নিউজ ডেস্ক:খননের অভাবে মরে যাওয়া ভৈরব নদী এখন ফসলের মাঠে পরিণত হয়েছে। চৈত্র মাস আসার আগেই ভৈরব নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছ ধরায় শুকিয়ে যায় এ ভৈরব নদী। নদীর বুক চিরে চলছে চাষাবাদ। দখল করে চাষাবাদ করছে পাশের জমির মালিক। শুধু তাই নয়, পাশের জমির মালিক জমি চাষাবাদ না করলেও ভৈরব নদী দখল করে অন্যের নিকট লিজ দিয়ে অর্থ আদায় করছে ভৈরব দখলকারী কিছু ভূমিদস্যুরা। এক সময় এ ভৈরব নদীপথে লঞ্চ, ট্রলার যাতায়াত করলেও বর্তমান প্রজন্মের শিশুদের কাছে এগুলো এখন স্বপ্ন ছাড়া আর কিছু না।
ভৈরব নদীর একটি শাখা মাথাভাঙ্গা নদী। এই দুটি শাখা নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর পাশের জমির মালিকরা দখল করে ধান উৎপাদন করছে। ফলে এ দুটি শাখা নদীর উপকার থেকে জনগন সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। এগুলোর ওপর কর্তৃপক্ষের সুনজর না দেওয়ায় দিন দিন দখলদারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বাঁকা ইউনিয়নের প্রতাবপুর, সীমান্ত ইউনিয়নের যাদবপুর, মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভৈরব নদীর কোনো কোনো স্থানে হাটুপানি রয়েছে। নদীর উপরের ভাগে ধানের বীজতলা ও নদীর তলায় ধান রোপণ করার দৃশ্য চোখে পড়ে। দেখে মনে হয় ভৈরব নদীর কোন অস্তিত্ব নেই।
প্রতাবপুর গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান জানান, এমন একটি সময় ছিলো যখন ভৈরব নদীতে সবসময় ভরপুর পানি থাকতো। এই পানি দিয়ে কৃষি কাজে সেচ, গোসলসহ গৃহস্থলি কাজে ব্যবহার করত নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষ। বর্তমান পানি শুকিয়ে যাওয়ায় নদীতে মাছ ধরাতো দুরে থাক দখলদারদের দখলবাজিতে ভৈরব নদী দিয়ে হাটারও সুযোগ নেই। সুবলপুর গ্রামের বুনো সম্প্রদায়ের মাছ শিকারি মধু জানান, আগে ভৈরব নদী ও উপজেলার ছোট বড় যে সমস্ত নদী ছিলো সেখানে জাল দিয়ে মাছ ধরে আমরা জীবিকা নির্বাহ করতাম। এখন নদী দখল আর শুকিয়ে যাওয়ায় ফসলি মাঠে পরিণত হওয়ায় আমরা বুনো সম্প্রদায়ের সদস্যরা বেকার হয়ে পড়েছি।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান সরকাররের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হিসাবে বিশ্বে পরিচিত লাভ করায়, বাংলাদেশের ছোট বড় যে সমস্ত নদী ও খাল বিলিন হয়ে যেতে বসেছে সেগুলো পুর্নখননের জন্য গত বছরেই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তার কিছুটা হলেও জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রামে বাস্তবিত হয়। তবে একটি চক্র নদী খননের মাটি বিভিন্ন ইট ভাটার মালিকদের নিকট বিক্রি করে মোটা অংকের অর্থ আয় করে। তা ছাড়াও বর্তমান প্রতাবপুর ভৈরব নদী দখল করে ধান চাষ করছেন নুর মোহাম্মদ। তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ভৈরব নদীটির মধ্যে প্রায় ২২ বছর যাবৎ চাষ করে আসছি। যেহেতু ভৈরব নদীর উপরে বাঁকা গ্রামের ফজলুর জমি, সেহেতু প্রতি বছরে ৫ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছি তার পরিবারের লোকজনের কাছে। এদিকে সচেতন মহল ভৈরব নদী খনন ও দখলদারদের নিকট থেকে দখলমুক্ত করে সাধারণ জনগনের জন্য উন্মক্ত করার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।