নিউজ ডেস্ক:
এক বছরের ব্যবধানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রী ও আয় দুটোই বেড়েছে। এ এক বছরের ব্যবধানে যাত্রী বেড়েছে ২৮ লাখ ৭২ হাজার এবং বাড়তি রাজস্ব আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। যাত্রী পরিবহন বৃদ্ধি ছাড়াও নতুন ট্রেন সার্ভিস চালুর কারণে রেলের আয়ে প্রভাব পড়েছে। তবে বিনা টিকেটে যাত্রী, কোচ ও ইঞ্জিন সংকট কমানো গেলে রেলের আয় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এছাড়া উর্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তল্লাশির মাধ্যমে (চেকিং) প্রতিদিন বিনা টিকেটের যাত্রীদের কাছ থেকে জরিমানাও করা হচ্ছে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) প্রকৌশলী মো. আবদুল হাই বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত বছর ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে একটি বিরতিহীন ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। একই সাথে এই রেলপথে বড় দুটি ডাবল লাইন প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। তাই নিরাপত্তাসহ নানাবিধ বিষয় চিন্তা করে ট্রেনের যাত্রীদের ট্রেন ভ্রমনের আগ্রহ বেড়েছে। তিনি বলেন, চলমান রেলপথ মন্ত্রনালয়ের অনেকগুলো প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ হলে আরো গতিশীল হবে বলে তিনি জানান। তবে নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন ধরণের প্রশাসনিক মনিটরিং ব্যবস্থা কঠোর হওয়ায় ট্রেনের বিনা টিকিটের যাত্রী নেই। এতে পূর্বাঞ্চলের যাত্রী পরিবহন থেকে আয় অনেক বেড়েছে বলে তিনি জানান। তবে কোন কর্মচারির বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানী, অনিয়মসহ নানাবিধ অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যাত্রী পরিবহন খাত থেকে আয় হয়েছিল ৩৮৬ কোটি ১২ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে যাত্রী পরিবহন খাতে আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৪ দশমিক ২৫ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ৪ কোটি ৫৪ লাখ ১৮ হাজারের বিপরীতে ২০১৬ সালে যাত্রী পরিবহন করেছে সর্বমোট ৪ কোটি ৮২ লাখ ৯০ হাজার জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে যাত্রী বেড়েছে ২৮ লাখ ৭২ হাজার জন এবং বাড়তি রাজস্ব আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
রেলের যাত্রী আয় পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৬ সালের শুরুতে প্রতি মাসে রেলের আয় ছিল ৩০ থেকে ৩৩ কোটির ঘরে। এর পর জুলাই মাস থেকেই আয় বাড়তে থাকে। বছরের প্রথম মাসে ৩৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা আয় করলেও ফেব্রæয়ারিতে আয় কমে দাঁড়ায় ৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। জুন মাসে যাত্রী পরিবহন খাতে আয় হয়েছিল ৩৪ লাখ ৮১ হাজার টাকা। তবে জুলাই মাসে আয় এক লাফে ৩৮ কোটি ২০ লাখে উন্নীত হয়। এরপর আগষ্টে আয় হয় ৪০ কোটি ৪৮ লাখ. সেপ্টেম্বরে ৪২ কোটি ৯ লাখ, অক্টোবরে ৪৪ কোটি ৪৫ লাখ, নভেম্বরে ৪০ কোটি ৪৩ লাখ সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে আয় বছরের সর্বোচ্চ ৫০ কোটি ২৯ লাখ টাকায় পৌঁছে যায়। মূলত বছরের মাঝামাঝিতে নতুন কয়েকটি ট্রেন সার্ভিস চালু এবং পুরোনো ট্রেনে পর্যাপ্ত কোচ সংযোজনের ফলে বছরের শেষার্ধে যাত্রী আয় বেড়ে যায়।
এদিকে যাত্রী পরিবহনের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬ সালে রেলওয়ে সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন করেছে ডিসেম্বর মাসে। ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সর্বনিম্ন ৩৭ লাখ ৫৭ হাজার যাত্রী পরিবহন করলেও ডিসেম্বর মাসে পরিবহন করে ৪৩ লাখ ১১ হাজার যাত্রী। যদিও ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই সর্বনিম্ন ৩২ লাখ ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন হয়েছিল। এছাড়া ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ যাত্রী পরিবহন হয়েছিল ডিসেম্বর মাসে; ৪২ লাখ ৭০ হাজার জন।
রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০১২ সালে যাত্রী ভাড়া বৃদ্ধি এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয় দফায় ভাড়া আবারো বাড়ানো হলে রেলের আয় হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। সম্প্রতি বেশ কিছু কোচ আমদানির ফলে পূর্বাঞ্চলে নতুন কয়েকটি ট্রেন সার্ভিস চালু হয়েছে। পুরোনো ট্রেনে নতুন কোচ সংযোজনের ফলে পুরোনো কোচগুলো অন্যান্য ট্রেনে সংযোজন করায় যাত্রী পরিবহনে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। এ অবস্থায় ইঞ্জিন বাড়ানো গেলে রেলের যাত্রী আয় আরও বাড়বে বলে আশা করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
রেলওয়ে পরিসংখ্যান বুকসের তথ্যমতে, ২০০৪-০৫ অর্থ বছরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সার্বিক আয় ছিল ২২১ কোটি, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ২৩৮ কোটি, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ২৫১ কোটি, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৩১২ কোটি, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৩১৫ কোটি, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩৩৩ কোটি, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৪৪ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩৫৮ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রেলে যাত্রী ভাড়া বাড়ানোর প্রেক্ষিতে আয়ও বেড়ে ৪৯৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। এছাড়া ২০০৪-০৫ অর্থবছরে পূর্বাঞ্চলে যাত্রী পরিবহন সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার। গত ১০ বছরের মধ্যে পূর্বাঞ্চল রেলের যাত্রী পরিবহনের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৬১ হাজারে। মূলত নতুন নতুন ট্রেন সার্ভিস বৃদ্ধির পাশাপাশি রেলের উপর যাত্রীদের আস্থা বাড়ার কারণেই রেলের যাত্রী ও আয় বাড়ছে বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।