আসমানখালী-নান্দবার সড়কে সন্ধ্যারাতে দুর্বৃত্তদের নৃশংসতা : ইলেকট্রিক মিস্ত্রি
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তরিকুল ইসলামের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : এলাকাজুড়ে আতঙ্ক
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:: আলমডাঙ্গার মোচাইনগর গ্রামের ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রাজন ওরফে রাজিবের আর মালেশিয়া যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলোনা। আগামী ২৮ জুলাই ছিল রাজনের মালেশিয়া যাওয়ার দিন। তার আগেই আসমানখালী-নান্দবার সড়কে সন্ধ্যারাতে দুর্বৃত্তের হাতে নৃশংসভাবে খুনের শিকার হতে হয়েছে তাকে। নিহত রাজন একই উপজেলার মোচাইনগর গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী সোনা উল্লার ছেলে। পুলিশ এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে দু’জনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলো- শালিখা গ্রামের খবির সর্দারের ছেলে লিটন ওরফে নায়ক ও মোচাইনগর গ্রামের কাউসারের ছেলে আলমসাধু চালক ফিরোজ। এদিকে, দুইদিনের ব্যবধানে একই উপজেলায় দুইটি খুনের ঘটনায় জনমনে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) তরিকুল ইসলাম জানান, গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে আলমডাঙ্গা উপজেলার আসমানখালী বাজার থেকে আলমসাধুযোগে বাড়ি ফেরার পথে আসমানখালী-নান্দবার সড়কে একদল দুর্বৃত্ত চলন্ত আলমসাধু থামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন করে রাজন ওরফে রাজিবকে। এ ঘটনার পর গাংনী তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ঘটনাস্থল থেকে নিহত রাজনের মরদেহ উদ্ধার করে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ ওই আলমসাধুর চালক ফিরোজ ও অপর আরোহী লিটন ওরফে নায়ককে আটক করে। তিনি আরো বলেন, হত্যাকান্ডের কারণ অনুসন্ধানে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে পুলিশ। অপরাধী যেই হোক তাকে আটক করে বিচারের আওতায় আনা হবে। আলমডাঙ্গা থানর অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ খান জানান, রাজন হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো কোনো মামলা রুজু হয়নি। আজ সোমবার নিয়মিত মামলা হবে। রাজনের লাশ গাংনী তদন্তে কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে তার লাশ পরিবারের কাছে আজ হস্তান্তর করা হবে।
নিহত রাজনের মা মরিয়ম নেছা ও স্ত্রী শাবনুর জানান, রাজন দীর্ঘদিন থেকে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি হিসেবে এলাকায় সুনামের সাথে কাজ করে আসছিল। রাজনের সাথে কারও কোনো বিরোধের কথা কখনো শুনিনি। ভালোই চলছিল আমাদের সংসার। সংসারের আরো উন্নতির জন্যে সে বিদেশ যাওয়ার মনস্থির করে। গত ছ’মাস আগে মালেশিয়া যাওয়ার জন্য আসমানখালী বাজারের রাজু ডাক্তারের কাছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিল রাজন। রাজু ডাক্তার গত কয়েক মাস আগে রাজনের নামে মালেশিয়া যাওয়ার একটি ভিসা ধরিয়ে দেয় এবং বলে খুব শীঘ্রই তোমার ফ্লাইট হবে। কিন্তু ফ্লাইটের তারিখ আর ঠিক হয়নি। রাজু ডাক্তার সর্বশেষ জানায় আগামী ২৮ জুলাই তোমার ফ্লাইট হবে। রাজন এভাবেই দিনের পর দিন তাকে ঘুরাতে থাকে। সর্বশেষ ফ্লাইটের চুড়ান্ত দিন নিতে এবং রাজু ডাক্তারের সাথে সর্বশেষ বোঝাপাড়ার জন্য গতকাল রবিবার বিকাল ৪টার দিকে রাজন আবারো আসমানখালী বাজারে রাজু ডাক্তারের কাছে যায়। এ রাতেই বাড়ি ফেরার পথে সে খুন হয়। রাজনের মা’ আরো অভিযোগ করে বলেন, রাজু ডাক্তারের কারণেই আমার রাজন খুন হয়েছে।
এদিকে রাজনের চাচাতো ভাই আব্দুর রাজ্জাক জানান, রাজনের সাথে আলমসাধুতে চড়ে যাচ্ছিলো লিটন ওরফে নায়ক। সে একজন হিরোখোর। তার বাড়ি শালিখা গ্রামে। সে কি কারণে মোচাইনগরের আলমসাধুতে উঠলো আমার সন্দেহ হয়। এ হত্যাকান্ডের সাথে তার হাত থাকতে পারে।
গ্রামবাসীরা বলেন, রাজন একজন ভাল ছেলে তার বিরুদ্ধে কোনো খারাপ অভিযোগ আমরা পাইনি। আমরা রাজন হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে আটক এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
উল্লেখ্য এই ঘটনার দুইদিন আগে গত শুক্রবার দিনগত রাতে একই উপজেলার বেগুয়ারখাল গ্রামের মাঠে আইলহাঁস লক্ষীপুর গ্রামের বিশ্বাস পাড়ার আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মুদি ব্যবসায়ী হাসিবুলকে (২৫) কে বা কারা নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন আইলহাঁসের মিলনকে আটক করেছে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ।