ইমাম বিমান, ঝালকাঠি থেকে :
ঝালকাঠিতে যোগদান করে বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেও কুচক্রী মহলের কারনে মাঠে থাকতে পারেননি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস। যার কারনে ঝালকাঠিতে যোগদান করার ৮ মাসেই বদলী হয়েছেন তিনি।
নারী হয়েও সদর উপজেলা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা সততা, নিষ্ঠার প্রতীক তানিয়া ফেরদৌস ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদানের পর ৭ মাসের মধ্যেই প্রায় ২০টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেন। তানিয়া ফেরদৌসের অনত্র বদলী জনমনে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। ঝালকাঠিতে মাত্র কয়েক মাসেই সদর উপজেলায় যোগদানের পর থেকে যখন যে সময়, যেখানেই বাল্যবিয়ের কথা শুনেছেন সকাল, বিকেল আর রাত নেই ছুটে গেছেন প্রত্যন্ত এলাকায়। সেই সাথে ঘটনার সত্যতা পেয়ে সাংবাদিকদেরও অবগত করেছেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলায় যোগাদানের পর এখন পর্যন্ত দিন-রাত যার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ২১টি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করেছেন। সম্প্রতি গত ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারী মাত্র ১২ ঘন্টার ব্যবধানে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌসের হস্তক্ষেপে দুইটি ইউনিয়নে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধের মাধ্যমে ১৩ বছর বয়সী নবম শ্রনী পড়ুয়া দুইজন স্কুল ছাত্রীকে ফিরেয়ে দিয়েছেন নতুন জীবন।
এ বিষয় অনুসন্ধানে জানাযায়, প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা, সদালাপি এবং সৎ কর্মতা হিসাবে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া ফেরদৌস। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ঝালকাঠিতে যোগদানের মাত্র ৮ মাস যেতে না যেতেই, কেন বদলী জনিত কারনে ঝালকাঠিকে বিদায় জানাতে হলো ? এ বিষয়টি ওপেন সিক্রেট থাকলেও প্রশাসন, গোয়েন্দা বিভাগ, সাংবাদিক, দুদকসহ সরকারের সকল বিভাগ অবগত আছে। সরকারী এই কর্মকর্তা বিরোধী এক চক্র কয়েকদিন আগে তার বিরুদ্ধে উৎকোচের বিনিময় চৌকিদার নিয়োগ করছেন বলে অপপ্রচার চালায়। সেই সাথে ঝালকাঠির একাধিক সিনিয়র সাংবাদিকদের এমন তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায়ও কমতি ছিলো না। কিন্তু অপপ্রচার কারী চক্রটি জানতেন না ঝালকাঠির পেশাদার সাংবাদিকদের কাছে তানিয়া ফেরদৌস একজন সাদা মনের সৎ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। সাংবাদিকদের জানা ছিল তানিয়া ফেরদৌস এ নিয়োগে স্বচ্ছতা রাখতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে নিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সকল পর্যায় স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও বাছাই প্রক্রিয়ার অন্যতম সদস্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), উপজেলা প্রকৌশলী এবং সদস্য সচিব আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট ছিলেন। শুধু তাই নয় নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ রাখতে গোয়ান্দা বিভাগ ও পুলিশের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। অনুসন্ধানের গভীরে গিয়ে জানাযায়, শুধু নিয়োগ প্রক্রিয়াই নয় গত ২০১৯ সালের জুন মাসে যোগদান করেই তিনি প্রথম ২০১৮-১৯ সালের এডিবি প্রকল্পের কাজ না দেখে চেকে স্মাক্ষর না দেয়ায় পড়েন রোসানলে। এডিবি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের সংবাদ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করে। প্রকল্পের সহ-সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকায় তানিয়া ফেরদৌস কাজ না দেখে চেক ফিরিয়ে দেয়ায় বিরাগভাজন ও অপ্রিয় হয়ে যান অনেকের। এক পর্যায় এডিবি প্রকল্পের কাজ দেখতে না পারলেও প্রকল্প সদস্য সচিব কতৃক চুড়ান্ত প্রতিবেদন ও কাজের মান প্রত্যয়ন স্বাপেক্ষে আর্থিক অনুমোদন দিতে বাধ্য হন তিনি। এছারাও একই সমস্যার সম্মুখিন হন টিআর, কাবিখা প্রকল্প নিয়েও। যার সভা না করে প্রকল্প অনুমোদনে দ্বিমত করায় তিনি আরো অপ্রিয় হয়ে ওঠেন বলেও শোনা যায়।
ঝালকাঠিতে যোগদানের পর শুধু বাল্য বিয়েই নয় সদর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়ন পর্যায় ও ইউনিয়নের বিভিন্ন স্কুল, কলেজে গিয়ে জঙ্গী, মাদক, ইভটিজিং, বাল্যবিয়ে ও দুর্নীত প্রতিরোধ, প্রতিরোধ সমাবেশ করেছেন। এছাড়াও সদর উপজেলাধীন ইউনিয়ন গুলোতে গিয়ে কিশোর কিশোরী ক্লাবের নিয়োগ, তথ্য অধিকার আইন, ধান ও গম বীজ সংগ্রহ, যাচাই বাছাই পূর্বক সততার সহিত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা বাছাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। ২০১৯ এ ঘূর্নিঝড় বুলবুল অাঘাত হানার বার্তা সহ মানুষকে বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়স্থানে নিয়ে আসার আহবানে নিজ জীবনের ঝুকি নিয়ে তার নেতৃত্বে উপজেলার কর্মকর্তা কর্মচারীদের নিয়ে নদী তীরবর্তী এলাকায় ছুটে গিয়ে সেখানকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে আনতে কাজ করেছেন। সেই সাথে ঘূর্নীঝড় বুলবুলের আঘাত শেষে ঐ সকল এলাকা সহ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষেকে সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের পাশে দাড়িয়েছেন। প্রাকৃতিক দূর্যোগে শৈত প্রবাহে গরীব মাঝে কম্বল বিতরন করেছেন।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তানিয়া ফেরদৌসকে শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠি কর্মস্থল থেকে অনত্র চলে যেতেই হলো। এ বিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ঝালকাঠিতে যোগদানের ৮ মাসেই বদলীর বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে তিনি বলেন, বদলী একটি নিয়ম তান্ত্রিক প্রক্রিয়া, এটা যে কোন সময়ই হতে। কতৃপক্ষের নির্দশনা পালন করা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমার কাজের মূল্যায়ন সাধারন মানুষের উপর ছেড়ে দিলাম। নবাগত ইউএনও মহোদয় অবশ্যই আরো ভালো এবং সুচারু রপে নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।