এসপি জাহিদ, রাজনৈতিক ও সামজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সমবেদনা জ্ঞাপন
নিউজ ডেস্ক:দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুর-মদনায় শিশু সুমাইয়া ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের ইউনিয়নপাড়ার ইসলাম উদ্দিনের ছেলে আলোচিত চিহ্নিত চোর মোমিনুল ইসলামকে (১৮) আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। এর আগে শিশু সুমাইয়া পিতা নাসিরুল বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি মামলা করেন। গত শনিবার রাত ১০টায় শিশু সুমাইয়ার লাশ উদ্ধারের ৫ ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশ মোমিনুলকে আটক করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে তাঁকে দামুড়হুদা মডেল থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পারকৃষ্ণপুরের প্রধান সড়কে ধর্ষক ও খুনির ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে গ্রামের কবরস্থানে শিশু সুমাইয়ার দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এদিকে, দামুড়হুদার পারকৃষ্ণপুরে গত শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে নিহত স্কুলছাত্রী সুমাইয়ার লাশ উদ্ধারের সময় লাশের পাশে পড়ে থাকা ধর্ষণের আলামত হিসেবে শ্যাম্পুর খালি মোড়ক সংগ্রহ করার হয়। এরপর পুলিশি তদন্তে সন্দেহজনকভাবে মোমিনুলকে শনাক্ত এবং তাঁর নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করা হয়। পরে পুলিশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে হেফাজতে নেয় এবং লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোবরার বেলা দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয়ে ময়নাতদন্তের জন্য সুমাইয়ার লাশ এসে পৌঁছায়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জুনিয়র গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. সোনিয়া আহমেদকে প্রধান করে তিন সদস্যর মেডিকেল বোর্ড গঠন করে লাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। মেডিকেল বোর্ডে ছিলেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির ও চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ফাতিমা হক। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতলের সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান উপস্থিত থেকে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, ‘যেহেতু এটি একটি সেনসিটিভ বিষয়, সে কারণে আমি নিজে উপস্থিত থেকে ময়নাতদন্ত পর্যবেক্ষণ করি। শিশুটির শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। শিশুটির মৃত্যুর কারণ মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানানো হবে।’ এরপর গতকাল বিকেলেই ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের সদস্যদের কাছে শিশু সুমাইয়ার মরদেহ হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিহত সুমাইয়ার লাশ দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামে পৌঁছালে সুমাইয়াকে শেষ দেখা দেখতে আত্মিয়-স্বজন, প্রতিবেশী, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, সহপাঠীসহ পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে কয়েক হাজার মানুষের ঢল নামে। এ সময় লাশ দেখতে আসা সবার আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। সুমাইয়ার মা পলি খাতুন ও বাবা নাসিরুল কান্নাভরা কন্ঠে জানান, কঠোর পরিশ্রম করে সুমাইয়াকে লেখাপড়া করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। সেই স্বপ্ন এখন শুধু স্মৃতি হয়েই থাকল পিতা-মাতার বুকে। পরে ছয়ঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সুমাইয়ার লাশ কিছুক্ষণ রাখার পর রাত সাড়ে ৮টার দিকে পারকৃষ্ণপুর গ্রামের ঈদগাহ মাঠে জানাজ শেষে গ্রামের কবরস্থানে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। এর আগে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে ছুটে আসে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম, দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মুনিম লিংকন, সহকারী পুলিশ সুপার আবু রাসেল, দামুড়হুদা উপজেলা চেয়ারম্যান আলী মুনসুর বাবু, দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম, দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ওসি শেখ মাহাবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে পারকৃষ্ণপুরের প্রধান সড়কে ধর্ষকের ফঁসির দাবিতে নিহত স্কুলছাত্রী শিশু সুমাইয়ার স্কুলের সহপাঠীসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পারকৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা আরতী হালসোনা, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী মো. কিতাব আলী, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল ইসলাম, দামুড়হুদা লোকমর্চার সভাপিত শহিদুল ইসলাম, দর্শনা সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি হারুন-অর-রশিদ, চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমর্চার সহসাধারণ সম্পাদক অ্যাড. হানিফ, চুয়াডাঙ্গা জেলা লোকমর্চার সভাপতি অ্যাড. আলমগীর হোসেন, পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম জাকারিয়া আলম প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে বিক্ষুদ্ধ জনতা ধর্ষকের বাড়িঘর ভাঙচুর ও অগ্নি-সংযোগের ঘটনা ঘটায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে দর্শনা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট পৌঁছায়। এর আগেই ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম ও স্থানীয় নেতা-কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে নেন।
এদিকে, আদালতে ১৬৪ ধারায় ধর্ষক মোমিনুলের জবানবন্দি রেকর্ড করে তাঁকে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মাহবুব জানান, সুমাইয়া খাতুনকে ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন ধর্ষক মোমিনুল ইসলাম ওরফে মণ্ডল। রাতেই তাঁকে আটক করা হয়। আটকের পর গতকাল বিকেলে তাঁকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে ১৬৪ ধারায় তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। এ সময় মোমিনুল তাঁর স্বীকারোক্তিতে জানান, সুমাইয়াকে শনিবার দুপুরে কৌশলে ইউনিয়ন পরিষদের সামনের একটি শিমখেতের ভেতর নিয়ে যান তিনি। এরপর প্রথমে মুখ বেঁধে সুমাইয়াকে ধর্ষণ এবং পরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।