নিউজ ডেস্ক:১ মাসে সর্প দংশনে ৪ জনের মৃত্যু : আহত ১৭
সাপে কাটা রোগীদের বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. খাইরুল কবির’র পরামর্শ
আফজালুল হক: চুয়াডাঙ্গা জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়েছে সাপের উপদ্রপ। গত ১ মাসে সাপের কামড়ে শিশু, স্কুলছাত্রী ও বৃদ্ধাসহ কমপক্ষে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১৭ জন আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। এবং এরমধ্যে অনেকে চিকিৎসাধিনও আছেন। সাপের উপদ্রপ বেড়ে যাওয়া আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সাধারন মানুষের মধ্যে। বিশেষ করে যারা গ্রামাঞ্চলে বসবাস করেন তাদের সাপ ভীতি প্রকট হয়েছে। রাতদিন পা ফেলছে দেখেশুনে হিসেব করে। একেরপর এক সর্প দংশনের রোগী চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি হলেও তারা পাচ্ছেন সুচিকিৎসা। কারন গত তিন মাস যাবত হাসপাতালে এন্টি স্নেক ভেনম সরবরাহ নেই বলে জানাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি ছোট-বড় ফার্মেসিগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে না এন্টি স্নেক ভেনম। এবিষয়ে ফার্মেসি মালিকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, এন্টি স্নেক ভেনম হাসপাতাল থেকেই রোগীরা পান, আমাদের বিক্রি একেবারেই হয়না। বিধায় আমরা এন্টি স্নেক ভেনম বিক্রিতে উৎসাহ দেখায় না।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডা. খাইরুল আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালে গত ৩ মাস যাবত এন্টি স্নেক ভেনম সরবরাহ নেই। উর্দ্ধতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছেন কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন আমি ঢাকা থেকে আজ চুয়াডাঙ্গাতে আসলাম। আমার চৌকিদার আদি এন্টি স্নেক ভেনমের জন্য আবেদন করেছে কিনা আমার জানা নেই। আমি বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখছি।
জানা গেছে, গত এক মাসে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সাপের কামড়ে ওঝার নিকট, বিনা চিকিৎসা ও এন্টি স্নেক ভেনম না দিতে পারাই দুই স্কুলছাত্রী, একটি শিশু ও একজন বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত ৯ জুলাই সোমবার দামুড়হুদা উপজেলার কুড়–লগাছি ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামে আব্দুল্লাহ (৮) নামের এক ৩য় শ্রেনীর ছাত্র সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে মারা যায়। ওইদিন রাত ১টার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় একটি সাপ দংশন করে। কিছুক্ষণ পরে আব্দুল্লাহ বিষয়টি টের পেয়ে চিৎকার দিলে তার পরিবাররের সদস্যরা ছুটে আসে। তাকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে আব্দুল্লাহ’র মৃত্যু হয়।
এছাড়া গত মাসের ৩০ জুন আলমডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের একইদিনে সাপের কামড়ে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়। এবং ওই একই সাপের কামড়ে আরো ১২জন আহত হোন। এছাড়া এক মাসের মধ্যে পৃথকস্থানে এক বৃদ্ধার মৃত্যুসহ আরো ৩ জন সাপের কামড়ে আহত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে।
এদিকে, গত কয়েকদিন আগে সাপের কামড়ে একটি রোগী এন্টি স্নেক ভেনামের অভাবে তার মৃত্যু হয়।
এবিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেড়িকেল অফিসার (আরএমও) ডা. শামিম কবিরের কাছে এন্টি স্নেক ভেনমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখন ঢাকাতে আসলাম। আগামীকাল আমার অফিসে আসেন কথা হবে।
সাপে কাটা রোগীদের হাসপাতালে নেয়ার পূর্বে কি কি করণীয় সে বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার সিভিল সার্জন ডাক্তার খাইরুল কবির প্রাথমিক পরামর্শ দিয়ে বলেন, ১. সাপে কাটলে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই রোগীকে ওই স্থানেই শুইয়ে দিন। রোগীর নড়াচড়া সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে, যাতে বিষ তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে না পড়ে। ২. সাপ যদি হাতে বা পায়ে কামড় দেয় তাহলে বাঁধন দিতে হবে। দংশিত স্থানের কিছুটা ওপরে দড়ি বা হাতের কাছে যা পান, তা দিয়েই বেঁধে ফেলুন। মনে রাখবেন বাঁধনটা যেন অস্থিসন্ধিতে যেমন কনুই, কবজি বা গোড়ালি এবং গলা বা মাথায় না হয়। যে দড়ি বা কাপড় দিয়ে বাঁধবেন তা যেন চওড়ায় দেড় ইঞ্চি হয়, কখনো তা যেন সরু সুতোর মতো বা রাবার ব্যান্ডের মতো না হয়। বাঁধনটি যেন খুব বেশি শক্ত না হয়। বাঁধনটি এমনভাবে দিতে হবে যেন একটা আঙুল ওই বাঁধনের মধ্যদিয়ে যেতে পারে। যদি বাঁধনটি শক্ত হয়, তাহলে ঢিলা করে দেবেন, তবে কখনোই তা খুলে ফেলবেন না। বাঁধনটি দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো রক্ত চলাচল বন্ধ রাখা। তবে বাঁধনটি একটানা ২০ মিনিটের বেশি একভাবে রাখবেন না। প্রতি ১০মিনিট অন্তর তা আলগা করে দিতে হবে। ৩. দংশিত স্থানটি পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ৪. প্রাথমিক চিকিৎসার পর রোগীকে দ্রুত নিকটতম হাসপাতালে কিংবা স্বাস্থকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে, যেখানে অ্যান্টিভেনম সিরাম বা সর্পবিষনাশী সিরাম মজুদ রয়েছে। প্রয়োজনে রোগীকে টিটেনাস বা ধনুষ্টঙ্কারের প্রতিষেধক দিতে হবে। ৫. রোগী যেন কোন ভাবেই ভয় না পাই সে দিকে খেয়াল রেখে তাকে সাহস দিতে হবে। ৬. বিষধর সাপের কামড়ের আধুনিক চিকিৎসা আছে। তাই ঝাড়ফুঁক, তাবিজ–কবজ আ কবিরাজি চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে নিকটস্থ হাসপাতালে যেতে হবে। ৭. সাপের কামড়ের পর রোগীর কথা বলতে অসুবিধা হলে, চোখের পাতা ভারী হলে, মুখ থেকে লালা ঝরলে বা রোগীর বমি হতে থাকলে বুঝতে হবে তাকে বিষধর সাপ কামড়েছে। এ ক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ডাক্তারের কাছে নিতে হবে।