চুয়াডাঙ্গা ৭০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ৭০ শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসায় গঠিত হয়েছে ১৫ সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। তবে আইসোলেশন ওয়ার্ডে বিছানাপত্র ছাড়া নেই অন্য কোনো আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা। করোনা বা কোভিড-১৯ পরীক্ষার কিট জেলা পর্যায়ে পাওয়া যাবে না। এ পর্যন্ত সন্দেহভাজন বা আক্রান্তের পরীক্ষা ঢাকায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে (আইইডিসিআর) সম্পন্ন হয়ে আসছে। আজ বুধবার থেকে করোনা পরীক্ষা চালু হতে পারে খুলনা মেডিকেলে। তবে করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে স্থানান্তরের জন্য রাখা হয়েছে আলাদা একটি জরাজীর্ণ অ্যাম্বুলেন্স।
সরেজমিনে দেখা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনের জরুরি বিভাগে ৩টি, জরুরি বিভাগের মধ্যে চিকিৎসকের রুমে ১টি, ১২০ ও ১২৭ নম্বর কক্ষে ৪টি করে ৮টি, টিকাদান কক্ষে ২টি, স্টোর রুমে ১টিসহ মোট ১৫টি বেড রয়েছে। সেই সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের পঞ্চম তলা ও ষষ্ঠ তলায় আইসোলেসন ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে। যেখানে মোট বেড সংখা ৫৫টি। সব মিলিয়ে মোট ৭০টি বেড প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলায় মোট ৪ শ শয্যা আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুতের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব আইসোলেশন ইউনিটের ভর্তি রোগীদের জন্য মোট ৩০ জন চিকিৎসক ও ২৫ জন নার্সের সমন্বয়ে মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসোলেসন ইউনিটে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় সদর হাসপাতালের জুনিয়র কার্ডিওলজি কনসালটেন্ট ডা. আবুল হোসেনকে প্রধান করে ১৫ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। এ টিমে ৯ জন চিকিৎসক ও ৬ জন নার্স রয়েছেন, যাঁরা রোস্টার অনুযায়ী তিন শিফ্টে প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের সেবা দেবেন।
তবে আইসোলেশন ইউনিটগুলোয় করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় বেড ছাড়া নেই কোনো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম। ভেন্টিলেশন তো অনেক দূরের কথা। তবে আশার কথা কর্তৃপক্ষ বলছেন, সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে ১ দশমিক ৩৬ এমকে ১১৫টি ও নতুন ভবনে ৬ দশমিক ৮ এমকে ৫০টিসহ মোট ১৬৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রস্তুত রয়েছে। যা দিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ ও করোনা আক্রান্ত রোগীদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাবে। যদিও এগুলোর দেখা মেলেনি বেডগুলোর পাশে।
এ পর্যন্ত করোনাভাইরাস সন্দেহে হাসপাতালের আইসোলেশনে থাকা ৩ জন, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা ২ জনসহ মোট ৫ জন রোগীর শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এ পাঠানো হয়। যাঁদের মধ্যে হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি থাকা সাব্বির আহম্মেদ নামের এক ইতালি প্রবাসীর শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তিনি বর্তমানে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া অন্য দুজনের শরীরে করোনা শনাক্ত না হওয়ায় তাঁদেরও ছুটি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা আরও ২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর, ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এই সন্দেহভাজন ২৪ জন প্রবাসী ও তাঁদের পরিবারের সদস্য। তবে এদের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল এখনও এসে পৌঁছায়নি। এই রিপোর্ট লেখার সময় আইসোলেসন ওয়ার্ডগুলোতে কোনো রোগী ছিল না।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন রোগীর চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. আবুল হোসেন বলেন, এটি ভাইরাসজনিত রোগ। এখন সাধারণত সর্দি, কাশিসহ অন্যান্য কারণে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, সব ভাইরাসেরই একটি মৌসুম থাকে, মৌসুম শেষ হলে এর প্রকোপও কমে যায়। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য নার্সরা যাতে আতঙ্কিত না হন, সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই তাঁরা করোনাভাইরাস মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভাইরাসজনিত রোগের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই। তবে যা রয়েছে, তা নিয়েই প্রাথমিক পরিস্থিতি মোকাবিলার সবরকম প্রস্তুতি নিয়েছি। তিনি জানান, আইসোলেশনে থাকা রোগীরা নিজ নিজ বিছানাই অবস্থান করবেন, প্রতিটি কক্ষে টয়লেটের ব্যবস্থা রয়েছে। রোগীরা যেন জানালা দিয়ে বাইরে থুথু না ফেলেন, তার জন্য প্রতিটি কক্ষে পলিথিন ও ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হবে। আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রোগীদের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক পিপিই, প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রস্তুত আছে। রোগীর উপস্থিতি অনুযায়ী তা ব্যবহার করা হবে। যেহেতু, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে আধুনিক কোনো চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সরঞ্জাম নেই। সে জন্য করোনা আক্রান্ত কোনো রোগীর অবস্থা যদি আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে, তবে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে একটি আলাদা অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে।
জরাজীর্ণ অ্যাম্বুলেন্সে করোনা আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার্ড করা হলে, শুধুমাত্র অক্সিজেনের মাধ্যমে রোগী কতটা সুরক্ষিত থাকবেন, এ বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি বাইরে থেকে দেখতে খুব একটা পরিপাটি নয়। তবে অ্যাম্বুলেন্সটি সম্পূর্ণ চলাচলের যোগ্য। করোনা মহামারিতে বাস ও ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করলে এই অ্যাম্বুলেন্সে করেই পরপর তিনবার রোগীদের স্যাম্পল পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। করোনা আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগীর ক্ষেত্রে যেকোনো সময় যা কিছু ঘটতে পারে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেও এটি ঘটতে পারে অথবা রোগীকে অক্সিজেন দিয়ে স্থানান্তর কালেও যা কিছু ঘটতে পারে। রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী অ্যজিথ্রোমাইসিন, অ্যান্টিহিস্টামিন, প্যারাসিটামলসহ ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়। তিনি আরও জানান, আজ বুধবার অথবা কাল বৃহস্পতিবার নাগাদ খুলনা মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পিসিআর মেশিন দিয়ে পরীক্ষা শুরু হলেই এ অঞ্চলের রোগীদের পরীক্ষার জন্য ঢাকা যেতে হবে না এবং পরীক্ষার ফলাফল পেতে এত সময় ব্যয় হবে না। এক দিনের মধ্যেই ফলাফল পাওয়া সম্ভব বলে আশা করছি। এছাড়া চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সরবরাহের ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে