নিউজ ডেস্ক:
বছর ঘুরে এলো পয়লা বৈশাখ। উৎসবে মেতেছে দেশ। কিন্তু ১৬ বছর আগে এমনই এক দিনে রমনা বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হলেও সাক্ষীর অভাবে ঝুলে আছে বিস্ফোরক আইনের অপর মামলাটি। দফায় দফায় সমন জারির পরও সাক্ষীর হাজির করতে পারছে না পুলিশ। অনেকটাই থমকে আছে মামলার বিচারকাজ।
ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের দুটি মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। ২০১৪ সালে হত্যা মামলার রায় হলেও বিস্ফোরক আইনের মামলাটি এখনো বিচারাধীন।
ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. শাহেদ নুরুদ্দিনের আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার বিচারে কোনো অগ্রগতি নেই। ২০০৯ সালে মামলায় ৮ জন সাক্ষ্য দিলেও মাঝে প্রায় ৪ বছর মামলাটির বিচার স্থগিত ছিল। হত্যা মামলার রায়ের পর ২০১৪ সালে মামলাটির বিচার পুনরায় শুরু হলে এ পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।
বিচারাধীন বিস্ফোরক আইনের মামলাটি সম্পর্কে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, সাক্ষীর অবহেলায় মূলত এ মামলার বিচার কাজ এগোচ্ছে না। সাক্ষীদের প্রতি আদালত থেকে সমন ও ওয়ারেন্ট পাঠানো হচ্ছে। তবুও তাদের আদালতে হাজির করতে পারছে না পুলিশ। গত বছর পর্যন্ত মাত্র এ মামলায় ৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছিল। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এ মামলার এক অন্যতম আসামি জঙ্গি মুফতি আবদুল হান্নান। তিনি শুধু এ মামলারই আসামি নয়, অনেকগুলো মামলার আসামি। এজন্য আদালত তাকে সময়মতো পায়নি। এতে অনেক সময় নষ্ট হয়েছে। তবে আগের চেয়ে সাক্ষীর হাজিরা বেড়েছে। শিগগিরই মামলার বিচার শেষ হবে।
সম্প্রতি ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলায় তিনজন নিহতের মামলায় গত ১২ এপ্রিল মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউর আবু আবদুল্লাহ ভূঞা বলেন, ‘চার্জশিট হওয়ার পর বিস্ফোরক আইনের মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল এক এবং হত্যা মামলাটি তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। দুটি মামলা যেহেতু একই ঘটনার, তাই ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মামলা দুটি একই ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে চিঠি পাঠান। কিন্তু রেজিস্ট্রারের দফতর থেকে ৪ বছর কোন নির্দেশনা না আসায় বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার স্থগিত ছিল। তবে হত্যা মামলায় রায় হয়ে যাওয়ায় তারা বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার শুরু করেছেন। কিন্তু সাক্ষী না আসায় বিচারে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। তবে সাক্ষী হাজির করতে আদালত থেকে সমন এবং ওয়ারেন্ট পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু সাক্ষীরা আসছে না। সাক্ষী হাজিরের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিনাবিচারে কারাগারে থাকা কারও জন্যই কাম্য নয়। সাক্ষী হাজিরের দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু পুলিশ তা না করে দায়িত্বে অবহেলা করছে। মামলাটিতে বিচারের নামে প্রহসন চলছে।
২০০১ সালের পয়লা বৈশাখের দিন ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের ঘটনাস্থলে দুটি বোমা পুঁতে রাখা হয় এবং পরে রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে তা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং এর ১০-১৫ মিনিট পর আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সাতজন প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসাধীন মারা যান। এ ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।
দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ আটজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডাপ্রাপ্তরা হলেন, মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো: তাজউদ্দিন, মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান, ও মুফতি আব্দুল হাই
যাবজ্জীবনদণ্ডাপ্রাপ্তরা হলেন, শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আ. রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।
এদের মধ্যে প্রাক্তন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ চার আসামি এখনো পলাতক।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল ১ বৈশাখ ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান চলাকালে জঙ্গিদের বোমা হামলায় ১০ জন নিহত হন।
নিহতরা হলেন, চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ উপজেলার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনার উপজেলার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালির সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে শ্যামলী পরিবহনের অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালির বাউফল উপজেলার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর এক জন অজ্ঞাত পুরুষ ব্যক্তি।