চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালন
নিউজ ডেস্ক:রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন-ভাতা প্রদানসহ পেনশন প্রথা চালু ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা প্রদানের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলররা। বাংলাদেশ পৌর সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির আহ্বানে গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে এ কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির আহ্বানে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতি পালনের ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ নাগরিকেরা। পৌরসভাগুলোতে সেবা নিতে এসে পড়তে হয় দূর্ভোগে।
চুয়াডাঙ্গা:
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন-ভাতা প্রদানসহ পেনশন প্রথা চালু ও জনপ্রতিনিধিদের সম্মানী ভাতা প্রদানের দাবিতে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলররা দিনব্যাপী কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছেন। ‘এক দেশে দুই নীতি মানি না মানবো না’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বেতন ভাতা ও পেনশন সুবিধা প্রবর্তনসহ সরকারের রাজস্ব তহবিল থেকে বেতন প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পৌর সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কার্য নির্বাহী কমিটির আহ্বানে চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের আয়োজনে পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গতকাল সোমবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রথম দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করেন।
বাংলাদেশ পৌর সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের সভাপতি ও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আয়ুব আলী বিশ্বাসের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন জেলা ইউনিটের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর স্যানেটারি ইন্সপেক্টর নার্গিস জাহান, মোয়াজ্জেম হোসেন, শের আলী প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘সরকারি সব নিয়ম-নীতি মেনে পৌরসভায় চাকরি করলেও আমরা সরকারি কোষাগার থেকে কোনো বেতন ভাতা পাই না। কেবলমাত্র পৌরসভার রাজস্ব আয় থেকে আমাদের বেতন ভাতা গ্রহণ করতে হয়। এর ফলে বেশিরভাগ সময় তিন-চার মাস পর্যন্ত আমাদের বেতন ভাতা বাকি থাকে। বেতন-ভাতা পাওয়ার ক্ষেত্রে যদি অনিশ্চয়তায় থাকতে হয়, তবে পৌরবাসীদের উত্তম সেবা দেব কীভাবে? সরকার বাজেট ঘোষণা করলেও সে বাজেটে আমাদের দাবির বিষয়ে কোনো প্রতিফলন নেই।’ বক্তারা জানান, বিগত পাঁচ বছর যাবৎ কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক আবেদন করার পরও দাবি পূরণ না হওয়ায় তাঁরা এ আন্দোলন করতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে, দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে পৌর কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। একই দিন সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরের দিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত সড়কবাতি, কঞ্জারভেন্সি সেবাসহ অন্য সব দাপ্তরিক সেবা বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ জুলাই রোববার ঢাকা প্রেসক্লাব ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে দেশের সব পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মহাসমাবেশসহ অবস্থান কর্মসূিচ পালন করবেন।
আলমডাঙ্গা:
আলমডাঙ্গায় পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশন প্রাপ্তির দাবিতে পূর্ণদিবস অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। উক্ত কর্মসূচিতে আলমডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র হাসান কাদির গনু উপস্থিত হয়ে পূর্ণ সমর্থন দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলমডাঙ্গা পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আশরাফ আলী, সাধারণ সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম, পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ সদর উদ্দিন ভোলা, মহিলা কাউন্সিলর সামসাদ রানু, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলাল উদ্দিন, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আলী আজগর সাচ্চু ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম।
দর্শনা:
দর্শনা পৌরসভায় দুই দিনব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করেছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালিত হয়। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা ও পেনশন প্রদানের দাবিতে তাঁরা এ কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দর্শনা পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান, প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম, দর্শনা পৌর কর নির্ধারক সরওয়ার হোসেন, কর আদায়কারী আরিফিন হোসেন, প্রধান সহকারী রুহুল আমিনসহ পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সব কার্যনির্বাহী সদস্য ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
জীবননগর:
রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশন প্রথা চালুর দাবিতে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন জীবননগর পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গতকাল সোমবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত জীবননগর পৌরসভার কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জীবননগর পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদা খাতুন জানান, ‘আমরা দিন-রাত সমান করে সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের বেতন ভাতার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় স্ব-স্ব পৌরসভার রাজস্ব আদায়ের দিকে। এ কারণে অনেক পৌরসভাতে দীর্ঘ ১০-১২ মাস পর্যন্ত বেতন-ভাতা বকেয়া রয়েছে। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশন প্রথা চালুর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’ এ সময় বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন জীবননগর পৌর শাখার সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, জীবননগর পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, পৌর সচিব জায়েদ হোসেন, কাউন্সিলর আবুল কাশেম, হযরত আলী, আত্তাব হোসেন, বিউটি খাতুন প্রমুখ।
কোটচাঁদপুর:
পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও পেনশন রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে চালুর দাবিতে গতকাল সোমবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত পৌর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি ও কর্মবিরতি পালন করা হয়।
কোটচাঁদপুর পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেকেন্দার আলীর সভাপতিত্বে কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জিল্লুর রহমান, অসিত কুমার ঘোষ, মোস্তাফিজুর রহমান, খন্দকার রমজান আলী, শফিকুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর সরদার, কুদ্দুসুর রহমান, আবু হাসান, মীর মনীর হোসেন, আল আমিন প্রমুখ।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র জাহিদুল ইসলাম জাহিদ কর্মসূচিতে এসে পৌরসভা সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।