চুয়াডাঙ্গায় ছাদ থেকে যুবককে ফেলে দেওয়া ও মেয়র জিপু চৌধুরীর শ্বশুর বাড়ীতে হামলার ঘটনার জের
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের ছাদ থেকে যুবককে ফেলে দেয়া ও পৌর মেয়র জিপু চৌধুরীর শ্বশুর বাড়ীতে হামলা ভাঙচুরের ঘটনার জের ধরে আবারো হামলার ঘটনা ঘটেছে, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গোটা শহর। গত ১০ জানুয়ারি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে এক ছাত্রলীগ নেতাকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয় প্রতিপক্ষ। এই ঘটনায় রেশ ধরে গত ২২ জানুয়ারী মঙ্গলবার ওই ছাত্রলীগ নেতা দলবল নিয়ে চুয়াডাঙ্গা শহরের সমবায় নিউ মার্কেটের ছাদ থেকে এক যুবককে ফেলে দিয়ে আহত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার কিছু পরে আহত ওই যুবক দলবল নিয়ে দৌলাতদিয়াড়স্থ পৌর মেয়র জিপু চৌধুরীর শ্বশুরবাড়ীতে হামলা ও ব্যাপক ভাঙ্চুর চালায়। এ নিয়ে ওই দিন রাতে ও পরের দিন দু’পক্ষই থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করে। এর মধ্যে পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান জিপুর শ্বশুর আব্দুল হালিম বাদি হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৩/৪জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করলে তাৎক্ষণিক দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার আজগার আলীর ছেলে আরমান হোসেন আশা (২২) ও একই এলাকার পিরু মন্ডলের ছেলে আব্দুল মজিদ (৪০) কে আটক করে পুলিশ। পরদিন আটক দু’জনকে আদালতে হাজির করা হলে অন্যান্য আসামীরাও আত্মসমর্পণ করে জামিন পায়। এরপর দু’পক্ষের মধ্যে মনে মনে ক্ষোভ থাকলেও শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বেশ শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছিল। কিন্তু হঠাৎ গতকাল সন্ধ্যায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনার সূত্রপাতে ফের গোটা শহর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বিকালে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সিএন্ডবিপাড়াস্থ পৌর মেয়র জিপু চৌধুরীর বাসভবন থেকে অটোযোগে মেয়র পতœী সুইটি চৌধুরী তার ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে দৌলাতদিয়াড়ের পিতার বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শহরের চৌরাস্তার মোড় সংলগ্ন মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিকট পৌছালে কয়েকজন যুবক তাদের অটোর পিছু নেয় এবং বিভিন্ন ভাষায় অশালীন কটুক্তি করতে থাকে। সেখান থেকে মেয়র পতœী ও তার ছোট ভাই নিজ বাড়িতে পৌছানোর পূর্বে আরও বেশ কয়েকজন যুবক ধারালো চাপাতি হাতে তাদের গতিরোধ করে বলে অভিযোগে জানা গেছে। এতে মেয়র পতœী ও তার ছোট ভাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলে পালিয়ে যায় যুবকদল। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর মেয়র পতœীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ ও অশালীন কটুক্তির ক্ষোভে চুয়াডাঙ্গা দৌলতদিয়াড় সর্দারপাড়ার জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে মিরাজ (১৯) ও দৌলতদিয়াড় চুনরিপাড়ার বাবুল হোসেনের ছেলে বশির (২০) কে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে মিরাজের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই তাকে ঢাকায় রেফার্ড করে কর্তব্যরত চিকিৎসক। এই ঘটনায় আহতরা হামলাকারী বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেছে বলে জানা গেছে। আহতরা জানিয়েছে, তাদের উপর হামলাকারি সবাই পৌর মেয়র জিপু চৌধুরীর লোকজন।
এলাকাবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গত ২২ জানুয়ারি রাতে চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ইমন গার্মেন্টসের সামনে থেকে রাশেদ নামের এক যুবককে মারধর ও পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান জিপুর শ্বশুর বাড়িতে হামলার ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় বাদি হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৩/৪জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেন মেয়র ওবাইদুর রহমান জিপুর শ্বশুর। এই মামলার আসামী মিরাজ গত বৃহস্পতিবার জামিনে জেল থেকে বের হয়। পরে গতকাল সন্ধ্যার দিকে মিরাজ দৌলাতদিয়াড়ে প্রকাশ্যে বাদিপক্ষের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরই জের ধরে কিছুক্ষন পর পাল্টা জবাবে দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার একটি কেরাম বোর্ডের দোকানে বাদিপক্ষের লোকজন অভিযুক্ত মিরাজসহ তার বন্ধু বশিরকে কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয়রা দুই যুবককে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাফিজুর রহমান মাফি এ প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল পৌর মেয়র জিপু চৌধুরীর সহধর্মীনি সুইটি চৌধুরী ও তার শ্যালক জনি একটি অটোযোগে নিজ বাড়ি দৌলাতদিয়াড়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় মাথাভাঙ্গা ব্রিজের নিকট থেকে মোমিন, মিরাজ ও রানাসহ কয়েকজন পিছু নেই অটোর। পরে তারা নিজ বাড়িতে পৌছানোর পূর্বে কয়েকজন যুবক ধারালো চাপাতি দিয়ে গতিরোধ করে। এতে তারা দু’জন চিৎকার চেচামেচি করলে তারা পালিয়ে যায়। এ ঘটনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খবর পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জানিফ, আমিসহ কয়েকজন দেখতে দৌলাতদিয়াড়ে যায়। এ সময় ২০/৩০ জন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদেরকে গতিরোধ করে। এতে উভয়পক্ষের সামান্য বাকবিতন্ডা হয়েছে।
এবিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) বলেন, ‘পৌর মেয়র ওবায়দুর রহমান জিপুর শ্বশুর বাড়িতে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই যুবককে কোপানোর ঘটনা শুনেছি। তবে আমরা এখনো কোন অভিযোগ পায়নি।’ অভিযোগ পেলে ঘটনার তদন্ত পূর্বক দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কর্তব্যরত চিকিৎসক বলেন, ‘বশিরের অবস্থা শঙ্কামুক্ত। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসকা দেয়া হয়েছে। তবে মিরাজের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তার বাম পায়ে ও কোমরসহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কোপের আঘাত রয়েছে। উন্নত চিকিৎস্বার্থে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়েছে।’