জিয়াবুল হক, টেকনাফ: মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হলেও রোহিঙ্গা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশ সরকার আর্ন্তজাতিক মহলের সহায়তা ও কূটনৈতিক সাফল্যের কারণে মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার জন্য সমঝোতা চুক্তি স্মারক সই করায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে উল্লাস দেখা দিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পূর্বে টেকনাফে অবস্থানের পর প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিভিন্ন আর্ন্তজাতিক লবিংকারী মহলের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলা রোহিঙ্গা নেতারা বিভিন্ন দাবী ও সুযোগের অজুহাতে রোহিঙ্গাদের সংগঠিত করে সম্ভাব্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম ব্যাহত করার অপচেষ্টা শুরু করায় স্থানীয় সচেতন মহলে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,বিশ্বস্থ সরকারী সুত্রমতে দেশ স্বাধীনের পর হতে টেকনাফের প্রত্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে প্রায় ২লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত টেকনাফ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অবস্থান নিয়ে কৌশলে বাংলাদেশী হয়ে বিভিন্ন স্তরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা পরিষদের রোহিঙ্গা তালিকায় নাম থাকা অনেকে টাকার বিনিময়ে ভোটার তালিকায় নাম লিখিয়ে বাংলাদেশী পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। কিছু রোহিঙ্গা নেতা ও ক্ষমতারধর জনপ্রতিনিধিদের যোগসাজশে এই পারে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে মোটাংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে নাশকতা ও জঙ্গিবাদে সহায়তাকারীরা রোহিঙ্গা দরদী হয়ে উঠে। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কঠোর চাপের মুখে এই চক্রটি কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এদিকে হঠাৎ চলতি বছরের গত ২৫আগষ্ট মিয়ানমার সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার পর হতে শাহপরীর দ্বীপ, বাহারছড়া, হ্নীলার নয়াপাড়া, লেদা ও হোয়াইক্যং পুটিবনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু অবস্থান করছে। এসব অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের চাপ ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতার কারণে গত ২৩ নভেম্বর মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডুতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরফলে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় ও বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে কিছুটা স্বস্থি দেখা দিলেও পুরান রোহিঙ্গা নেতারা এই বিষয়টি নিয়ে উস্কানী দিয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে নেমেছে বলে বিভিন্ন স্তর থেকে অভিযোগ উঠছে। এদিকে টেকনাফ উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ২শ ৫৬টির অধিক নুরানী মাদ্রাসা, মসজিদ, মক্তব ও মাদ্রাসায় নিয়োজিত রোহিঙ্গা ঈমাম, মৌলানা, শিক্ষক, পুরাতন রোহিঙ্গা নেতারা গোপনে সমবেত হয়ে রোহিঙ্গাদের সলা-পরামর্শ দিয়ে ওপারে না যাওয়ার জন্য প্ররোচনা দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। কারণ হিসেবে ওপারে রেখে আসা ধন-সম্পদ উদ্ধারসহ বিভিন্ন খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছে।
এই ব্যাপারে টেকনাফ প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সাংবাদিক মোঃ ছৈয়দ হোসাইন বলেন, এইপারে প্রতিষ্ঠিত রোহিঙ্গা ঈমাম, শিক্ষক ও রোহিঙ্গা নেতারা নবাগত রোহিঙ্গাদের পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া চলাকালে নানা ধরনের প্রলোভন এবং কৌশল শিখিয়ে দিচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এতে পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিচ্ছে। এই ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থা সমুহের নজরদারী বৃদ্ধি করা দরকার। টেকনাফ মডেল থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান বলেন,রোহিঙ্গাদের নিয়ে কেউ বিশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি বা প্রত্যাবাসন বিরোধী কর্মকান্ডের উস্কানীর অভিযোগ পেলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইউএনও মোঃ জাহিদ হোছন ছিদ্দিক জানান, সরকার মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও সহায়তা দিচ্ছেন। সরকার তাদের দ্রুত সময়ে প্রত্যাবাসনের জন্য সর্বাত্রক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ এই কার্য্যক্রম ব্যাহত করতে চাইলে আইনের আওতায় আনা হবে।