তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল ভাঙচুর; পুলিশের ঘটনাস্থল পরিদর্শন : মামলা
নিউজ ডেস্ক:চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের দোতলায় ইমন গার্মেন্টসের সামনে থেকে টেনে হিচড়ে রাশেদ নামে এক যুবককে ফেলে দিয়ে আহত করার জেরে দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ায় চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রের শ্বশুর আব্দুল হালিমের বাড়িতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে একদল দুর্বৃত্ত। হামলায় প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকার মালামাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসিসহ ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় আব্দুল হালিম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে। এদিকে মার্কেটের ঘটনায় আহত যুবক রাশেদ সদর হাসপাতলে চিকিৎসাধীন রয়েছে। পরিবারের উপর হামলা এটা কোনো সুস্থ রাজনীতি হতে পারে না বলে জানিয়েছেন পৌর মেয়র জিপু। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলা থেকে রাশেদকে আহত করার পর রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ায় মেয়রের শ্বশুর আব্দুল হালিমের বাড়িতে হামলা চালায় দূর্বৃত্তরা।
জানা যায়, পূর্ব শত্রুতার জেরে চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় ইমন গার্মেন্টসের সামনে থেকে রাশেদ নামে এক যুবককে টেনে হিচড়ে নিচে ফেলে দেয় একদল যুবক। পরে ঘটনাস্থল থেকে আহত রাশেদকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে তার প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। সে দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার মৃত আব্দুস সালামের ছেলে। এ ঘটনার এক ঘন্টা পর চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর শ্বশুর দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়া এলাকায় আব্দুল হালিমের বাড়িতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় একদল দূর্বৃত্তরা। এ সময় হামলাকারীরা দুটি ফ্রিজ, ড্রেসিং টেবিল, শোকেচসহ শোকেচের রাখা বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বেসিন ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়াও রান্না ঘর, শোবার ঘরের খাট, আলনা, গ্যাসের চুলা, রাইচকুকার ভেঙ্গে ফেলাসহ ব্যাপক তান্ডব চালায় হামলাকারীরা। এমনকি হামলাকারীরা ডাইনিং টেবিলে রাখা খাবারও ফেলে দেয়। হামলার বিবর্ণচিত্র দেখে আশেপাশের সাধারণ মানুষও হতবাক হয়ে যায়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পথে মেইন সড়কের পাশে এলাকার যুবকদের একটি ক্লাব ও দোকানেও দাঁ দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে ক্লাবসহ দোকানের অনেকগুলো টিন কেটে যায়।
এদিকে এ ঘটনার পর চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), তদন্তসহ ডিবি পুলিশ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় পৌর মেয়রের শ্বশুর আব্দুল হালিম বাদি হয়ে ১৯ জনের নাম উল্লেখসহ ৩/৪জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছে। এই হামলার ঘটনা জানাজানি হলে শহরজুড়ে নেমে আসে এক চাপা আতঙ্ক। হামলার সাথে সাথে আশেপাশের দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। প্রধান সড়কসহ আশেপাশের এলাকা জনশুন্য হয়ে পড়ে।
এদিকে নিউ মার্কেটের ঘটনায় আহত যুবক অভিযোগ করে বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে চুয়াডাঙ্গার তাপু এবং জনি এবং অজ্ঞাত ৪ জন তার উপরে হামলা করে। এ সময় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলার ইমন গার্মেন্টসের সামনে থেকে তাকে মারধর করে নিচে ফেলে দেয়। রাশেদ আরো জানান, গত এক সপ্তাহ আগে দৌলতদিয়াড় টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের সাথে জনি ও তাপু অসদাচরণ করায় রাশেদ তাদেরকে অপমান করে কলেজ থেকে বের করে দেয়। তাদের মধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে রেশারেশি চলছিল। পরে গতকাল রাত ৯টার দিকে চুয়াডাঙ্গা নিউ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় জনি ও তাপু ও অজ্ঞাত ৪ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে রাশেদের উপর হামলা করে এবং তাকে মারধর করে নিচে ফেলে দেয়। এসময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
অপরদিকে, বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার মৃত লতিফ মন্ডলের ছেলে পৌর মেয়রের শ্বশুর আব্দুল হালিম অভিযোগ করে বলেন, গতকাল রাত ১০টার দিকে দৌলতদিয়াড়সহ আশপাশ এলাকার একদল যুবক আমার বাড়ির গেটের সামনে এসে আমার নাম ধরে ডাকে। পরে আমার স্ত্রী মেইন গেট খুলে দিলে দৌলতদিয়াড়ের বাদলপাড়ার পুকুর ছেলে রানা, দক্ষিণপাড়ার মিন্টুর ছেলে নাঈম, সর্দারপাড়ার মিরাজ ও তার ভাই সাহারিয়ারসহ আরো কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ঘরে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা দুটি ফ্রিজ, ড্রেসিং টেবিল, শোকেচসহ শোকেচের রাখা বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বেসিন ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়াও রান্না ঘর, শোবার ঘরের খাট, আলনা, গ্যাসের চুলা, রাইচকুকার ভেঙ্গে ফেলাসহ ব্যাপক তান্ডব চালায় হামলাকারীরা। এমনকি হামলাকারীরা ডাইনিং টেবিলে রাখা খাবারও ফেলে দেয়। এমনকি আমার স্ত্রীকেও মারধর করাসহ গালিগালাজ করতে থাকে। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকার মালামাল ভেঙ্গে ফেলেছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, নিজ শ্বশুর বাড়িতে হামলায় ভাঙচুরের ঘটনায় পৌর মেয়র ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপুর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তিনি বর্তমানে ঢাকাতে অবস্থান করছেন। হামলার বিষয়ে মুঠোফোনে শুনেছেন। পরিবারের উপর হামলার বিষয়টি নিয়ে তিনি এর তীব্র নিন্দা জানান। তিনি বলেন, পরিবারের উপর হামলা এটা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। এটা অসুস্থ রাজনীতি। শান্ত চুয়াডাঙ্গাকে অশান্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে এক শ্রেণীর কুচক্রী মহল।
এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ওসি দেলোয়ার হোসেন খাঁনের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ বিষয়ে দৌলতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার আব্দুল হালিম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে। সাথে সাথে পুলিশ অভিযুক্তদের ধরতে কাজ শুরু করেছে। একই সাথে শহরের মধ্যে আর যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে স্বজাগ রয়েছে পুলিশ।