অবৈধভাবে ১৬টি কাজে ১০৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার ভেরিয়েশন প্রদান, প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটের নামে ৬৮ কোটি টাকা, বিটুমিন বা পিচের সড়ক না করে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করে ২৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব স্ক্র্যাপ বিনা নিলামে বিক্রির মাধ্যমে ৫৩ কোটি টাকা, ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্টের নামে ১২ কোটি টাকা, প্রকল্পের ঠিকাদারের লেফটওভার ম্যাটেরিয়াল বিক্রির মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা ছাড়াও বিভিন্ন মূল্যবান মালামালের কান্ট্রি অব অরিজিন পরিবর্তন করে এবং প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রকল্পে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করা হয়।
সম্প্রতি, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক- এমডি আবুল কালাম আজাদসহ ছয় শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দেড়’শ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও লুটপাটের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দীর্ঘদিন ধরে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সিন্ডিকেট করে টেন্ডার ও কমিশন বাণিজ্যে ও বিভিন্ন কোম্পানির মালামাল পাস দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্যসহ সম্প্রতি সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী দুদকে চিঠি দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছিল বলে জানা যায়। এর প্রেক্ষিতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে গত ৯ জুলাই কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে চিঠি পাঠানো হয় এবং ১৫ জুলাই কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক সুবেল আহমেদকে প্রধান করে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং তদন্ত শেষ করে সে অনুযায়ী প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিঠি ও দুদক সূত্রে জানা যায়, মাতারবাড়ী কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) এমডি আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদ উল্ল্যাহ, ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, নির্বাহী প্রকৌশলী (নকশা) মো. কামরুল ইসলাম, সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা আলফাজ উদ্দিন ও ডিজিএম (ডেপুটেশন) মতিউর রহমানের নামে এসব দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
দুর্নীতির বিষয়ে জানতে গতকাল সিপিজিসিবিএল-এর এমডি আবুল কালাম আজাদকে একাধিকবার তার মুঠোফোনে কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। তবে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মাতারবাড়ীর নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদ উল্ল্যাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্তব্যের কিছু নেই। এখানে আমাদের কোনো কিছু কাজ করার সুযোগ নেই। এখানে অর্থ জাপানের মাধ্যমে আসে। এ বিষয়ে আপনাদের কিছু বলার নেই। এসব নিয়ে যারা অভিযোগ দিয়েছে তারাই বুঝবে। তারা অভিযোগ করেছে, তারাই তদন্ত করে দেখুক।
এই দুর্নীতির দায় স্বীকার করছেন কিনা জানতে চাইলে এক পর্যায়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘আপনারা এ বিষয়টি উঠাইতে চাইলে উঠায় দেন। এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটে নাই। এখন কমপ্লেন করতে চাইলে আপনারা করেন। ’
বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে ১৪০ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৬৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার ভেরিয়েশন অর্ডার দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সির সব অর্থ বিনা অনুমতিতে ভেরিয়েশনের মাধ্যমে অন্য কাজে ব্যবহার হয়। অথচ এ কাজ বাবদ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় শুধু বিপর্যয় বা মহামারির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সে ক্ষেত্রে এ বরাদ্দ অন্য খাতে খরচ করতে হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হয়। মাতারবাড়ী প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১৬টি কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট বা ভেরিয়েশন দেওয়া হয়। যার মোট মূল্যমান ১৪০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৫টি বোর্ডে অনুমোদন নেওয়া হয় বাকি ১১টির কোনো অনুমোদন নেই। নিয়ম অনুযায়ীর চুক্তিকারী নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ভেরিয়েশন দিতে পারে। মাতারবাড়ী প্রকল্পের চুক্তি করেছে সিপিজিসিবিএল বোর্ড। কিন্তু বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই বিপুল পরিমাণ ভেরিয়েশন দেওয়া হয়েছে। বোর্ড চুক্তিকারী হওয়ায় কোনোভাবেই প্রকল্প পরিচালক ভেরিয়েশন অর্ডার দিতে পারেন না। কিন্তু এর পরও দিয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট বা ভেরিয়েশন-এ ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি এর সব অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ছাড়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোসাল (ডিপিপি)-এর অন্য খাতের অর্থ বিনা অনুমতিতে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সিতে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এসব অর্থের ভেরিয়েশন অর্ডার নেওয়া হয়েছে। এ কাজে প্রকল্পটির এমডি আবুল কালাম আজাদ ও প্রকল্পের নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদ উল্ল্যাহ জড়িত বলে অভিযোগ এসেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটের কাজ ১৪ কোটি টাকায় করা যেত কিন্তু তা প্রায় ৬ গুণ বেশি অর্থ ব্যয়ে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। মাতারবাড়ী টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাতে দেশি ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। ঠিকাদার প্রকল্প থেকে ১৩ কিমি. দূর থেকে নিজ দায়িত্বে বালু সংগ্রহ করে ৩১৫ টাকা/ঘনমিটার রেটে ভরাট করত। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় চুক্তি বাতিল করা হয়। এখন দেশি ঠিকাদারের পরিবর্তীতে মাতারবাড়ী প্রকল্পের বিদেশি ঠিকাদারকে দিয়ে বালু ভরাটের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এখন বিদেশি ঠিকাদার প্রকল্পের বালু ব্যবহার করেছে। সে ক্ষেত্রে বিদেশি ঠিকাদারের শুধু ১ কিমি. দূর থেকে বালু পরিবহন খরচ হবে। কিন্তু এখানে এস্টিমেট করা হয়েছে ৯২৫ টাকা/ঘনমিটার। এভাবে ৮ দশমিক ৫ লাখ ঘনমিটার বালুর এস্টিমেট করা হয়েছে ৮২ কোটি টাকা। অথচ লেটেস্ট রেট সিডিউল অনুযায়ী পুরঃ টেন্ডার করে সহজেই ১৪ কোটি টাকায় কাজটি করা যায়। আর পুনঃ টেন্ডার করলে ঠিকাদারকে শুধু বালু পরিবহন করতে হবে, তাই কাজ শেষ করতে পারবে সহজেই। এ ছাড়া দেশি ঠিকাদারের মাধ্যমে বালু ভরাট করলে ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত দেশি মুদ্রায় (টাকা) বিল দেওয়া যেত। অবৈধভাবে বিদেশিদের মাধ্যমে কাজ করানোয় ডলারে বিল দিতে হয়েছে। এতে ডিপিপির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) কাজটির ভেরিয়েশন অর্ডার করতে বললেও কোনো ভেরিয়েশন অর্ডার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ভেরিয়েশন অর্ডার অনুমোদন করতে পারে বোর্ড। বোর্ডে না নিয়ে ভেরিয়েশন না করে অবৈধভাবে কাজটি করা হচ্ছে। এতে ৬৮ কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে। তাও আবার বৈদেশিক মুদ্রায়।
প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় বিটুমিন বা পিচের সড়ক নির্মাণ করার কথা। শুধু দুর্নীতির জন্য বিটুমিন বা পিচের সড়কের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ১৭০ কোটি টাকা ভেরিয়েশন দেওয়া হয়। এতে ডিপিপি বা পিপিআর নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। প্রকল্পের কনসালল্ট্যান্ট (এমজেভিসি) পরামর্শ দিয়েছিল যে, সব রোড কংক্রিট করতে ১৪ থেকে ১৬ মিলিয়ন ডলার লাগবে। যা ব্যয়বহুল। এজন্য শুধু কিছু সড়ক (পাওয়ার প্ল্যান্ট, কোল ইয়ার্ড) কংক্রিট করতে আর অবশিষ্ট সব সড়ক (এসপন্ড, সার্ভিস রোড ও অন্যান্য সব) বিটুমিন বা পিচ দিয়ে করতে। এতে ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত লাগত। কিন্তু অসাধু উদ্দেশ্যে সব সড়ক কংক্রিট করা হচ্ছে আর অতিরিক্ত ২১ .৬ মিলিয়ন ডলার বা ২৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা অবৈধ ভেরিয়েশন দেয়। এই কাজেও বোর্ড বা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশ থেকে আনা (যার ট্যাক্স সিপিজিসিবিএল পরিশোধ করেছে) সব মালামালের স্ক্রাপ/অব্যবহৃত অংশের মালিক সিপিজিসিবিএল। সে মোতাবেক নিলামের মাধ্যমে সিপিজিসিবিএল প্রায় ৯ কোটি টাকার স্ক্রাপ বিক্রি করে। পরে একই স্থান থেকে একই স্ক্রাপকে ঠিকাদারের স্ক্রাপ বলা হচ্ছে এবং ঠিকাদার স্ক্রাপ বিক্রি করছে বলে বলা হচ্ছে। তাই সিপিজিসিবিএল তখন স্ক্রাপের নিলাম করেনি। কিন্তু প্রতিদিনই অনেক ট্রাক ও বোটবোঝাই স্ক্রাপ প্রকল্পের বাইরে যায়। মালামাল বাইরে নেওয়ার গেটপাস সিপিজিসিবিএল করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে আগে যে কোম্পানি নিলামের মাধ্যমে স্ক্রাপ নিত এখনো সেই কোম্পানি স্ক্রাপ নিয়েছে। কিন্তু স্ক্রাপের মূল্য সিপিজিসিবিএল-এর পরবর্তীতে জড়িত কর্মকর্তারা নিচ্ছে। এভাবে গত কয়েক মাসে ৫৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এখন আবার এই একই স্থানের একই স্ক্রাপ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। আর মাঝের প্রায় ১ বছর নিলাম ছাড়া ৫৩ কোটি টাকার স্ক্রাপ বিক্রি করা হয়েছে।
ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্টের কনসালট্যান্ট নিয়োগ বিষয়টি জাইকার সঙ্গে সিপিজিসিবিএলের এমওডি-তে ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্ট রাখা হয়। সিপিজিসিবিএল নতুন প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এর অর্গানোগ্রাম, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সেটআপ, প্রশাসনিক স্তর ইত্যাদি কেমন হবে তা নির্ধারণে ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্টের জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের বিষয়টি রাখা হয়েছিল। কিন্তু ২০২২ সালে এসে এর প্রয়োজন ছিল না। কারণ সিপিজিসিবিএলের অর্গানোগ্রাম, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সেটআপ, প্রশাসনিক স্তর ইত্যাদি করা হয়েছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত হয়েছে। কিন্তু জড়িত কর্মকর্তারা দুর্নীতির জন্য এত বছর পর ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্টের কনসালট্যান্ট নিয়োগের উদ্যোগ নেন এবং জাইকাকে এ বিষয়ে পত্র দেন। তারা ভেরিয়েশন অর্ডার করে টেপ্সকোকে এই কাজ দেয়। কাজের মূল্য প্রায় ৮ দশমিক ১২ কোটি এবং ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ প্রায় ১২ কোটি টাকা। সাধারণত এ ধরনের কাজে বিশদ সার্ভে, সেমিনার, রিপোর্ট, দেশি/বিদেশি প্রশিক্ষণ, দীর্ঘমেয়াদি তদারকি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু এখানে শুধু একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়। তাদের যে কাজের স্কোপ এতে কোনোভাবেই এ কাজে ২০ লাখ টাকার বেশি খরচ হয় না। এ ছাড়া এ কাজ ভেরিয়েশনে দেওয়া হয়েছে যে ফার্মকে তাদের এ ধরনের কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই।
জড়িত কর্মকর্তারা জানান, এই কাজ করতে জাইকা থেকে বলা হয়েছে। কিন্তু জাইকা তা করেনি বরং প্রকল্প পরিচালক নিজ উদ্যোগে জাইকাকে চিঠি দিয়ে এ কাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত এ কাজের চূড়ান্ত রিপোর্ট শেষ বা অনুমোদন হয়নি। কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ, কিন্তু ৯০ শতাংশ বিল প্রদান করা হয়। অর্থাৎ ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্টের কনসালট্যান্ট নিয়োগে ১২ কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে শুধু দুর্নীতির লক্ষ্যে। ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তিতে সব গুরুত্বপূর্ণ মালামাল/ মেশিন কোন দেশ থেকে আসবে তা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু বেশকিছু মালামালের কান্ট্রি অব অরিজিন পরিবর্তন করা হয়েছে। জি-৮ দেশের পরিবর্তে চায়না, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া বা ভারত থেকে মালামাল সরবরাহের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে কম গুণগতমানের মালামাল/মেশিন নিয়ে আসা হয়েছে। বোর্ডের অগোচরে কোনো অনুমতি ব্যতীত এসব করা হয়েছে। এর মাধ্যমে জড়িতরা বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। মাতারবাড়ী প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদার প্রকল্পের মূল কাজ করে থাকে। প্রকল্পের অন্যান্য কাজ (মাটি ভরাট, রাস্তা, বিভিন্ন ভবন ও অন্যান্য বিভিন্ন কাজ) দেশি সাব-কন্ট্রাক্টর করে থাকে। এ সুযোগে প্রকল্পের এমডি আবুল কালাম ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বিদেশি কনট্রাক্টর তশিবা/ আইএইচআই/ পস্কোকে চাপ দিয়ে নিজেদের লোকজনকে বিপুল টাকার বিনিময়ে সাব-কনট্রাক্টর হিসেবে কাজ দেন। এর মাধ্যমে জড়িত কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন।
মাতারবাড়ী প্রকল্পে বিদেশি ঠিকাদার হুন্দাই ই এবং সি প্রকল্পের সাগরের সুরক্ষা ও ভূমি সুরক্ষায় (ডিএমএম) মূল কাজ করেছে। তাদের কাজ শেষ হওয়ায় তারা মাতারবাড়ী ত্যাগ করেছে। এর মাতারবাড়ী প্রকল্পে ১২০ জন বিদেশির আবাসন ও অফিসের জন্য প্রায় ১৫টি বৃহৎ স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণ করেছিল (সর্বমোট প্রায় ৭৮, ৫০০ বর্গফুট)। এসব ভবনের সালভেজ ভ্যালু প্রায় ১৫ কোটি টাকা। দেশের বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ সব প্রকল্পের অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী বিদেশি ঠিকাদারের অস্থায়ীভাবে নির্মিত স্থাপনা প্রকল্প শেষে মালিক/সংস্থা পেয়ে থাকেন। এসব স্থাপনা হুন্দাই ই এবং সি চলে যাওয়ার পরে সিপিজিসিবিএলের পাওয়ার কথা। একইভাবে পস্কোর কাছে থাকা সিপিজিসিবিএলের মালামাল পস্কোর মালামাল বলে ১১ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ প্রকল্পের বাইরে বিক্রি করা হয়েছে।
এসব মালামাল প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ এবং প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বিক্রি করেছেন। মনিরুজ্জামান মাতারবাড়ীতে অবস্থান করে সব স্ক্র্যাপসহ অন্য মালামাল প্রকল্পের বাইরে নিয়ে যাওয়া তদারকি করেছেন এবং আবুল কালাম আজাদ প্রকল্পের মাতারবাড়ীর কর্মকর্তাদের ফোন করে মালামাল প্রকল্পের বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি ও নির্দেশনা দিয়েছেন।