নিউজ ডেস্ক:
মোজাম্বিক ও জিম্বাবুয়েতে সাইক্লোনের আঘাতে মৃতের সংখ্যা মঙ্গলবার ৩শ’ ছাড়িয়েছে। উদ্ধার ও ত্রাণকর্মীরা দুর্গতদের সহায়তার জন্য রাতদিন আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্ট ফিলিপ নিউসি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতে ২শ’র বেশি মৃতের খবর জানতে পেরেছি। এছাড়াও এতে এখনো প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার লোক মারাত্মক ঝুঁকিতে রয়েছে।’
জিম্বাবুয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঝড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ১শ লোক মারা গেছে। মৃতের সংখ্যা তিন গুণ বাড়তে পারে।
এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ঝড় আঘাত হেনেছে। এতে মালাওইতেও মানবিক বিপর্যয় ডেকে এনেছে। সেখানে প্রায় ১০ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৮০ হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
গ্রীষ্মম-লীয় ঝড় সাইক্লোন ইদাইয়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মোজাম্বিকের মধ্যাঞ্চলে বন্যায় বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জরুরি উদ্ধারকারী দল নৌযান ও হেলিকপ্টারে করে মানুষকে বাড়ির ছাদ ও গাছের ডাল থেকে উদ্ধার করছে।
মোজাম্বিক ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিমান বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমে পড়েছে।
এনজিও সংস্থা রেসকিউ সাউথ আফ্রিকা জানিয়েছে, তিনটি হেলিকপ্টারের সাহায্যে শুক্রবার রাত থেকে তারা ৩৪ জনকে উদ্ধার করেছে।
রেসকিউ এসএ’র আবরিয়া সেনেকাল বলেন, ‘আটকা পড়া মানুষকে উদ্ধারে এটাই একমাত্র উপায়।’
তিনি জানান, এনজিওটি আরো হেলিকপ্টার ভাড়া করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইয়ান স্কের বলেন, হেলিকপ্টার দলের সদস্যদের কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
তিনি রেসকিউ এসএ’র প্রধান।
তিনি আরো বলেন, ‘কখনো আমাদের পাঁচটি হেলিকপ্টারের মধ্যে মাত্র দুটি মাটিতে থাকে। কখনো কখনো আমরা আকাশ থেকে দুর্গত এলাকায় খাবারের প্যাকেট নিক্ষেপ করি এবং আরো বিপদে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে যাই।’
ইয়ান বলেন, ‘আমরা শুধু সাধ্যমত চেষ্টা চালিয়ে কিছু মানুষকে বাঁচাতে পরব, অন্যান্যরা মারা যাবে।’
নামাতান্ডায় ২৭ বছর বয়সী জোসে বাতিও, তার স্ত্রী ও সন্তানরা ছাদে উঠে নিজেদের প্রাণ রক্ষা করেছেন।
এটি বেইরা থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তরপশ্চিমে অবস্থিত।
তিনি বলেন, তারা প্রাণ রক্ষা পেলেও তাদের অনেক প্রতিবেশি বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছেন।
জোসে আরো বলেন, ‘সুনামির মতো পানি আঘাত হেনে প্রায় সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। আমরা ছাদে বন্দি হয়ে পড়েছিলাম।’
তাদেরকে নৌযানে করে উদ্ধার করা হয়।
ঝড়ের আঘাতের পরপরই মোজাম্বিকের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী ও প্রধান বন্দর বেইরার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
রেডক্রস জানিয়েছে, সাইক্লোনে নগরীটির ৯০ শতাংশ ক্ষতি বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখানে ৫ লাখ লোকের বাস।
বিধ্বস্ত শহরটিতে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকের পর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নিউসি বলেন, এই ঝড়ের আঘাতে ২০২ জন নিশ্চিতভাবে মারা গেছেন এবং প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার জন্য ঝুঁকিতে আছেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার জরুরি অবস্থা ও তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করছে।
নিউসি বলেন, ‘আমরা মারাত্মক সংকটের মধ্যে রয়েছি।’
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আসন্ন দিনগুলোতে প্রায় ৮ মিটার দীর্ঘ ঢেউ আঘাত হানতে পারে।
সোমবার নিউসি ১ সহ¯্রাধিক মানুষ মারা গেছে ও ১ লক্ষাধিক মানুষ বিপদের মধ্যে রয়েছে বলে আশঙ্কা করেছিলেন।
এদিকে জিম্বাবুয়ের পূর্বাঞ্চলে ঝড়ের আঘাতে প্রায় ১শ লোক মারা গেছে। এই মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩শ’তে দাঁড়াতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ ব্রিফিং শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জুলাই মোয়ো বলেন, জিম্বাবুয়ের পূর্বাঞ্চলে এই ঝড়ের আঘাতে প্রায় ১শ লোক মারা গেছে। এই সংখ্যা বেড়ে ৩শ’তে দাঁড়াতে পারে।
কর্মকর্তারা বলেন, অন্তত আরো ২১৭ জন নিখোঁজ ও ৪৪ জন অসহায় অবস্থায় আটকা পড়েছে।
মোজাম্বিক সীমান্তবর্তী পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ম্যানিকাল্যান্ডের চিমানিমানি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এএফপি’র এক প্রতিনিধি জানান, সোমবার পরিবারের সদস্যরা মৃতদের দাফন করতে শুরু করেছে। আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
চিমানিমানির কাছে সবচেয়ে বড় শহর মুতারেতে সামরিক হেলিকপ্টারে করে মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে।
ঝড়টি বাড়িঘর ও সেতু উড়িয়ে নিয়ে গেছে। এছাড়াও এটি বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী রের্যান্স শিরি বলেন, ‘ঝড়ের পর ধ্বংসযজ্ঞ দেখে মনে হচ্ছে এখানে বড় ধরনের যুদ্ধ হয়েছিল।’
এদিকে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) জানিয়েছে, তারা প্রায় ৬ লাখ মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা যোগাড় করছে।