নিউজ ডেস্ক:
বহুকাল আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা যখন বনে-বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়াতেন, তখন জলে-স্থলে তাদের মোকাবেলা করতে হতো ভয়ংকর সব প্রাণীদেরকে। এসব প্রাণীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা এবং খাবারের জন্য তখন থেকে একরকম বাধ্য হয়েই মানুষ হত্যা করেছে এসব প্রাণীদেরকে।
মানুষ, অন্যান্য প্রাণীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা, পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা আর প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সামনে টিকতে না পেরে ডাইনোসরের মতো অনেক প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর বিলুপ্তির কথা আমরা জানি। সম্ভবত আমরা অর্থাৎ আধুনিক যুগের মানুষরা আমাদের পূর্বপুরুষদের তুলনায় কিছুটা হলেও সৌভাগ্যবান। কারণ আমাদের সেইসব ভয়ংকর প্রাণীর মোকাবেলা করতে হয় না।
বিভিন্ন কারণে এসব অদ্ভুত-ভয়ংকর দর্শন আর হিংস্র প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীগুলোর বেশিভাগই বিলুপ্ত হয়ে গেলেও আজও তাদের কারো কারো দেখা মেলে আমাদের এই ধরণীর বুকে। বিবর্তনের পথ ধরে তাদের সমকালীন বেশিরভাগ প্রাণীর বিবর্তন আর বিলুপ্তি ঘটলেও এই আটটি প্রাণী মিলিয়ন মিলিয়ন বছর ধরে রয়ে গেছে প্রায় অবিবর্তিত অবস্থায়-
অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়া : ডাইনোসরেরও আবির্ভাবের আগে থেকে বর্তমান সময় পৃথিবীর বুকে পদচারণাকারী প্রাণীটির নাম অশ্বক্ষুরাকৃতি কাঁকড়া। অবিশ্বাস্যভাবে প্রায় ৫৪০ মিলিয়ন বছর ধরে এরা বসবাস করে আসছে এই ধরণীতে। অগণিত প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা এবং অন্যান্য আগ্রাসী প্রাণীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার জন্য এদের বাড়তি উপযোগ যুগিয়েছে শরীরকে আবৃত করে রাখা ভয়ংকর সুন্দর দর্শন খোলস আর পাঁচ জোড়া চোখ। পরোক্ষভাবে এটি একটি মানুষের জন্য উপকারী একটি প্রাণী। এদের রক্ত দিয়ে কিছু কিছু ভ্যাকসিন এবং ওষুধের কার্যকরিতা পরীক্ষা করা হয়।
দৈত্যাকার স্কুইড : যদিও বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত এই প্রাণীটির আবির্ভাবের সঠিক সময়কাল আবিষ্কার করতে পারেননি, তবুও এটা নিশ্চিত যে দৈতাকার (জায়ান্ট) স্কুইড একটি প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী। অ্যান্টার্কটিকা সাগরে বাস করা এই প্রাণীটির ওজন প্রায় ৭৭০ পাউন্ড যা একটি বড়সড় যাত্রীবাহী বাসের ওজনের সমান!
সিটেনোফোরস : দেখতে জমকালো এই সামুদ্রিক প্রাণীটির পৃথিবীতে আবির্ভাব প্রায় ৭০০ মিলিয়ন বছর আগে। পৃথিবীতে বসবাসকারী আদিমতম প্রাণীর মধ্যে এটি একটি। সুন্দর কর্ষিকার মতো উপাঙ্গের সাহায্যে এরা সাঁতরে বেড়ায় গভীর সমুদ্রের তলদেশে।
নটিলাস : একশটির মতো প্রজাতির মধ্যে মাত্র ছয় প্রজাতির নটিলাস বর্তমানে প্রকৃতিতে বিদ্যমান। এটিও একটি সামুদ্রিক প্রাণী। এর রয়েছে একটি অবিশ্বাস্য রকম সুন্দর খোলস যা সাবমেরিনের মতো কাজ করে। খোলসের ভেতরে বিদ্যমান চেম্বারে এরা প্রয়োজনমত তরল বা গ্যাস সঞ্চয় করে রাখতে পারে যা পানির ওপরের দিকে উঠতে বা গভীরে যেতে সাহায্য করে। বিগত ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে এরা একদম অবির্বতিত অবস্থায় বাস করছে এই পৃথিবীতে।
টুয়াটারা : টুয়াটারা-কে বলা হয় ডাইনোসরের সবচেয়ে কাছের জীবিত বংশধর। ডাইনোসরের সঙ্গে সাদৃশ্যের জন্য অনেক সময় বিজ্ঞানীরা একে ‘জীবন্ত ডাইনোসর’ নামেও আখ্যায়িত করে থাকেন। ২২০ মিলিয়ন বছর ধরে প্রায় অবিবর্তিত অবস্থায় ডাইনোসরের এই নিকটাত্মীয়রা বাস করে আসছে ধরণীর বুকে। নিউজিল্যান্ডের দ্বীপ এবং সমতল ভূমিতে এদের আবাসস্থল।
ট্যাডপোল শ্রিম্প : ট্যাডপোল শ্রিম্পের আকার-আকৃতির মধ্যেই একটা পৌরাণিক আবহ রয়েছে। এটা মূলত এক বিশেষ প্রজাতির চিংড়ি। এরা খুব দ্রুত ডিম থেকে প্রাপ্তবয়ষ্ক অবস্থায় রূপান্তরিত হয়। মাত্র তিন সপ্তাহেই একটি ট্যাডপোল শ্রিম্প আকার-আকৃতিতে পূর্ণাঙ্গতা পায়। ২৫০ মিলিয়ন বছর ধরে এরা অবিবর্তিত রয়েছে।
কোয়েলাকান্থ : ভয়ংকর দর্শন এই মাছটি পুনঃআবিষ্কৃত হয় ১৯৩৮ সালে। এর আগে বিজ্ঞানীরা মনে করতেন এটা মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরের সঙ্গে সঙ্গেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু উল্লেখিত সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে দেখা মেলে এই মাছটির। ৩৫০ মিলিয়ন বছরের আগের ফসিলের সঙ্গে বর্তমানে জীবিত কোয়েলাকান্থের সাদৃশ্য একেবারেই অপরিবর্তিত।
এলিফ্যান্ট শার্ক : নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার সুখ্যাতি রয়েছে সেখানকার বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সম্পদ আর প্রাণীর জন্য। আর এই অঞ্চলেই দেখা মেলে বিচিত্র প্রজাতির হাঙর ‘এলিফ্যান্ট শার্ক’-এর। নিজেদের অনন্য সুন্দর চঞ্চুর সাহায্যে এরা শিকার করে। আর এরা অবিবর্তিত অবস্থায় ধরণীতে বিরাজ করছে ৪২০ মিলিয়ন বছর ধরে।