মোঃ ফরিদ উদ্দীন, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি: বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাইতং ইউনিয়নে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতার ছোট ভাইকে হত্যার চেষ্টা করেছে সন্ত্রাসীরা। হামলাকারীদের অব্যাহত হুমকির মুখে রয়েছে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রীর পরিবার। ঘটনাটি ঘটেছে ফাইতং ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড লম্বাশিয়া গ্রামে। হামলায় ৬জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি মো: হাসানের ছোট ভাই ট্রাক চালক আবু ওয়াহেদ রানাকে হত্যার চেষ্টা করে। একটি তুচ্ছ ঘটনার কারণে ফাইতং রাইম্যা খোলার বাসিন্দা মোক্তার আহম্মদগং এই হত্যার চেষ্টা করে বলে লামা থানায় মামলা করেছে আহতের শ্বশুড় মো: বেলাল উদ্দিন।
জানাগেছে, গত ১৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় হুমায়া বেগম তাদের মুরগি চুরি করেছে মর্মে রানাকে মিথ্যা অপবাদ দিলে, উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এর জের ধরে ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার সময় মোক্তার আহম্মদ ও তার পরিবারের অন্যরাসহ ভাড়াটিয়া কয়েকজন সন্ত্রাসী নিয়ে রানার পথরোধ করে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করে।
আহত রানার বড় ভাই ছাত্রলীগ নেতা মো: হাসান জানান, মোক্তার হোসেনসহ তারা সংঘবদ্ধ হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় রানাকে লোহার রডদ্বারা বেদম প্রহার করে। এক পর্যায়ে আবু ওয়াহেদ রানাকে মৃত ভেবে হামলাকারীরা পাশ্ববর্তী জনৈক নুর নাহারের বাড়ির কাছে এসবিএম ব্রিকফিল্ড এর পরিত্যক্ত ইটের স্তুপে ফেলে যায়।
ওই সময় কিছু একটা আঁছ করতে পেরে নুর নাহার বেগম ইটের স্তুপের নিকট পৌঁছে টর্চ লাইটের আলোতে হাত পা বাঁধা কাদামাটি মাখা একজনকে দেখে চিৎকার করলে, লোকজন এসে ট্রাক চালক রানাকে সনাক্ত করে প্রথমে চকরিয়া সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, পরে চমেক নিয়ে যায়। সন্ত্রাসীরা রানাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য হাড়ভাঙ্গা রক্তাক্ত আঘাত করে নগদ টাকাও লুটে নেয় বলে মামলার আর্জিতে উল্লেখ রয়েছে।
ফাইতং ইউনিয়ন আওয়ামী ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো: হাসান ৯ অক্টোবর লামা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, তাঁর মা রাহেলা বেগম ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি। তাদের পরিবারটি আওয়ামীলীগ সমর্থিত হওয়ায় ভিন্ন রাজনীতি সমর্থিতরা তাদের সাথে শত্রুতা করছে।
হাসান জানান, মোক্তার হোসেন একজন ভুমি জবর দখলকারী লোক। ওই দিন তারা রানাকে হত্যা করে পাশের বাসিন্দা মৃত সামসুল আলমের ছেলে বদি আলমের উপর হত্যার দায়ভার চাপিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। কারণ হিসেবে জানাযায়, বদি আলমের পৈতৃক ভু-সম্পত্তি দখলে নেয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মোক্তার হোসেন ষড়যন্ত্র করে আসছে। রানা বেঁচে যাওয়ায় মোক্তারের ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেল বলে দাবী করেন মো: হাসান।
সে জানায় স্থানীয় ক’জন লোক আওয়ামীলীগ রাজনীতির মুখোশ পড়ে নিজেদেরকে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
ফাইতং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন কোম্পানী জানান, ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতার ভাই আবু ওয়াহেদ রানাকে খুবই নির্দয় নিষ্ঠুরভাবে মারা হয়েছে। তাকে প্রথমে চকরিয়া পরে ১৮দিন চমেক-এ চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। উক্ত ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে এবং আসামী গ্রেপ্তার হয় বলে চেয়ারম্যান জানান।
এদিকে ছেলের উপর হামলার পর থেকে ফাইতং আওয়ামীলীগ নেত্রি রাহেলা বেগম অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। সে মুঠোফোনে জানান, তার ছেলেকে হত্যার চেষ্টা কারিরা এখন তাঁর আত্মীয়-স্বজনসহ তাঁর অপর সন্তান ছাত্র নেতা মো: হাসানের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করছে। তারা বহিরাগত সন্ত্রাসদ্বারা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতির আশংকার কথা জানান রাহেলা বেগম।
মামলার বাদি আহত রানার শশুর মো: বেলাল উদ্দিন জানান, বিবাদী মোক্তার হোসেনগং প্রকাশ্যে প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। ক’দিন আগে বানিয়ারছড়া বাজারে প্রকাশ্যে লাঠি নিয়ে হামলা করে মোক্তার হোসেন। বেলাল উদ্দিন এখন আতংকে সময় কাটাচ্ছে বলে জানায়।
লামা থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর এই ঘটনায় মামলা হয়, অভিযোগের সাথে সাথেই একজনকে আটক করে জেলে পাটানো হয়।
এই ঘটনায় আহতের শশুর মো: বেলাল বাদী হয়ে; ১৮৬০- এর পেনেল কোর্ড- ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩২৫, ৩০৭ ও ৩৭৯ ধারায় মামলা দায়ের করেছে। মামলার আসামীরা হলো; মো: পারভেজ, প্রকাশ সোনা মিয়া, আবু হানিফ, মোক্তার আহম্মেদ, হুমায়রা বেগম, রাশেদা বেগম ও মো: নোমান।
আসামী করা না হলেও এই ঘটনায় আরো ৩জন রয়েছে বলে দাবী করে মামলার বাদী। এরা হলো; মো: জসিম উদ্দিন, জালাল উদ্দিন ও মো: শাহেদ। বাদি বেলাল উদ্দিন আরো জানান, তাৎক্ষণিক ঘটনার ভয়াবহতায় ৬জনকে আসামী করা হয়। আহত রানার জ্ঞান ফেরার পর অন্য তিন জনের নাম জানাযায়।