নিউজ ডেস্ক:
প্রবাস জীবন মানে নিজের জন্মভূমি ও প্রিয়জনের সান্নিধ্য থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে বসবাস। প্রবাস জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ওই দেশের স্থানীয় ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া অনেক সময় প্রবাসীদের জন্য দুরহ হয়ে দাঁড়ায়।
তবে পৃথিবীর এমন কিছু দেশ আছে যেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের আচার-আচরণ এবং বন্ধুসূলভ মনোভব, আপনাকে উক্ত দেশের স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে সহজে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।
গ্লোবাল কমিউনিটি নেটওয়ার্ক ইন্টারনেশনস তাদের বাৎসরিক ‘এক্সপাট ইনসাইডার সার্ভে’তে কিছু দেশের কথা উল্লেখ করেছেন যেখানে প্রবাসীরা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তূলনায় খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারে। ১৯১টি দেশে বসবাসরত ১৪ হাজার প্রবাসীদের প্রদত্ত নম্বরের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়া ৫টি দেশ নিয়ে এ প্রতিবেদন।
কোস্টারিকা
বিশ্বের কোন দেশে অভিবাসী বা প্রবাসীরা সবচেয়ে সুখী ও সহজে মানিয়ে নিতে পারে? গ্লোবাল কমিউনিটি নেটওয়ার্ক ইন্টারনেশনসের জরিপে ৮৯ শতাংশ প্রবাসী উত্তর দিয়েছেন কোস্টারিকা। অর্থাৎ প্রবাসীরা কোথায় সবচেয়ে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারে, ইন্টারনেশনসের এমন জরিপে সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া দেশ হচ্ছে কোস্টারিকা।
মধ্য আমেরিকার ছোট্ট এ দেশটিতে তেমন বড় কোনো শিল্প-কারখানা নেই, কৃষি উৎপাদন কিংবা জিডিপির বিচারেও বিশ্বে শীর্ষ দেশগুলোর ধারে কাছে নেই। তারা তবে নির্মল ও স্বচ্ছ জীবন যাপনে তাদের ধারে কাছে নেই পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ।
ইন্টারনেশনসের জরিপে ৭৯ শতাংশ কোস্টারিকান প্রবাসী জানিয়েছেন, তারা এখানে নিজের দেশের মতো করেই বসবাস করে। বৃটেন থেকে কোস্টারিকায় স্থায়ী হওয়া ডেভিড ব্লাক বলেন,কেউ যদি কোস্টারিকার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে চান তবে তিনি কোস্টারিকান্দের কাছ থেকে উষ্ণভাবে আমন্ত্রিত হন।
উগান্ডা
বন্ধুত্ব সুলভ ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে বেশি নম্বর পাওয়া দেশের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে উগান্ডা। ইন্টারনেশনসের জরিপে ৫৭ শতাংশ প্রবাসী এই মতামত দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জরিপে অংশগ্রহণকারী কেউই দেশটিকে নেগেটিভ নম্বর দেননি।
ব্রিটিশ লেখক শার্লট বিউভোসিন তার ‘ডায়েরি অব মঞ্জু’ বইতে উগান্ডার অধিবাসীদের বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহারের দীর্ঘ ঐতিহ্যের কথা তূলে ধরেছেন। এছাড়া উগান্ডার রাজধানী শহর কাম্পালাতে দীর্ঘদিন বসবাসকারী ইন্টারনেশনসের প্রতিনিধি নাদায়া মিলিভা বলেন, উগান্ডার অধিবাসীরা খুবই বন্ধুসুলভ।
তিনি আরো বলেন, যদিও উগান্ডাতে ধুলাবালি, ধোঁয়া, দূষণ ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে তবে স্থানীয় অধিবাসীদের হাসিমাখা ব্যবহার আপনাকে এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসে উন উদ্ভুদ্ধ করবে।
কলম্বিয়া
অধিকাংশ প্রবাসীদের মতে, প্রথম থেকেই কলম্বিয়াকে অতি আপন মনে হবে। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে কলম্বিয়ানরা নিজের দেশকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপনের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। ইন্টারনেশনসের প্রতিনিধি মারিয়া ভিলগাস বলেন, কলম্বিয়াতে অভিবাসীর সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। সুতরাং যারা অভিবাসী হিসেবে বসবাস করে তারা স্থানীয় কলম্বিয়ানদের নিকট থেকে অতিথির মতো ব্যবহার পেয়ে থাকে।
ইন্টারনেশনসের জরিপে উইলিয়াম ডুরান বলেন, আমি পৃথিবীর ৪০টি দেশ ভ্রমণ করেছি কিন্তু কলম্বিয়ানদের মতো এমন বন্ধসুলভ জাতি খুব কম দেখেছি।
ওমান
ওমানের বেশি অংশ জুড়েই মরুভূমি থাকায় এর আবহাওয়া খুব শুষ্ক। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, এর অধিবাসীদের ব্যবহার আবহাওয়ার ঠিক বিপরীত। প্রকৃতপক্ষে অভিবাসীদের জন্য ওমান খুব চমৎকার একটি দেশ।
ট্রাভেল ব্লগার নিকোল ব্রিউয়ার বলেন, ইসলামী ভাবধারায় বিশ্বাসী এই দেশটির মানুষেরা তাদের প্রতিবেশী বা প্রবাসীদের যেকোনো প্রয়োজনেই সাহায্য করে থাকে। এবং তারা পরিচিত বা অপরিচিত যে কাউকেই ফল বা খেজুর দিয়ে অ্যাপায়ন করে থাকে।
ইন্টারনেশনসের প্রতিনিধি রেবেকা মাসটন বলেন, ওমানে আপনি যখন যেখানে খুশি খোলা মনে বের হয়ে পড়তে পারেন। কারণ দেশটির আবহাওয়ার মতো এর অধিবাসীরাও চমৎকার। তিনি আরো বলেন, আমি আমার নিজ দেশ নিউজিল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার থেকে এখানে বাস করতে আগ্রহী। কারণ এখানে আমি আর্থিক ও মানসিক দুইভাবেই সুখে আছি।
ফিলিপাইন
দ্বীপ রাষ্ট্র ফিলিপাইনে প্রচুর বহুজাতিক সংস্থার অফিস রয়েছে, যা সহজে অভিবাসীদের আকর্ষণ করে। ইন্টারনেশনসের প্রতিনিধি এলিনর ওয়েবলি বলেন, ফিলিপাইনের অধিবাসীরা খুব আন্তরিক ফলে অভিবাসী বা পর্যটকরা এখানে খুব সহজে মানিয়ে নিতে পারে।
ইন্টারনেশনসের আরেক প্রতিনিধি ওয়েনডাল ইউসান বলেন, স্থানীয় ফিলিপিনোরা সবসময় হাসি মাখা মুখে আপনার সঙ্গে কথা বলবে, যার ফলে আপনি সহজেই এখানে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন।