ফরিদ উদ্দিন – লামা প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা উপজেলায় চলতি বছর আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। আশানুরুপ উৎপাদিত হওয়ায় এবং বেশি দামে বিক্রয় করতে পেরে খুশি চাষীরা । কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন এর অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকেরা আখ চাষ করেছেন। এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগেও অনেকে আখ চাষ করেছেন বলে জানা গেছে। আখ চাষের অধিকাংশ জমিতেই ইতিপূর্বে ক্ষতিকর তামাক চাষ হতো। তামাকের বিকল্প আখ চাষে স্থানীয় কৃষক ঝুকঁছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত ৩ যুগের বেশি সময় ধরে লামা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার আবাদি জমিতে ক্ষতিকর তামাক চাষ হয়ে আসছে। তামাক চাষে লাভ বেশি হলেও শারীরিক ক্ষতি, পরিশ্রম এবং মুলধন বেশি লাগার কারনে অনেক কৃষকই সম্প্রতিকালে ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। একই সাথে তারা তামাকের বিকল্প ফসল চাষের চেষ্টা চালাচ্ছে। যে সকল কৃষক ক্ষতিকর তামাক চাষ করতেন তাদের অনেকেই এখন আখসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করে লাভবান হচ্ছে।চলতি মৌসুমে লামায় আখের বাম্পার ফলন এবং আশানুরুপ দাম পাওয়ায় আগামী মৌসুমে স্থানীয় কৃষকেরা আরো বেশি আখ চাষে উদ্বুদ্ধ হবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ক্ষতিকর তামাক চাষের বিকল্প হিসেবে আখের চাষ বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ভাবে সার্বিক সহায়তা প্রদান অপরিহার্য বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা তামাক চাষের জমিতে আখের এ বাম্পার ফলনকে ” ক্ষতিকর তামাকের ক্ষেতে মিষ্টি আখের হাসি ” বলে মন্তব্য করছেন স্থানীয়রা।
কৃষি গভেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করণ প্রকল্পের আওতায় লামায় বিএসআরআই- ৪২ রংবিলাস, চায়না-২৮, অমৃত-৮৪১, সিও-২০৮ ও বিএমসি-৮৬-৫৫০ জাতের আখ চাষ করেছেন ১১০ জন চাষী। অনেক চাষী এ প্রকল্পের বাইরে ব্যক্তিগত উদ্যোগেও আখ চাষ করেছেন।
এসকল কৃষকরা আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে আলু, গাজর ও ফরাশসিম চাষ করে লাভবান হচ্ছে। আখ ক্ষেতে সাথী ফসল হিসেবে বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ আরো কয়েকটি কৃষি ফসল চাষে লামা কৃষি বিভাগ প্রযুক্তি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। চলতি মৌসুমে লামায় প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে বলে জানা গেছে। লামার মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের উপযোগি এবং জলাবদ্ধতা না থাকায় চলতি মৌসুমে আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতি হেক্টর আখ চাষে কৃষকের খরছ হয়েছে ২ লাখ টাকা। আর প্রতি হেক্টরে উৎপাদিত আখ ১০ থেকে ১১ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
লামা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুইচিংমং মার্মা জানান, সে প্রায় ৪০শতক জমিতে রংবিলাস-৪২ জাতের আখ চাষ করেছে। তাঁর মোট ব্যয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। বিক্রিমূল্য পাচ্ছে সে, দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। আগে এসকল ভূমিতে তামাক চাষ করে তিনি খরছ বাদ দিয়ে ৫ হাজার টাকাও লাভ করতে পারতেন না।
কৃষক সুইচিংমং জানান, সাথী ফসল হিসেবে আখের ফাঁকে গাজর, ফরাশসিম ও আলু চাষ করেছেন তিনি। ছাগলখাইয়া এলাকার কৃষানি হুরে জান্নাত খুকি জানান, তিনি ২ লক্ষ টাকা খরচ করে আখ চাষ করেছেন। প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষ টাকা বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করছেন। লামা চেয়ারম্যান পাড়ার বাসিন্ধা খুচরা আখ ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, প্রতি শত আখ ২ হাজার ৫শ’ টাকা হারে ক্রয় করে তিনি সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন।
লামা উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নুরে আলম জানান, গ্রীষ্মপ্রধান দেশের রৌদ্রোজ্জ্বল উষ্ণ আবহাওয়ায় আদ্র মাটিতে আখের সব চেয়ে ভালো ফলন হয়। বেলে দোঁআশ থেকে শুরু করে এঁটেল পর্যন্ত সব মাটিতেই আখ চাষ করা সম্ভব হলেও পানি নিকাশের ব্যবস্থাযুক্ত এঁটেল দোঁআশ মাটি আখ চাষের জন্য সর্বোত্তম। সহনীয় উষ্ণ তাপমাত্রা, প্রচুর রৌদ্র ও আলো-বাতাস এবং মাঝে মধ্যে বৃষ্টিপাত আখ চাষের সহায়ক। তিনি বলেন পার্বত্য এই ভুমিতে আখ চাষের অনুকুল পরিবেশ বিদ্যমান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ইক্ষু গবেষণা ও উন্নয়ন জোরদার করণ প্রকল্প লামা উপজেলায় দায়িত্বরত বৈজ্ঞানিক সহকারি বসন্ত কুমার তঞ্চঙ্গা জানান, তাঁরা কয়েকজন কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষা মূলকভাবে সাড়ে তিন হেক্টর জমিতে এ বছর আখ চাষ করিয়েছেন। এর মধ্যে রংবিলাস-৪২, অমৃত-৮৪১, চায়না-২৮, সিও-২০৮ ও বিএমসি-৮৬-৫৫০ জাতের আখ চাষ হয়। ্এসবের মধ্যে চিবিয়ে খাওয়া ও চিনি বা গুড় জাত রয়েছে। তিনি জানান, তামাকের বিকল্প চাষ হিসেবে এখানকার মাটিতে আখ চাষের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।