নিউজ ডেস্ক:
গত কয়েক বছরে মুদ্রাপাচার অনেক বেড়ে গেছে। এর বড় প্রমাণ প্রায় ৭০ শতাংশ রেমিট্যান্স কম আসছে। আর মুদ্রাপাচার রোধে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগের দাবি জানিয়েছে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)।
গতকাল বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সম্মেলন কক্ষে ইআরএফের সঙ্গে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সংগঠনের বিভিন্ন বক্তা এসব কথা বলেন।
ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, গত কয়েক বছরে মুদ্রাপাচার অনেক বেড়ে গেছে। এর বড় প্রমাণ হলো রেমিট্যান্সে ভাটা। প্রায় ৭০ শতাংশ রেমিট্যান্স কম আসছে। যেখানে প্রতিবছর রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ছিল। এর অর্থ হলো, হুন্ডি, ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং বেড়ে গেছে। এনবিআর বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে।
তিনি বলেন, ‘দেশ ও দেশের বাইরে গিয়ে যেখান থেকে কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য আমদানি হয় সেখানে গিয়ে হলেও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। কীভাবে এ মুদ্রা পাচার হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। মুদ্রাপাচার অব্যাহত থাকলে যতই চেষ্টা করা হোক না কেন কোনো সুফল জাতি পাবে না। সেদিকে মনোযোগ দেওয়ার সময় এসেছে।
ইআরএফের প্রাক্তন সভাপতি সুলতান মাহমুদ বাদল বলেন, দেশ থেকে টাকা যারা বিদেশে নিয়ে গেছেন তাদের নাম ও কে কত টাকা নিয়ে গেছেন তা এনবিআরের প্রকাশ করা উচিত। সেই সঙ্গে কত টাকা রাজস্ব দিয়েছেন এবং দেশের রাজস্ব খাতে তাদের অবদান কত- এ তথ্যও প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি দেশে কর দেওয়ার যোগ্য কতজন আছেন এবং কতজন কর দেয় তারও জরিপ করা না হয়ে থাকলে তা করা উচিত।
ডিআরইউ প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, অবৈধ অর্থ উপার্জন ও কর ফাঁকির পথ বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে ঘুষের টাকা লেনদেন হয়। যিনি বৈধভাবে আয় করেন এবং কর দেন, তিনি বিভিন্নভাবে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী ও কর ফাঁকিবাজ থেকে পিছিয়ে পড়ছেন। অবৈধ অর্থ উপার্জনের পথ বন্ধ করতে না পারলে, যারা কর দেন তারাও কর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ খুঁজবেন।
পুঁজিবাজার বিষয়ে জিয়াউর রহমান আরো বলেন, পুঁজিবাজারকে কাজে লাগাতে হবে। আমরা প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের বৃত্ত থেকে বের হতে পারছি না। এ বৃত্তের বাইরে নিয়ে যেতে পারে পুঁজিবাজার। এটি হতে পারে রাজস্ব আহরণের একটি বড় জায়গা। সাধারণত কোনো কোম্পানি পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হলে এনবিআর ১০ শতাংশ ট্যাক্স রিবেট দেয়। এ রিবেট বাড়ানো যায় কি-না তা এনবিআর খতিয়ে দেখতে পারে।
তিনি বলেন, আর যারা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার যোগ্য, কিন্তু পুঁজিবাজারে আসছে না তাদের জরিমানা হিসেবে কিছু অতিরিক্ত কর ধার্য করা যায় কি-না এনবিআর সেটাও দেখতে পারে। এই অতিরিক্ত কর হতে পারে ৫ বা ১০ শতাংশ।
জিয়াউর রহমান বলেন, সব সময় প্রণোদনা দিতে হয় না। একটি কোম্পানি যেহেতু ডিএসইসহ সবার নজরে থাকে, সেহেতু করফাঁকি দেওয়া কঠিন হয়ে যায়। জরিমানা করেও যদি তালিকাভুক্ত করতে বাধ্য করা যায়, তবে ট্যাক্স বেড়ে যাবে। ৩০ বা ৫০ কোটি টাকার একটি কোম্পানি যখন তালিকাভুক্ত হয়, তখন তার মার্কেট ন্যূনতম দ্বিগুণ হয়ে যায়। লেনদেন হলেও তো অগ্রিম ট্যাক্স পাওয়া যায়। সেদিকে এনবিআর নজর দিতে পারে।
পুঁজিবাজারে ডাবল ট্যাক্সসেশন সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি কোম্পানি আয়ের ওপর করপোরেট ট্যাক্স দেয়। লভ্যাংশ দিলে তার ওপর অ্যাড সোর্স ট্যাক্স কাটা হয়। এটা ডাবল ট্যাক্সসেশন হচ্ছে। তবে আপত্তি নেই যদি লভ্যাংশের অ্যাড সোর্স ট্যাক্স ফাইনাল সেটেলমেন্ট হয়ে যায়। পুঁজিবাজারকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে রেভিনিউ কীভাবে বাড়ানো যায় সেদিকে এনবিআর নজর দিতে পারে।
ই-টিআইএন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার জন্য এনবিআরকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এনবিআর সারাদেশে রাজস্ববান্ধব সংস্কৃতি গড়ে তোলা, কর দেওয়া যে ভয়ের কিছু না সেটার সংস্কৃতি তৈরি করেছে। ভ্যাট অনলাইন নিবন্ধন সুন্দরভাবে শুরু হয়েছে।
সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম বলেন, সিগারেট, তামাক, জর্দা, গুলসহ মানবদেহেরে জন্য ক্ষতিকর পণ্যের ব্যবহার কমানো এবং এ খাত থেকে যত বেশি রাজস্ব আদায় করা যায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে তামাকজাত পণ্যের স্লাব পুনর্বিন্যাস করার বিষয়টি বেবেচনা করা উচিত।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, আপনাদের মতামতগুলো আমরা বিবেচনা করব। এনবিআরের এখন লক্ষ্য তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা। এটুআই ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের মাধ্যমে তরুণদের সঙ্গে পার্টনারশিপ গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, তরুণদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তারা ডোর টু ডোর গিয়ে জনগণকে কর বিষয়ে সচেতন করবে। সারাদেশে রাজস্ব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। মানুষ আগ্রহী হয়ে কর দিচ্ছেন। ই-টিআইএন ২৮ লাখে ইতোমধ্যে উন্নীত হয়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রম আর অব্যাহত সহযোগিতার ফলে।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ইআরএফ সভাপতি সাইফ ইসলাম দিলাল, জাতীয় প্রেসক্লাবের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী ও মানবকণ্ঠের বিজনেস এডিটর শাহনেওয়াজ খান প্রমুখ।