নিউজ ডেস্ক:
রাজধানীর মৎস্য অধিদফতরের সম্মেলন কক্ষে ‘তেলাপিয়া মাছের উৎপাদন ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ।
দেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছের গুণগত মানসর্ম্পকে জনসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিফআরআই এই সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সৈয়দ আরিফ আজাদ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল ওহাব প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এতে অন্যান্যের মধ্যে ফ্রোজেন ফুড অ্যান্ড এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ তেলাপিয়া ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ গোলাম হোসেন, যশোরের মৎস্য চাষী আজিজুর রহমানসহ বিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মৎস্য খাতের উদ্যোক্তা ও চাষীরা উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্য গবেষণা ইউনিস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এএইচ এম কহিনুর মূল প্রবন্ধে বলেন, ‘বিএফআরআই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তেলাপিয়া মাছের ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে। গবেষণায় তেলাপিয়ায় একটি নমুনাতেও বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।’
ড. কহিনুর গবেষণার তথ্য উপস্থাপনকালে বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে তেলাপিয়া মাছের মান সম্পর্কে নেতিবাচক খবর প্রচার করা হয়েছে। এর ফলে দেশের চাষীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে দাবি মাঠ পর্যারের চাষীদের। বাংলাদেশের চাষকৃত তেলাপিয়ায় বিষাক্ত উচ্চমাত্রায় ডায়োক্সিন, ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড এবং বিষাক্ত এন্টিবায়োটিক রয়েছে, যা ক্যান্সারসহ নানা রোগের কারণ হতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক ব্লগ ফেসবুকসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে দাবি করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অপপ্রচার।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস সচিব বলেন, ‘আমাদের দেশে উৎপাদিত তেলাপিয়া মাছ সুস্বাদু, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর। এতে কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ নেই। সুতরাং এটা খেতে কোনো অসুবিধা নেই।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে তেলাপিয়া চাষে খৈল ও কুড়াজাতীয় স্বল্পমূল্যের খাবার ব্যবহার করা হয়। এসব খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয় না। ফলে এসব খাবার ব্যবহার করে ফুড চেইনের (খাদ্য শিকল) মাধ্যমে কোনো বিষাক্ত রাষায়নিক পদার্থ তেলাপিয়ার দেহে অনুপ্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
এছাড়া চাষাবাদের ক্ষেত্রে দেশের এখন গুড অ্যাকুয়াকালচার প্র্যাকটিস (জিএপি) অনুসরণ করা হচ্ছে বলেও জানান সচিব।
তিনি এই জন্য সংবাদ মাধ্যমকে সঠিক তথ্য তুলে ধরে তেলাপিয়া সর্ম্পকে ভোক্তাদের আতঙ্ক দূর করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমেরিকাসহ চীনের তেলাপিয়ায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী দ্রব্য পাওয়া গেলেও বাংলাদেশের তেলাপিয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ভয়েরর কোনো কারণই নেই।
সেমিনারে বলা হয়, বিশ্বে চাষযোগ্য মাছের মধ্যে তেলাপিয়ার অবস্থান দ্বিতীয় অর্থাৎ কার্পজাতীয় মাছের পরেই এর স্থান। আর বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বে তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে সপ্তম। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিশ্বে তেলাপিয়ার উৎপাদন ছিল ৪.৬৭ মিলিয়ন টন, যা বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।