নিউজ ডেস্ক:
শরীয়তপুরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার আসামি বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা আরিফ হোসেনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার বিকালে মোবাইল ফোনের ট্যাকিং করে তার অবস্থান শনাক্তের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপরই চারদিকে আলোচনা হচ্ছে ৬ নারীকে ধর্ষণের করার আগে কেন তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ, মামলা কিংবা গ্রেফতার করা হলো না তাকে। আবার কীভাবে বা কোন কৌশলে তিনি নিজেকে নিরাপদ অবস্থানে রেখেছিলেন ধর্ষক আরিফ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুবই ধূর্ত প্রকৃতির মানুষ আরিফ। তিনি সরাসরি কাউকে ধর্ষণ করতেন না। নারীদেরকে ধর্ষিতা হতে বাধ্য করতেন। এজন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করতেন আরিফ। গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা বসিয়ে দৃশ্য ধারণ, কখনো অন্য উপায়ে নারীদের দুর্বল জায়গা খুঁজে বের করতেন আরিফ। এরপর সেই ভিডিও দেখিয়ে বা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে তার কাছে ধরা দিতে বাধ্য করতেন। সেই দৃশ্য আবার ভিডিও করে রাখতেন। শুধু এখানেই থেকে থাকেননি আরিফ। পরবর্তীতে ধর্ষণের সেই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ব্লাকমেইল করতেন। হাতিয়ে নিতেন অর্থ। লোকলজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি, আইনের আশ্রয়ও নেননি। তবে ধর্ষিতা নারীরা ওই ঘটনার প্রকাশ না করার জন্য তার নানা আবদার পূরণ করলে শেষ রক্ষা হয়নি। সেই ভিডিও মোবাইলে মোবাইলে সেটা ছড়িয়ে দেয়।
জানা গেছে, গোসলখানায় গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে প্রথমে এক গৃহবধূর ভিডিও ধারণ করার পর সেই ভিডিও দেখিয়ে তাকে ধর্ষণ করে। এবং গোপনে সেই ধর্ষণেরও ভিডিও ধারণ করে। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে সেই ভিডিও ছড়িতে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের অর্থ আদায় হাতিয়ে নেয়। এভাবে ফাঁদে ফেলে ৬ নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১৫ অক্টোবর থেকে ধর্ষণের ভিডিওগুলো গ্রামের মানুষের মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।
মঙ্গলবার শরীয়তপুরের নারায়নপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সেই সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন হাওলাদারেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার খন্দার খায়রুল হাসান তাকে আটক করেছেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে গোসাইরহাট উপজেলার সইক্কা ব্রিজ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়।
এসএসপি খন্দার খায়রুল হাসান বলেন, আরিফ চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ থেকে ট্রলারযোগে গোসাইরহাট আসতে ছিল। সে তার বাবা ও মামার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করছিল। ওই ফোনের কল ট্রাকিং করে তার অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। পদ্মা ও মেঘনা নদী পার হয়ে জয়ন্তিয়া নদীতে ট্রলার প্রবেশ করলে তাকে পুলিশ ঘেরাও দিয়ে আটক করে। তাকে ভেদরগঞ্জ থানায় নেয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারগারে পাঠানো হবে বলেও তিনি জানান।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আরিফ হোসেন হাওলাদার। সে ফেরাঙ্গিকান্দি গ্রামের মিন্টু হাওলাদারের ছেলে। স্থানীয় একটি কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। ফাঁদে ফেলে ছয় নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। গত ১৫ অক্টেবর ছয় নারীকে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ও ছবি মানুষের হাতে ছড়িয়ে পরে। ১৭ অক্টোবর থেকে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেন। অভিযোগ পেয়ে ১৯ অক্টোবর ভেদরগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ আরিফকে বহিষ্কার করে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় ১১ নভেম্বর জেলা ছাত্রলীগ আরিফকে স্থায়ী ভাবে বহিষ্কার করে। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ভুক্তভোগী এক নারী তার বিরুদ্ধে ভেদরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলাটি করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন