আলমডাঙ্গা কয়রাডাঙ্গায় আবির হত্যা মামলায় মাদ্রাসা সুপার আবু হানিফকে গ্রেপ্তার দেখাল পুলিশ
ফলোচার্ট- চলমান ছেলেধরা-গলাকাটা গুজবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গলাটিপে হত্যার পর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে তা নিখোঁজের সাবলীল চিত্রনাট্য তৈরি করেন খুনি
নিউজ ডেস্ক:আলমডাঙ্গার কয়রাডাঙ্গা নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানার শিশু শিক্ষার্থী আবির হুসাইন হত্যাকা-ের ঘটনায় ওই মাদ্রাসার সুপার (মুহতামিম) হাফেজ মাওলানা মুফতি মো. আবু হানিফকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে পুলিশ। আজ শনিবার তাঁকে এ মামলায় আসামি করে আদালতে প্রেরণ করা হবে। এর আগে ঘটনার দিন গত মঙ্গলবার পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয় আবু হানিফসহ মাদ্রাসার পাঁচ শিক্ষককে। চার দিন ধরে টানা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে গতকাল শুক্রবার বিকেলে আবু হানিফকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার মাহবুবুর রহমান পিপিএম (বার)। তবে বেশকিছু তথ্য জানার জন্য বাকি চারজন শিক্ষককে এখন পর্যন্ত হেফাজতে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, গুজবের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গলাটিপে হত্যার পর দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে পুকুরে ফেলে নিখোঁজের সাবলীল চিত্রনাট্য তৈরি করেন খুনি। মূলত বলাৎকারের ঘটনা যেন ফাঁস না হয়, এ জন্য সুকৌশলে হত্যার পূর্বপরিকল্পনা করেন হত্যাকারী এবং ঘটনাটি ছেলেধরা গুজব বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন তিনি।
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান মুন্সি বলেন, শিশু শিক্ষার্থী আবিরকে বেশকিছু দিন ধরেই বলাৎকার করে আসছিলেন মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ। বিষয়টি ওই ছাত্র অন্যদের জানিয়ে দেওয়ার কথা বললে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন মাদ্রাসা সুপার। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মাদ্রাসার অদূরে একটি আমবাগানে নিয়ে ঠা-া মাথায় গলাটিপে খুন করা হয় আবির হুসাইনকে। এরপর হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে দেহ থেকে মাথাটি বিচ্ছিন্ন করে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। যেন সেটি খুঁজে না পাওয়া যায়। তবে অনেক খোঁজাখুঁজির পর পুলিশ ও র্যাবের ডগ স্কোয়াডের তথ্যানুযায়ী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ডুবুরি দল ওই নিখোঁজ মাথাটি খুঁজে বের করে। তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তার আবু হানিফকে শনিবার (আজ) আদালতে প্রেরণ করা হবে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর হাসপাতাল থেকে তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে আবারও থানায় ফিরিয়ে আনা হয়।
চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শেখ মাহবুবুর রহমান জানান, মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ জামায়াতের একজন সক্রিয় কর্মী। ২০১৩ সালে দামুড়হুদার দর্শনায় পুলিশের ওপর ভয়াবহ হামলা মামলার এজাহারনামীয় আসামি ছিলেন হানিফ। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি দেশ যখন ছেলেধরা গুজবে ভাসছে, মাদ্রাসার ছাত্রটিকে হত্যার জন্য আবু হানিফ ঠিক এ সময়টিকেই বেছে নেন। ঠান্ডা মাথায় খুন করে গুম করা হয় তার মাথাটি। যাতে সারা দেশে গুজব ছড়িয়ে নিজেকে আড়াল রাখতে পারেন মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ।
উল্লেখ্য, আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়রাডাঙ্গা নূরানি হাফিজিয়া মাদ্রাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবির হুসাইন গত মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর নিখোঁজ হয়। পরদিন সকালে মাদ্রাসার অদূরে একটি আমবাগানের ভেতর থেকে তার মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে ঘটনার দিনই মাদ্রাসার সুপার মুফতি আবু হানিফসহ পাঁচ শিক্ষককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মাদ্রাসার অদূরে একটি পুকুরে নিহত আবির হুসাইনের মাথাটি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি ডুবুরি দল। ঘটনার দিন রাতেই নিহত আবিরের মা গোলাপী বেগম ছেলে হত্যার ঘটনায় আলমডাঙ্গা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। যার মামলা নম্বর ৩২। ওই মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়।