মাদক পাচারে বাড়ছে নারী কারবারির সম্পৃক্ততা
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪টি উপজেলার মধ্যে তিনটি উপজেলাই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা। এই সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে নানা পেশাজীবীর মানুষের বাস। এর মধ্যে দামুড়হুদা উপজেলার পৌর শহর দর্শনাসহ চুয়াডাঙ্গা সদরের কয়েকটি সীমান্তবর্তী গ্রামে মাদক, চোরাচালান ও বিভিন্ন অবৈধ কাজে এক শ্রেণির মানুষের উৎসাহ বেশ লক্ষণীয়। কারণ, এসব ব্যবসায় অল্প বিনিয়োগে অধিক টাকা আয় করা যায়। তাই মাদক পাচারের হোতাদের প্ররোচনা ও দ্রুত অর্থ আয়ের প্রলোভনে মাদক ব্যবসায় এলাকার দরিদ্র মানুষের একাংশ সহজেই জড়িয়ে পড়েন। মাদকের গডফাদারেরা তাঁদের এই সর্বনাশা মাদকের কারবার নিরাপদ রাখতে ক্ষমতাসীনদেরকে ছাতা হিসেবে ব্যবহার করেন। এঁরাই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যতার সুযোগ নিয়ে এদের আর্থিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখান, আবার কখনো অভাবের সংসারে মোটা অঙ্কের অর্থ ধার বা চড়া সুদের বিনিময়ে ঋণের বোঝা তাদের মাথায় চাপিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করেন। একবার তাঁদের ফাঁদে পড়লেই সেই জাল কেটে বেরোনো প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে এ দরিদ্র মানুষগুলোর। এই হোতাদের কথা মতো না চললে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোরও ভয়-ভীতি দেখানো হয়। অনেকদিন আগে থেকেই মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষিত হয়েছে। সমাজকে মাদকমুক্ত করতে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মাদকবিরোধী অভিযানে আলোচিত বেশ কিছু মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহতও হয়েছেন। তবুও মাদক পাচার বন্ধে আশানুরূপ ফলাফল দৃশ্যমান হয়নি। নানা সময়ের অভিযানে মাদকের সহজপ্রাপ্যতা কমানো গেলেও তা একেবারে দুঃপ্রাপ্য নয়। তথ্য সূত্র থেকে জানা যায়, ধারাবাহিক মাদকবিরোধী অভিযানে দর্শনা পৌর এলাকা ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের আলোচিত ৭ মাদক ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে এবং মাদক ব্যবসায়ীর দুই পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন। দামুড়হুদা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোবিন্দহুদা গ্রামের মাঠে মাদক ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষের বন্দুকযুদ্ধে নিহত গুলিবিদ্ধ দুই লাশের মধ্যে একজন হলেন দর্শনা পৌর এলাকার ঈশ্বচন্দ্রপুর গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী ঝন্টু (৩৮)। এ ছাড়া জীবননগর উপজেলার উথলী মোল্লাবাড়ি সন্নাসীতলা দিয়ে একটি মাদকের চালান নেওয়ার সময় জীবননগর উপজেলার উথলী ইউনিয়নের উথলী গ্রামের আমতলা পাড়ার মহাসিন আলীর ছেলে জুনাব আলী (২৫) পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। বেগমপুর ইউনিয়নের উজলপুর খড়কুড়োর মাঠে আকন্দবাড়িয়া গ্রামের মাঝপাড়ার বজলুর রহমানের ছেলে আবুল বাশার ওরফে পাপ্পু খোড়া (৪২) ও দর্শনা পৌর এলাকার শান্তি নগরের বাচ্চু মিয়ার ছেলে আলোচিত মাদক ব্যবসায়ী হৃদয় (২২) পরানপুর বেলে মাঠে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ ছাড়া পুলিশের ত্রিমুখী বন্দুকযুদ্ধে দর্শনা দক্ষিণ চাদঁপুর গ্রামের মাঝপাড়ার আবু বক্করের ছেলে রোকন (২৫) নিহত হয় এবং দর্শনা বাসস্ট্যান্ডপাড়ার আলী আহম্মদের ছেলে স্বপন (৩৫) গাজীপুরে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়। এসব ধারাবাহিক বন্দুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারের ঘটনার পর মাদক ব্যবসায়ীরা তাঁদের কৌশল পরিবর্তন করেছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্য এখন নারী। বেশির ভাগই বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা এবং যাঁদের স্বামীর কোনো আয় নেই, এরকম নারীদের বিভিন্ন কলা-কৌশলে মাদক ব্যবসায় জড়াচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি লক্ষ করা গেছে, নারী মাদক ব্যবসায়ীরা মাদকসহ পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, জিআরপি পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার হচ্ছেন নিয়মিত। দামুড়হুদা থানা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বেশ কয়েকটি এলাকায় তথ্য নিয়ে জানা গেছে, প্রায় অর্ধশতাধিক নারী মাদক ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে। কেউ হোতাদের নিয়োগকৃত হিসেবে কাজ করছেন আবার কেউ কাজ করতে করতে নিজেরাই এসব অবৈধ ব্যবসার মালিক বনে গেছেন। এসব নারী মাদক ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকবার প্রশাসনের বিভিন্ন সংস্থার কাছে মাদকসহ আটক হওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে আবারও মাদক ব্যবসায় জড়িয়েছেন আর কেউ কেউ কারাগারেই রয়েছেন। এসব নারী মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়া গ্রামের রবিউল হোসেনের স্ত্রী রশিদা খাতুন ও তাঁর বোন রহমানের স্ত্রী রহিমা খাতুন, একই গ্রামের আব্দুলের স্ত্রী ছোটবুড়ি, রনির স্ত্রী লালবানু খাতুন, জনির স্ত্রী আকলিমা খাতুন, লালুর স্ত্রী হামিদা বেগম, ইকরামুলের দুই স্ত্রী পারভীনা আক্তার ও রীনা খাতুন, আজিবারের স্ত্রী শাহানারা খাতুন, দর্শনা পৌর এলাকার মোহাম্মদপুরের রনি ড্রাইভারের স্ত্রী আলোচিত মাদক ব্যাবসায়ী বিউটি খাতুন, দর্শনা পাঠানপাড়ার রফিকুলের স্ত্রী জোছনা খাতুন, দক্ষিণ চাঁদপুর গ্রামের পাঞ্জাব কানার স্ত্রী নাছে খাতুন, একই এলাকার আমীরের স্ত্রী রাশিদা খাতুন, ছোটর স্ত্রী ভেদা, কাজলের স্ত্রী মুন্নি খাতুন, ঈশ্বচন্দ্রপুর গ্রামের শানিরুলের স্ত্রী আলেয়া, একই গ্রামের মসজিদপাড়ার আকলিমা, আজিমপুরের সোহাগের স্ত্রী খাতুনসহ অনেকে। এদিকে, পুলিশ সূত্রে পাওয়া কয়েক মাসের মধ্যে আটক নারী ব্যবসায়ীরা হলেন দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশের কাছে ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ দর্শনা শ্যামপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের স্ত্রী খাতুন, আকন্দবাড়িয়া নতুনপাড়া থেকে ডিবি পুলিশের হাতে ৬ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক সোহরাব হোসেনের মেয়ে লাবলী খাতুন, জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের অভিযানে আটক আকন্দবাড়িয়া গ্রামের রবিউল হোসেনের বাড়ি থেকে ১৫ বোতল ফেনসিডিলসহ রহিমা খাতুন, একই অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দোস্ত গ্রাম থেকে ৮০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক মাদক ব্যাবসায়ী তাহমিনা, আকন্দবাড়ীয়া বিলের ধার পাড়ায় ১২ বোতল ফেনসিডিলসহ আটক আজিবারের স্ত্রী শাহানারা। এ ছাড়া র্যাবের অভিযানে ঝিনাইদাহ আরাপপুর থেকে আকন্দবাড়িয়া গ্রামের রাজিবুলের মেয়ে শিউলি থাতুন ও একই এলাকার রজব আলীর মেয়েকে ৭০ বোতল ফেনসিডিলসহ এবং দামুড়হুদা পুলিশের অভিযানে দর্শনা মোবারক পাড়া থেকে ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়, তাঁদের মধ্যে রীতা খাতুন নামের এক নারী মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন। পোড়াদহ জিআরপি থানা পুলিশের অভিযানে জয়রামপুর কলোনি পাড়ার আব্দুল ছাত্তারের মেয়ে লিপি খাতুন ৩০ বোতল ফেনসিডিলসহ ও দামুড়হুদা পুলিশের অভিযানে দর্শনা হল্ট স্টেশনের টাওয়ার পাড়া থেকে ২৩ বোতল ফেনসিডিলসহ সাজেদা খাতুন আটক হন এবং দর্শনা মোহাম্মদপুরের রনি ড্রাইভারের স্ত্রী বিউটি খাতুন মহানন্দা ট্রেনে ২৯ বোতল ফেনসিডিলসহ রেলওয়ে জিআরপি পুলিশের কাছে আটক হন। এসব নারী মাদক ব্যবসায়ীদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এই পথে তাঁরা কেউ ইচ্ছা করে আসেননি। কেউ এসেছেন অভাবের তাড়নায়, কেউ এসেছেন সামাজিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায়। তবে অনেকে আবার উচ্চাভিলাষী জীবনের আশায়ও এ পথে পা বাড়িয়েছেন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী মাদক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এ পেশায় আসতে চাইনি। আমার স্বামী এ ব্যবসা করতো। তার মৃত্যুর পর আমার সংসারে অভাব নেমে আসে। সংসারে দৈন্যতা দেখা দিলে স্বামীর সহকর্মী এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা ধার করতাম। সে আমাকে মোটা অঙ্কের টাকা ধার দিত। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তির কাছে আমার অনেক টাকা ঋণ হয়ে যায়। পরে সে টাকার জন্য বিভিন্ন সময় চাপ দিলে আমার পক্ষে টাকা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। টাকা দিতে না পারায় সে আমাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মাদকের চালান দিয়ে আসতে বলত। এ কাজে সে আমাকে মোটা অঙ্কের টাকাও দিত, এ টাকা দিয়ে আমার সংসার চলেও ঋণের টাকা পরিশোধ হত। এভাবে আমার এ ব্যবসার প্রতি লোভ সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েক জায়গায় পুলিশের হাতে ধরা পড়ি এবং বেশ কয়েকটি মামলাও হয়। ধরা পড়লে ওই ব্যক্তিই কারাগার থেকে আমাকে বের করে নিয়ে আসেন তাঁর নিজ খরচে। আর তাঁর ওই খরচের টাকা পরিশোধ ও মামলা চালানো টাকা জোগাড় করতে আমাকে বাধ্য হয়ে আবারও মাদকের চালান নিয়ে যেতে হয়।’ এভাবেই একবার কেউ মাদক ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়লে তাঁদের জাল কেটে আর বের হতে পারেন না। এ ছাড়া মাদককের সহজলভ্যতার কারণে মাদক সেবনকারীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পরবর্তীতে নেশার টাকা জোগাড় করতে তাঁরা জড়িয়ে পড়ছেন মাদক ব্যবসায়। এ বিষয়ে বেগমপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ এএসআই মহিউদ্দিন জানান, ‘বেগমপুর ক্যাম্পের আওতাধীন আকন্দবাড়ীয়া একটি মাদকপ্রবণ এলাকা। এখানে ধারাবাহিক অভিযানে পুরুষ মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও নারীদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। এসব নারীদের স্থানীয় র্যাকেট রয়েছে। এখানে স্থানীয় অসাধু কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি আছেন, যাঁরা নিজেরা মাদক ব্যবসায়ী হয়ে দলের পদে রয়েছেন। আবার এঁদের সঙ্গে রয়েছেন কিছু অসাধু সাংবাদিক। এসব কারণে মাদক উদ্ধার করা আমাদের পক্ষে এক ধরনের চেলেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া আমাদের ক্যাম্পে কোনো মহিলা পুলিশ নেই, তাই কোনো সময় গোপন সংবাদ পেলেও মহিলা পুলিশ ছাড়া আমরা এসব নারী মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেপ্তার করতে পারছি না। এর মধ্যে আমাদের তথ্য মোতাবেক ৭-৮ জন নারী মাদক ব্যবসায়ী রয়েছেন। যত দিন এসব নারী মাদক ব্যবসায়ীরা আটক না হচ্ছেন, তত দিন এ এলাকায় মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না।’ এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘এ বিষয়টি সত্য, ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে, জেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক নারী মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছেন। আমাদের মাদকবিরোধী অভিযানগুলোয় দেখা যাচ্ছে যে অনেক নারী মাদক ব্যবসায়ী আটক হচ্ছেন। নারীরা মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে যাচ্ছেন, কারণ মাদকের চালান এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়ার জন্য নরীরা যথেষ্ট গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের পুলিশের মধ্যে মহিলা পুলিশ সদস্য আশানুরূপ না থাকার কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষভাবে লুকিয়ে রাখা মাদক চালান উদ্ধার বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। ইতিমধ্যে দামুড়হুদার দর্শনা ও চুয়াডাঙ্গা সদর থানার আকন্দবাড়িয়ায় বেশ কয়েকটি অভিযানে বড় মাদকের চালানসহ বেশ কয়েকজন নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’ এ বিষয়ে পোড়াদহ রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন খন্দকার জানান, ‘মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে। তা ছাড়া আমি সদ্য এই থানায় এসেছি। আমার কাছে সেই ভাবে কোনো তালিকা নেই। তবে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে স্টেশন-সংলগ্ন স্থানে কোনো নারী বা পুরুষ জড়িত থাকলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে মাদকের কোনো সম্পর্ক থাকলে শুধু বিভাগীয় ব্যবস্থাই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হবে।’এ বিষয়ে দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, ‘নারী মাদক ব্যবসায়ীর বিষয়টি সঠিক। ইদানিং লক্ষ করা যাচ্ছে, আমাদের মাদকবিরোধী অভিযানে বেশ কিছু নারী মাদক ব্যবসায়ী মাদকের চালানসহ আটক হচ্ছেন। তবে আমরা মাদক ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ দেখছি না। মাদক ব্যবসায়ী তো মাদক ব্যবসায়ীই। যার কাছে মাদক পাওয়া যাবে বা যার সঙ্গে মাদকের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, অবশ্যই তার নামে মামলা দিয়ে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। সব মাদক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং আগামীতেও এ অভিযান চলবে।’ এ বিষয়ে দর্শনা পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাসান খালেকুজ্জামান বলেন, ‘পুরুষ মাদক ব্যবসায়ী অনেকটা কমলেও নারী ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ, নারীরা খুব সহজেই বোরকা পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য বহন করেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। আর একজন নারী যখন বোরকা পরেন, তখন তাঁকে তাঁর খুব কাছের মানুষই চিনতে পারেন না। এ কারণে অনেক পুরুষ মাদক ব্যবসায়ীরাই এখন নারীদের দিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তবে পুরুষের ক্ষেত্রে প্রশাসন যেমন বিশেষ ভ’মিকা রেখেছে, তেমনি নারী মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা করে ব্যবস্থা নিলে হয়তো ফল পাওয়া যাবে।’ দর্শনা পৌর প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন বলেন, ‘নারী মাদক ব্যবসায়ীরা দিন দিন যেভাবে বাড়ছে, এতে করে সমাজ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমার মতে, যদি দর্শনা পৌর এলাকায় নারী মাদক ব্যবসা বন্ধ করতে হয়, তাহলে যারা দর্শনার বাইরে থেকে (ছয়ঘরিয়া, ঝাঁঝাডাঙ্গা, নাস্তিপুরসহ বিভিন্ন এলাকা) এসে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে, এদের বাড়ির মালিকদের সচেতন হতে হবে। যাদেরকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হচ্ছে তারা কী কাজ করে, তা জানতে হবে। এ বিষয়ে পুলিশ যদি কোনো সহযোগিতা চায়, তাহলে আমরা জনপ্রতিনিধিরা সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব। তবে প্রশাসনকেও সচেতন থাকতে হবে।’এ বিষয়ে সচেতন মহল জানায়, ফেনসিডিল, ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজা-সাধারণত এ চার প্রকারের মাদকদ্রব্য বাংলাদেশে বেশি প্রচলিত। এসবের অধিকাংশ মাদকদ্রব্যই দেশের বাইরে থেকে আসে। আর তথ্য মোতাবেক, সীমান্ত পথেই সবচেয়ে বেশি মাদক চোরাচালান হয়ে থাকে। এ কারণে বিজিবির অভিযানে সীমান্ত পথেই বিভিন্ন সময় মাদকের বড় বড় চালান আটক হয়। তাই এসব মাদবদ্রব্য সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে সীমান্ত প্রহরীরা আরও বেশি সজাগ হলে মাদকদ্রব্য পুরোপুরি দুঃপ্রাপ্য এবং মাদক চালান একেবারে বন্ধ হবে বলে আশা করে সচেতন মহল।