দর্শনা জয়নগর চেকপোষ্টে আবারো দুই চোরাচালানীসহ সোনা আটক
দুই মাসে ১৯ কোটি টাকার ৪৩ কেজি সোনাসহ চার জন আটক
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর চেকপোষ্ট এখন সোনা পাচারকারীদের নিরাপদ রুট। গত কয়েক মাসে একাধিক সোনার চালান ধরা পড়ায় তার প্রমাণ মেলে। প্রতি বছর এই চেকপোষ্ট ও জেলার সীমান্তপথে শত শত কোটি টাকার সোনা পাচার হলেও তার কিয়দংশই আটক করা সম্ভব হচ্ছে। কাষ্টমস, বিজিবি,শুল্ক গোয়েন্দা ও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে চোরাকারবারীরা বৃহৎ অংকের সোনার চালান বাংলাদেশ থেকে ভারতে পাচার করছে। তবে, চেকপোষ্ট সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা নদীর তীরবর্তী গ্রাম নাস্তিপুর সীমান্ত থেকে গত ২৫ এপ্রিল এযাবৎকালের সর্ববৃহৎ সোনার চালান ৩৭ কেজি ওজনের ৩২০টি স্বর্ণবারের চালান আটক করতে সক্ষম হয় বিজিবি-৬।
এছাড়াও গত দুই মাসে বিজবি-৬ ও যশোর বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা বিভিন্ন সময় অভিযানে চালিয়ে ৪ সোনাপাচাকারীকে আটক করে প্রায় ১৯ কোটি টাকা মূল্যের ৪৩ কেজি ওজনের ৩৭০ টি স্বর্ণেরবার আটক করতে স্বক্ষম হয়েছে। এদিকে গতকাল বৃহস্প্রতিবার আবারো এই চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে পাচারের সময় ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের ২ কেজি ৭৬ গ্রাম ওজনের ২৪টি স্বর্ণেরবারসহ দুই চোরাকারবারীকে আটক করেছে বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের হাতে । এই নিয়ে এই চেকপোষ্টে সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ৩ টি সোনার চালান আটক হলো।
যশোর বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক সাইফুর রহমান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার দর্শনা জয়নগর চেকপোষ্ট দিয়ে দুইজন সোনা চোরাকারবারী সোনা নিয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। এ সংবাদের ভিত্তিতে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল দর্শনা জয়নগর চেকপোষ্ট অবস্থান নেয়। দুপুরের দিকে মুন্সিগঞ্জ জেলার লোহজং উপজেলার কালুরগঞ্জ গ্রামের নুরুল ইসলাম ব্যাপারির ছেলে মাসুদ রানা ও ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জ উপজেলার রাহিতপুর রামেরকান্দা গ্রামের মহি উদ্দিন খানের ছেলে নুরুল ইসলাম এই দুই চোরাকারবারী ভারতে স্বর্ণ পাচারের জন্য জয়নগর চেকপোষ্টে আসে।
এসময় শুল্ক গোয়েন্দার দলটি ১১টি পাসপোর্টসহ তাদেরকে আটক করে।
আটকের পর মাসুদ রানা ও নুরুল ইসলামের দুটি ট্রলি ব্যাগ তল্লাশী করলে তাদের ট্রলি ব্যাগের ভিতরে বিশেষভাবে লুকিয়ে রাখা ১ কোটি ১৩ লাখ টাকা মূল্যের ২ কেজি ৭৬ গ্রাম ওজনের ২৪টি স্বর্ণের বার উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। আটক শেষে তাদের দামুড়হুদা থানায় সোপর্দ করে আটক দুইজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়। দামুড়হুদা মডেল থানা মামলা নং-১৯, তারিখ ০৭/০৬/ ২০১৮।
এছাড়াও গত ১১ এপ্রিল সকাল নয়টায় দর্শনার জয়নগর চেকপোষ্টে যশোর বেনাপোল শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অভিযানে ভারতগামী এক যাত্রীর স্যান্ডেলের সুখতলায় বিশেস কায়দায় রাখা ৪৫ লাখ টাকা মূল্যের ৯শ গ্রাম ওজনের নয়টি স্বর্ণেরবারসহ বি.বাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার গোপিনাতপুর গ্রামের ফিরোজ সরকারের ছেলে আলামিনকে আটক করে । এরপর চুয়াডাঙ্গা বিজিবি-৬ গত ২৫ শে এপ্রিল দুপুরে গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে দর্শনার নাস্তিপুর সীমান্তবর্তী মাথাভাঙ্গা নদী দিয়ে ভারতে পাচারকালে ১৬ কোটি টাকা মূল্যের ৩২০টি স্বর্ণেরবার যার ওজন ৩৭ কেজি সোনা আটক করতে স্বক্ষম হয়। যা ছিল,এই রিজিয়নের সর্বকালের সর্ববৃহৎ স্বর্ণের চালান আটকের ঘটনা।
এদিন বিজিবি সদস্যরা এই বিপুল পরিমান সোনার চালান আটকে স্বক্ষম হলেও সোনা বহনকারী ৩ চোরাচালানী নদীতে ঝাপ দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। একই মাসে বিজিবি-৬ সদস্যরা ২৭ এপ্রিল সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে দামুড়হুদার জয়রামপুর কাঠালতলায় বাস থামিয়ে ঢাকা টাঙ্গাইলের মিরজাপুর উপজেলার দুল্লা মুনসুরপুর গ্রামের আমিন উদ্দীনের ছেলে শাহিনকে আটক করে। এরপর তার দেহ তল্লাশী করে ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের ৭টি সোনারবার উদ্ধার করে। গত ২৫ শে মে যশোর বেনাপোল গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা আবারো দর্শনার জয়নগর চেকপোষ্টে সকাল ৭টার দিকে অভিযান চালায়। এই অভিযানে ঢাকার গাজীপুর জেলার টুঙ্গি উপজেলার মুনসুর আলী রোডের ৭৯ নং বাড়ীর আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল মোত্তালিবকে আটক করে। গোয়েন্দা সদস্যরা তার স্যান্ডেলের তলায় বিশেষ কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের ১ কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের ১০ টি সোনারবার উদ্ধার করে। সর্বশেষ যশোর বেনাপোল গোয়েন্দা সদস্যরা গতকাল ৭ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে দর্শনা জয়নগর চেকপোষ্ট থেকে ভারতগামী মুন্সিগঞ্জ জেলার লোহজং উপজেলার কালুরগঞ্জ গ্রামের নুরুল ইসলাম ব্যাপারির ছেলে মাসুদ রানা ও ঢাকা জেলার কেরানিগঞ্জ উপজেলার রাহিতপুর রামেরকান্দা গ্রামের মহি উদ্দিন খানের ছেলে নুরুল ইসলামের লাগেজ তল্লাশী করে বিশেষভাবে লুকিয়ে রাখা ১ কোটি ১৩ লাখ টাকামূল্যের ২৪টি স্বর্ণেরবার আটক করে। তবে,এরুটে সোনা পাচারকালে বহনকারীরা আটক হলেও এর মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার একেবারেই বাইরে।