বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে বসন্ত বরণ করবে চুয়াডাঙ্গাবাসী
নিউজ ডেস্ক:গাছের পাতা ঝরতে শুরু করেছে আরও কয়েকদিন আগেই। ইট-পাথরের শহরেও শোনা যাচ্ছিল কোকিলের কুহুতান। আর শীতের খোলস পাল্টে প্রকৃতি তার রূপ বদলাতে শুরু করেছে তারও আগে। আজ বসন্তের প্রথম দিন। ঋতুচক্র এখন যেন আর পঞ্জিকার অনুশাসন মানছে না ঠিকই, কিন্তু বসন্ত তার আগমনী জানান দেয় ইট-কাঠ পাথরের শহরের কোকিলের ডাক না শোনা গেলেও-এর বাতাসে, এর আকাশে। সকালের দিকে তীব্র কুয়াশা আর একটু বেলা যেতে ঝকঝকে রোদ। বসন্তের এই আবহে চাদরমোড়া শীতকে বিদায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে গত কয়েকদিনে। ফাল্গুনের দ্বিতীয় দিনে ভালবাসা দিবস সেই উৎসবকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়। পরপর দু’দিনের তারুণ্যে মেলা যেন নতুন প্রাণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
বাঙালির জীবনে বসন্তের উপস্থিতি সেই অনাদিকাল থেকেই। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্ত ঠাঁই করে নিয়েছে স্বমহিমায়। আর শহুরে বসন্তেও যেন সেই আত্মীয়তা থাকে। কানে কানে বলে যায়, আজ ভুলিয়ো আপন পর ভুলিয়ো। ‘আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে’। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। বসন্ত মানেই প্রাণচঞ্চলতা। কচিপাতায় আলোর নাচন। বাঙালি জীবনে বসন্ত আর আন্দোলন যেন মিলেমিশে একাকার। বসন্তের আগমন বার্তা ১৯৫২ সালের সেই ফাল্গুন মনে করিয়ে দেয় যেদিন পিচঢালা রাজপথে লাল ফুল হয়ে ভাষা শহীদেরা নিহত হয়েছিলেন শাসকের গুলিতে। বসন্তেই বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পথে নেমেছিল। তাই কেবল প্রকৃতি আর মনে নয়, বাঙালির জাতীয় ইতিহাসেও বসন্ত আসে বারবার।
এদিকে, বসন্ত বরণ উপলক্ষে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। আজ বুধবার বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যে দিয়ে বসন্ত বরণ করবে চুয়াডাঙ্গাবাসী। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বিকাল সাড়ে ৩টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে বসন্ত সাজে বর্ণাঢ্য শোভযাত্রা, বিকাল ৪টায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা পরিবেশ ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা।
বসন্ত বরণ উৎসব পালন সম্পর্কে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র দাস বলেন, দেশের আবহমান সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে এগিয়ে নেওয়া আর সেই সঙ্গে নতুন প্রজন্মকে দেশের আবহমানকালের সংস্কৃতিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই এই ধরণের পিঠা উৎসব ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। তা ছাড়া আমাদের নারীরা কোনো না কোনোভাবে কর্মজীবী তাই পরিবার পরিজন নিয়ে সবাই একসঙ্গে হওয়ার আনন্দটা সব সময় অন্যরকম।
মোগল স¤্রাট আকবর প্রথম বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেন ১৫৮৫ সালে। নতুন বছরকে কেন্দ্র করে ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেন তিনি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বসন্ত উৎসব। তখন অবশ্য ঋতুর নাম এবং উৎসবের ধরনটা এখনকার মতো ছিল না। তাই পহেলা ফাল্গুন বা বসন্ত উৎসব কেবল উৎসবে মেতে ওঠার সময় নয়। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলার গৌরবময় ঐতিহ্য, বাঙালিসত্তা। সে ঐতিহ্যের ইতিহাসকে ধরে রাখতে পারলেই বসন্ত উৎসবের সঙ্গে নতুন প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে পারবে বাঙালি চেতনাকে।
বঙ্গাব্দ ১৪০১ সাল থেকে প্রথম ‘বসন্ত উৎসব’ উদযাপন করার রীতি চালু হয়। সেই থেকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ বসন্ত উৎসব আয়োজন করে আসছে। আজ দিনভর চলবে তাদের বসন্তের উচ্ছ্বাস প্রকাশ। ফোন, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলবে বসন্তের শুভেচ্ছা বিনিময়। আজ নানা আয়োজনে বসন্তকে বরণ করবে বাঙালি।