামলা। আর প্রথম ধাক্কায় কাবু বিশ্বের শ’খানেক দেশের লক্ষাধিক কম্পিউটার এবং সার্ভার সিস্টেম। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা ও এশিয়ার একটা বিরাট অংশ। আক্রান্ত হয়েছে আমেরিকাও।
এমন মারাত্মক অস্ত্র তৈরি করা ও অরক্ষিত রাখার জন্য আমেরিকাকে দুষছেন সাবেক মার্কিন গোয়েন্দাকর্তা এডওয়ার্ড স্নোডেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনও আমেরিকাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলেছেন, ‘মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি করা ম্যালওয়্যার তার স্রষ্টাদের উপরেই হামলে পড়ছে।’
মাইক্রোসফটের এক কর্তার মতে, এনএসএ-র ভাঁড়ার থেকে সফটওয়্যার চুরি করা কার্যত মার্কিন সেনার কাছ থেকে টোমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চুরি করার সামিল।
আসলে ওয়ানাক্রাইর ক্ষেত্রে কোনো হ্যাকের প্রয়োজন হয়নি। এই র্যানসমওয়্যাররের সাথে জড়িত সাইবার অপরাধীরা সুযোগ নিয়েছে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটা দুর্বলতার। মাইক্রোসফট গত ১৪ মার্চ এই দুর্বলতা বন্ধ করার জন্য একটা আপডেট ছেড়েছে ঠিকই, কিন্তু অধিকাংশ ব্যবহারকারী গতানুগতিকভাবেই আপডেটটা করেনি। অটো আপডেট থাকে বন্ধ। তার উপর পাইরেটেড সফটওয়্যারের দৌরাত্ম্য। আর সবার মতোই ওয়ান্নাক্রাই সন্ত্রাসীদেরও জানা ছিল যে, এমনটাই হবে। ওই সুযোগটাই নিয়েছে তারা। ‘র্যানসম’ না দিলে সমস্ত ডেটা, এনক্রিপশন উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে নিমেষে। বাঁচার উপায় একটাই— দ্রুত মাইক্রোসফট উইন্ডোজের আপডেট, নিরাপত্তা সফটওয়্যারের আপডেট এবং পুরো সিস্টেমের ব্যাকআপ। এই তিনটি পদক্ষেপ ভীষণ জরুরি। সঙ্গে আরো একটি সতর্কতা— এতটুকু সন্দেহ হয় এমন কোনো ফাইল বা ই-মেইল না খোলা।