রোগীর সাথে থাকা স্বজনদের কারণে ব্যহত চিকিৎসা সেবা!

0
8

স্পট-চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল : মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম চিকিৎসক-নার্স
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে জরুরী বিভাগে এবং জরুরী বিভাগ থেকে ওয়ার্ডে প্রবেশের সময় প্রথম দেখায় মনে হতে পারে, এটি কোন শরণার্থী শিবির। ওয়ার্ডগুলোতে তিল পরিমাণ জায়গা নেই, আর বারান্দায় রোগীদের স্বজনদের দীর্ঘ সারির মধ্য দিয়ে পা ফেলে হেঁটে যাওয়ায় কষ্টকর। মাত্রাতিরিক্ত এই রোগীর স্বজনদের ভিড়ে ব্যাহত হচ্ছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা। রোগীর স্বজনদের ভিড়ে নতুন রোগীর স্থান মিলতে কষ্ট হচ্ছে বারান্দাতেও। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মহিলা এবং পুরুষ দু’টি মেডিসিন ওয়ার্ডে যেখানে মোট রোগীর সংখ্যা ১৩০ থেকে ১৪০ জন, সেখানে রোগীর স্বজনদের সংখ্যা থাকে ৪শ’ জনের অধিক।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিতে আসা আশরাফুল ইসলাম বিষপান করে অসুস্থ হয়ে ভর্তি রয়েছে। কিন্তু ওয়ার্ডের ভিতরে জায়গা না পেয়ে হাসপাতালের বারান্দায় ঠাঁই হয়েছে তার। আর তার চিকিৎসা কাজে সহায়তার জন্য আসা স্বজনদের সংখ্যা ৭ জন। এতেই বোঝা যায় কেন সে ওয়ার্ডের ভিতর ঠাই পাইনি এবং কেনই বা সে হাসপাতালের বারান্দায়। ঠিক একই চিত্র দেখা যায় ওয়ার্ডের ভিতরেও। একজন রোগীর পাশে বিছানা সাজিয়ে থাকছে রোগীর সাথে আসা ৪ থেকে ৫ জন স্বজন। তিনবেলা বাসা থেকে খাবার এনে গোল হয়ে সেখানেই বসে খাচ্ছে তারা। এছাড়া রোগীর স্বজনদের ব্যবহৃত অতিরিক্ত উচ্ছিষ্টসহ নানা বর্জ্য ফেলে নোংরা করছে হাসপাতালের পরিবেশ। এর ফলে রোগীর সাথে আসা স্বজনরাও নানা ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মানুষের অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনও অনেক সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। থাকার জায়গার পরিমাণ নিয়ে এক রোগীর স্বজনের সাথে অন্য রোগীর স্বজনের তর্কাতর্কির মত ঘটনাও মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে।
মেডিসিন ওয়ার্ডের জুনিয়র মেডিসিন কনসালট্যান্ট ডা. আবুল হোসেন জানান, মহিলা এবং পুরুষ তার দু’টি ওয়ার্ডে শয্যা রয়েছে ২৮টি। তবে সব সময় গড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ জন চিকিৎসা নিতে ভর্তি থাকে এখানে। আর গড়ে প্রতি রোগীর সাথে ৩ থেকে ৪ জন রোগীর স্বজনদের বাড়তি চাপের কারণে লোকের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৪শ’রও অধিক। এই ভিড় ঠেলে রোগী দেখতে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়তে হয় ডাক্তারদের। রোগীর স্বজনদের চেঁচামেচিতে রোগীর কথাও ঠিকমতো শোনা যায় না।
এদিকে, রোগীর স্বজনদের চাপ সামলাতে হাসপাতালে চালু রয়েছে ভিজিটিং কার্ড সিস্টেম। রোগী ভর্তির সময় তার একজন স্বজনকে দেয়া হয় একটি ভিজিটিং কার্ড। এই কার্ড দেখিয়ে ওয়ার্ডের ভিতর প্রবেশ করতে হয়। তবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্তই এই সিস্টেম চালু থাকে। এই সামান্য সময়েও রোগীর স্বজনরা জোর করেই ওয়ার্ডে প্রবেশ করে। যে কারণে রোগীর স্বজনের ভিড়ে সমস্যায় পড়তে হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা কর্মচারী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামীম কবির বলেন, বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জনবলের যেমন সংকট, তেমনি মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপ। আর তার থেকেও বড় সমস্যা রোগীর স্বজনরা। হাসপাতালের শয্যা সংখ্যার থেকেও প্রতিদিন ভর্তি রোগীর সংখ্যা থাকে তিন থেকে চার গুন। আর রোগীর স্বজনেরা তার চেয়ে তিন থেকে চারগুন বেশী। ফলে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে, শব্দ দূষণ বেশি হচ্ছে, অতিরিক্ত লোকজনের ব্যবহারের কারণে হাসপাতালের টয়লেট, বিছানাপত্র বেশি নোংরা হচ্ছে। যার সকল প্রভাব পড়ছে রোগীদের উপরেই। চিকিৎসকরাও রোগীদের চিকিৎসা দিতে বিঘিœত হয়। হাসপাতালের জনবল সংকটের কারণেই অতিরিক্ত রোগীর স্বজনদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছেনা।