নিউজ ডেস্ক:
মেহেরপুরে গমে এবারও ব্লাস্ট ছত্রাকের আক্রমণ হয়েছে। এতে খেতের গমের শীষ শুকিয়ে যাচ্ছে।
ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রান্ত খেত পরিদর্শন করেছেন কৃষি বিভাগ ও গম গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা। গত বছর মেহেরপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় প্রথম ব্লাস্টের সংক্রমণ দেখা দেয়।
গত রোববার দুপুরে মেহেরপুরের সদর উপজেলার গোভিপুর মাঠের একটি গম খেত পরিদর্শন করেন কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গম খেতের ব্লাস্ট ছত্রাক আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তারা। আক্রান্ত খেতের গম শীষ থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে। পরে নিচের দিকে শুকিয়ে যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো শীষ পুরোটাই সাদা হয়ে গেছে। এ অবস্থায় শীষের মধ্যে গম থাকছে না। ব্লাস্ট আক্রান্ত খেতে কোনো ফসল পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান কৃষি বিজ্ঞানিরা।
পরিদর্শক দলের প্রধান দিনাজপুর গম গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক নরেশ চন্দ্র দেব বর্মা বলেন, ব্লাস্ট আক্রান্ত গমের বীজ বপন করা এবং আগাম গম আবাদকৃত খেত ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছে। গত বছর যেহেতু এ এলাকা ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছিল, তাই এর জীবাণু বীজ ও ঘাসের মধ্যে সুপ্ত ছিল। এবার গম আবাদ করায় তা ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি মৌসুমে যদি গম আবাদ না করা হতো, তাহলে ব্লাস্ট দূর করা সম্ভব হতো।
গম চাষিরা কৃষি অফিসের পরামর্শ না মেনে আবাদ করায় আক্রান্ত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভালো বীজ, বীজ শোধন ও প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা তা মেনে চলেননি। এখনো যেসব খেত আক্রান্ত হয়নি সেখানে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ব্লাস্ট আক্রান্ত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরিদর্শন দলের সদস্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক উদ্ভিদ সংরক্ষণ গোলাম মারুফ বলেন, গত বছর দেরিতে ব্লাস্ট আক্রমণ হওয়ায় প্রতিকার করা যায়নি। এবার শীষ বের হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত হওয়ায় প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করা হবে। পরপর দু’ বছর গম আবাদ না করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই তা মানেননি।
তিনি জানান, ব্লাস্ট দূর করার জন্য কৃষি গবেষকরা চেষ্টা করছেন। আগামী বছরের মধ্যে বারি গম ৩০ নামের একটি জাত চাষের জন্য অবমুক্ত করা হবে। এ জাত ব্লাস্ট প্রতিরোধী। পাশাপাশি চাষিদের কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানালেন এ কর্মকর্তা।
গত মৌসুমে মেহেরপুর জেলায় ১৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছিল। এর মধ্যে বেশিরভাগ খেতের গম ব্লাস্ট আক্রান্ত হয়েছিল। কৃষি অফিসের পরামর্শে চাষিরা খেত থেকেই বেশিরভাগ গম পুড়িয়ে ফেলেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস এম মোস্তাফিজুর রহমান জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে এবার গম আবাদ কম হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার তিনটি উপজেলায় ৩ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে গম আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে গত রোববার পর্যন্ত ৫ হেক্টর জমি ব্লাস্ট আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আক্রান্ত হয়নি এমন খেতে এক সপ্তাহ পরপর ছত্রাকনাশক স্প্রে করে শীষ ভিজিয়ে দিতে পারলে ব্লাস্ট আক্রান্ত নাও হতে পারে। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের গম চাষি পারভেজ আহম্মেদ সবুজ জানান, তার খেতের পাশের খেতে আক্রান্ত হয়েছে। এ জন্য তিনি স্প্রে করছেন। তবে গত বছরের মতো আবারও ব্লাস্টে সব গম বিনষ্ট হয়ে যাবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন।