নিউজ ডেস্ক:
বাজেট আলোচনা জমে উঠেছে। গত দুইদিন সরকারি দল ও বিরোধী দল সংসদে কঠোরভাবে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করলেও গতকাল বিরোধী দলকে তুলোধুনা করেছেন সরকারি দল। অর্থমন্ত্রীর বয়স নিয়ে কটাক্ষ ও পদত্যাগ দাবি করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তবে বাজেট আলোচনায় ব্যাংকের আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানো বা সঞ্চয়পত্রের সুদ কামানোর দাবি থেকে সরে যাননি কেউ। তোফায়েল আহমেদও স্পষ্ট করেই বলেন, এটা প্রস্তাবিত বাজেট, এটাই চূড়ান্ত নয়। যেমন আবগারি শুল্ক ও ভ্যাট নিয়ে কথা উঠছে। এটি নিয়ে আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন।
বাজেট নিয়ে নিজ দলের মন্ত্রীদের সমালোচনার প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন। এই বাজেট কেবিনেট অনুমোদিত। আমার যদি কোন কথা থাকে আবগারি, ভ্যাট, সঞ্চয়পত্র নিয়ে ….। আমি বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জানেন মানুষ কী চায়। আগামী ২৮ তারিখ প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেবেন। সেই দিনই তিনি অর্থমন্ত্রীকে বলবেন, এটা করেন ওটা করেন। তখন এ বাজেট এমনভাবে অনুমোদিত হবে, বাংলাদেশের মানুষ শুধু প্রশংসা করবে না, বলবে এটা শ্রেষ্ঠ বাজেট।
জাতীয় সংসদে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচানায় অংশ নিয়ে এভাবেই অর্থমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে বিরোধী দলের সংসাদদের সমালোচনার জবাব দেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়ার সভাপতিত্বে বাজেট আলোচনায় আরো অংশ নেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সরকারি দলের ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, ড. হাছান মাহমুদ, বজলুল হক হারুন, একাব্বর হোসেন, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, মমতাজ বেগম, জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমাম, স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী ও ঊষাতন তালুকদার।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। জিয়াউদ্দিন বাবলু যে ভাষায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন আমি এ ভাষা আশা করিনি। সমালোচনা করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সমালোচনা হবে গঠনমূলক। যখন বয়স নিয়ে কথা বলেন, আপনাদের নেতা এরশাদের বয়সের কথা চিন্তা করেন না? যার নেতৃত্বে আপনি দল করেন। আপনারা অর্থমন্ত্রীর বয়স নিয়ে কথা বলেছেন। আপনার দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তো অর্থমন্ত্রীর চাইতে ৫ বছরের বড়। তিনি বলেন, একজন সম্মানিত মানুষকে সম্মান দিতে হয়। বাবলু বলেছেন এখন বিদায় হন। তিনি আপনাদের অর্থমন্ত্রীও ছিলেন। উনি (অর্থমন্ত্রী) ১২টা বাজেট দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে আরও দিবেন। উনার ওপর প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আছে।
জিয়াউদ্দিন বাবলুর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যিনি আপনাকে একবার মহাসচিব বানান, আবার বাদ দেন। আবার রুহুল আমিন হাওলাদারকে বানান, আবার বাদ দেন। এই ক্ষমতাশালী লোকটি তিনি তো আপনাদের নেতা। আপনার মামা শ্বশুর, তার কথা কেমনে ভুলে গেলেন? তার পদত্যাগের কথা বললেই ভাল শোনাত।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বাজেট দিয়েছেন। এই বাজেট কেবিনেটে অনুমোদিত। বাজেট পেশের আগে আমরা কেবিনেট মিটিং করি সেখানে বাজেট অনুমোদিত হয়। আমার যদি কোনো কথা থাকে ‘দ্যাট ইজ দি প্রোপার প্লেস হোয়ার আই ক্যান সে’। তিনি আরও বলেন, এটা প্রস্তাবিত বাজেট, এটাই চূড়ান্ত নয়। যেমন আবগারি শুল্ক ভ্যাট নিয়ে কথা উঠছে। এটি নিয়ে আমাদের অভিভাবক প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের পর যে বাজেট পাস হবে সেটি হবে দেশের শ্রেষ্ঠ বাজেট।
এসময় জাতীয় পার্টির শাসনামলের কিছু চিত্র তুলে ধরে বলেন, জাতীয় পার্টিও সময় ১৯৮৯-৯০ শেষ বছরে রাজস্ব ৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা ছিল। বিএনপির শেষ সময় ২০০৬-০৭ হয়েছিল ৩৭ হাজার কোটি টাকা। আর সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, আপনাদের অনেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে কথা বলেছেন। আপনাদের অনেকেই ব্যাংকের মালিক। বাবলুও একটা ব্যাংকের পরিচালক। শেয়ার বাজার নিয়ে কথা বলেন। কাজী ফিরোজ রশিদের দু’টি ব্রোকার হাউজ রয়েছে। ভাল। অভিজ্ঞতা নিয়েই তো কথা বলছেন। ব্যাংকে কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে এটা সত্য। জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেছেন আগে লোড শেডিং ছিল না। আসলে তখনতো বিদ্যুৎ- ই ছিল না। লোড শেডিং থাকবে কি করে।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. ফখরুল ইমাম প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে খোদ সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিদের সমালোচনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, দেখা যাচ্ছে সরকারি দলের নেতারাই বাজেটের সমালোচনা করছেন। এ নিয়ে আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত। সরকারি দল কী বিরোধী দলের ভূমিকায় নামতে চাইছেন কিনা। সামনে আবার নির্বাচন আছে। বঙ্গোপসাগরের মাঝখান দিয়ে নৌকা চলছে। নৌকা ভেসে চলছে, তাতে আপনারা সবাই আছেন। আমার মনে হয়, যাঁরা নৌকায় ছিলেন তাঁরা আর সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বেড়াজালে আটকে থাকতে চাচ্ছেন না। এটাকে স্বাগত জানাই।
অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনার সহকর্মীরা হয়তো আপনাকে পরিত্যাগ করেছেন। কেবিনেটে অনুমোদনের পর সংসদে যেসব বক্তৃতা হচ্ছে শুনতে ভাল লাগে। এটা ঠিক না। সাধারণ আলোচনায় এ পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক এমপি বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্যের স্প্রীড দেখলে মনে হয়, তাঁদের প্রস্তাবগুলো এড়িয়ে যেতে পারবেন না অর্থমন্ত্রী।