নিউজ ডেস্ক:
চীন নিজেদের মতো করেই মহাকাশ গবেষণায় এক পা-দু’পা করে এগোচ্ছিল। লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র (ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন বা আইএসএস)-এর আদলে পৃথিবীর কক্ষপথে নিজস্ব একটি ‘স্পেস স্টেশন’ তৈরি করবে তারা।
তাছাড়া ২০২৪ সালে কাজ থেকে অবসর নেবে আইএসএস। ফলে চীনা মহাকাশ গবেষণাগার নিয়ে উৎসাহ ছিল বহু দেশেরই। অনেকেই তাদের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিল। ২০১১ সালে গবেষণাগারের প্রথম ইটটি গেঁথে ফেলে চীন। পৃথিবীর কক্ষপথে তারা পাঠিয়েছিল কৃত্রিম উপগ্রহ ‘তিয়ানগং-১’কে। সম্প্রতি পাঠানো হয় দ্বিতীয় উপগ্রহটিও— ‘তিয়ানগং-২’। কিন্তু চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা শিনহুয়া জানিয়েছে, ‘তিয়ানগং-১’-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে চীনা উপগ্রহটি। এ বছরের শেষে বা ২০১৮ সালের শুরুর দিকে পৃথিবীর উপরে ভেঙে পড়বে ‘তিয়ানগং-১’। যদিও পৃথিবীর ঠিক কোনখানে আছড়ে পড়বে সেটি, তা বলতে পারছে না চীনও।
তবে আশার কথা, উপগ্রহটি আকারে বেশ ছোট। ওজন ৮ টন (৭২৫৭ কেজি)। বিজ্ঞানীদের মতে, বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে ঘর্ষণে হয়তো ‘তিয়ানগং-১’-এর ধ্বংসস্তূপের সম্পূর্ণটাই পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যদি বা ওই ‘স্পেস ল্যাব’-এর কিছু বেঁচে থাকে, সঙ্কুচিত হয়ে তা একেবারে ছোট্ট আকার নেবে। আশঙ্কা অবশ্য একটা থাকছেই। আকারে একেবারে ছোট হয়ে গেলেও, সে যে বুলেটের গতিতে ছুটে আসছে!
‘তিয়ানগং’ শব্দের অর্থ ‘স্বর্গের প্রাসাদ’। কিন্তু সেই প্রাসাদ যে এত তাড়াতাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে, কল্পনাও করেনি চীন। মানুষ ছাড়াই মহাকাশে পাঠানো হলেও, আইএসএস’র মতো মানুষ পাঠানোর বন্দোবস্ত ছিল তিয়ানগং-১-এও। চীনের আশা ছিল, তাদের মহাকাশ গবেষণাগারটিই ভবিষ্যতে নভশ্চরদের আন্তর্জাতিক ঘাঁটি হয়ে উঠবে।
সম্প্রতি মহাকাশে তিয়ানগং-২ পাঠিয়েছে চীন। পোল্যান্ড, সুইৎজারল্যান্ড, চীনের মিলিত উদ্যোগে তৈরি এই কৃত্রিম উপগ্রহটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩৯৩ কিলোমিটার উপরে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে। মহাকাশ থেকে পৃথিবীর উপর নজরদারি চালাচ্ছে সে। সেখানেই পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যার, মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে নানা কঠিন গবেষণা করছে তিয়ানগং-২।
১৯৭৯ সালে আমেরিকার প্রথম স্পেস স্টেশন ‘স্কাইল্যাব’ও এ ভাবেই ভেঙে পড়েছিল। প্রথম ‘সন্তান’কে হারিয়ে বিধ্বস্ত চীন তাই এখন ছোট জনের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে।
সূত্র: আনন্দবাজার।