নিউজ ডেস্ক:
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বর্বরোচিত অত্যাচারের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি। এজন্য দেশটির বর্বর সেনাসমর্থিত সরকার দায়ী।
তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সামলানো বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। মিয়ানমার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন উপলক্ষে অর্থমন্ত্রী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থান করছেন। শনিবার ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল কমিটির (আইএমএফসি) বৈঠক শেষে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি এসব কথা বলেন বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রীর সফরসঙ্গী এবং জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা শাহেদুর রহমান।
বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের সার্বিক অবস্থা দেখার জন্য কক্সবাজারের উখিয়ায় বেশ কয়েকটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি দোভাষীর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের বর্ণনা শুনে অবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেদিন তিনি মিয়ানমার সরকারের অত্যাচারের কথা বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের সদস্য দেশগুলোর সামনে তুলে ধরার কথা বলেছিলেন।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এবারের সম্মেলনের প্রত্যেকটি বৈঠকেই আমি মিয়ানমারে অত্যাচারিত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে কথা বলেছি। তাদের ওপর কীভাবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অত্যাচার করেছে তা তুলে ধরেছি। তারা সবাই সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকও সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা অনুদান ও ঋণ দুটোই দিতে চেয়েছে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যাবে। তবে এটা ঠিক যে, বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছ থেকে থেকে বড় ধরনের সহায়তা পাওয়া গেলেও আমাদের অর্থনীতির ওপর বড় ধাক্কা আসবে। গত দেড় মাসে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে, যেখানে এই জনগোষ্ঠীর আরো চার লাখের মতো মানুষ আগে থেকেই এ দেশে আছে।
মিয়ানমারের তীব্র সমালোচনা করে আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মিয়ানমার একটা ব্লাডি কান্ট্রি। মিয়ানমার একটা বদমায়েশ দেশ। এই মিয়ানমার দেশটি এ বছর বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করবে। এটা বাংলাদেশের জন্য রিয়েল ক্রাইসিস, এটা বাংলাদেশের ওপর হামলার শামিল।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বিশ্বে একমাত্র জনবিচ্ছিন্ন সেনাবাহিনী। সম্পূর্ণ সম্পদ সেনাবাহিনীর পেছনে খরচ হয়।
বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে রোহিঙ্গাদের পেছনে কেন খরচ করা হবে, এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা মানবিক। আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথম থেকেই তাদের জন্য গেট খুলে দিয়েছেন। তিনি মানবিক বলেই এ কাজটি করেছেন। বিশ্ববাসী তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।
তবে রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা বন্ধ এবং তাদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর ঠিকমতো চাপ দেওয়া হচ্ছে না বলে মনে করছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেন, আসলেই তেমন চাপ দেওয়া হচ্ছে না। চীন-রাশিয়া তো কিছুই করছে না। সম্মিলিতভাবে সবাই মিলে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিকসহ নানা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির কী ধরনের ক্ষতি হবে, এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের বিশাল অংকের টাকা খরচ করতে হবে। এটা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। দেশে গিয়েই বাজেট বরাদ্দ কাটছাট করতে হবে।