নিউজ ডেস্ক:
চালের বাজার স্থিতিশীল ও দ্রুত মজুদ বাড়াতে আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক সম্পূর্ণরূপে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
এ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব আমলে নিয়ে এ সংক্রান্ত একটি সার-সংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কাজ চলছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতামত সাপেক্ষে শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এর আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ৬ আগস্ট এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়। খাদ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব দেয়। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এনবিআরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, চলতি বোরো মৌসুমে ৭ লাখ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও এক লাখ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহেরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যে গত ২ মে থেকে সারা দেশে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। কিন্তু এপ্রিলে হাওর এলাকায় অকাল বন্যার কারণে শুরুতেই অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। চালের বাজারদর সংগ্রহ মূল্যের চেয়ে বেশি হওয়ায় সংগ্রহ অভিযান সফল না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। ভোক্তার স্বার্থে ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারি পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ বহাল থাকায় এ ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থবিরতার সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতিতে দেশে চাল প্রস্তুতকারী রাইস মিলার, সচ্ছল কৃষক ও বড় বড় চাল ব্যবসায়ীদের মধ্যে মজুদ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এতে বাজারে চালের সরবরাহ কমে গিয়ে বাজারদর বাড়তে থাকে।
এ অবস্থায় আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হলে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি গতি পায়। চলতি অর্থবছরের মাত্র ২৩ দিনে এক লাখ ১৬ হাজার ৬১ টন চাল আমদানি হয়। এর পাশাপাশি সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন চুক্তির আওতায় চাল আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করায় দেশের চালের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলে চুক্তিবদ্ধ মিলার যারা অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ অভিযানের চুক্তির আওতায় চাল সরবরাহ দিতে অনিচ্ছুক ছিলেন তাদের মধ্যে চাল সরবরাহের আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকে মূল চুক্তির চাল সরবরাহ করে পুনরায় বরাদ্দ গ্রহণ করছেন। এ পর্যন্ত এক লাখ ৬২ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে, যা সরকারি ভাণ্ডারে মজুদ বৃদ্ধিতে কিছুটা সহায়ক হয়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, মজুদ বাড়াতে ইতিমধ্যে জি টু জি পদ্ধতিতে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল আনার চুক্তি হয়েছে। ভারত, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে ২ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। আরও এক লাখ টনের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। শুল্ক কমানোয় বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি বাড়ছে। প্রতিদিনই সরকারি গুদামে ৪-৫ হাজার টন চাল পাওয়া যাচ্ছে। শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হলে আমদানি আরও বাড়বে।
ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চাল আমদানির ওপর আরোপিত আংশিক (১৮ শতাংশ) শুল্ক প্রত্যাহার, সরকারি পর্যায়ে বা দরপত্রের মাধ্যমে চাল আমদানির উদ্যোগ ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, সরকারি ভাণ্ডারে মজুদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে চাল আমদানিতে ১৮ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শুল্ক কমানোর ফলে দ্রুতগতিতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে এর অনুকূল প্রভাবে প্রতিদিনই সরকারি ভাণ্ডারে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাচ্ছে।
মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় জানা গেছে, চাল আমদানিতে বিদ্যমান ১০ শতাংশ শুল্কের ফলে এখনও প্রতি কেজিতে আমদানি মূল্যের সঙ্গে কমপক্ষে ৩ দশমিক ৩০ টাকা যুক্ত হয়। চাল আমদানিতে সম্পূর্ণ শুল্ক প্রত্যাহার করা হলে আমদানির পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে, মিলার, ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের মধ্যে মজুদ ধরে রাখার প্রবণতা আরও কমে গিয়ে বাজারদরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ কার্যক্রমে গতি সঞ্চারিত হবে। এর ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ চাল বিদ্যমান সংগ্রহ মূল্যে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে সরকারি গুদামে আনা সম্ভব হবে। চালের বাজারদর সহনীয় পর্যায়ে রাখা এবং স্বল্প সময়ে ও সহজতর উপায়ে সরকারি গুদামে চালের মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাল আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, চালের আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে শুল্কহার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ যোগ হয় রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি)। ফলে ব্যবসায়ীদের ২৮ শতাংশ শুল্ক গুনতে হয়। এতে গত দেড় বছর ধরে চাল আমদানি প্রায় বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ২ মে চাল আমদানি শুল্কমুক্ত করতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছিল খাদ্য মন্ত্রণালয়।
ওই সময় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি বন্ধ ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে চাল আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। এখন বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং বাজারে চালের সরবরাহ বাড়াতে আমদানি শুল্কমুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়লে বাজারে চালের দাম কমবে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে গত ২০ জুন ২৮ শতাংশ থেকে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। এতে প্রতি কেজি চালে ৩ টাকা ৩০ পয়সা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এরপর সরকারিভাবে চালের দাম কমেছে দাবি করা হলেও মোটা চালের দাম এখনও কেজি প্রতি ৪৭-৪৮ টাকা বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় গত ২৫ জুলাই চালের আমদানি শুল্কমুক্ত করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় খাদ্য অধিদপ্তর।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট খাদ্য মন্ত্রণালয় চাল আমদানিতে শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করে নিতে এনবিআরকে চিঠি লিখে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ২ আগস্ট পর্যন্ত সরকারের মোট মজুদ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার টন। যেখানে গত বছর এ সময়ে মোট মজুদ ছিল ৮ লাখ ৬৮ হাজার টন।