ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছিল ছাত্রলীগ বিভিন্ন সংগঠনে যোগ দিয়ে আবার মাঠে ফিরে আসবে। নেটিজেনরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এরকম আলোচনা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো। অতীতে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে একসময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও ছাত্রলীগ এই ব্যাপারটি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছে। এদিকে ছাত্রশিবির তখন নিষিদ্ধ থাকায় তাদের পক্ষ থেকে তেমন বক্তব্য পাওয়া যেত না।
সম্প্রতি ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পরে নানান জায়গায় এই বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়। নেটিজেনরা বলছিলেন, নিষিদ্ধের পর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পরিচয় গোপন করে বিভিন্ন সংগঠন যেমন; ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র ফ্রন্টসহ বাম ঘরানার দলগুলো ও ছাত্র সমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ফিরে আসবে! বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রোল হলেও এবার সত্যি সত্যি এমন একটি ঘটনা ঘটেছে!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী মাসুদ কিবরিয়াকে সভাপতি ও পরমা মোস্তফাকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্র ইউনিয়নের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। শনিবার (২৬ অক্টোবর) রাতে কমিটির দফতর সম্পাদক মুন হোসেন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই তথ্য জানানো হয়।
এদিকে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী কমিটিতে শীর্ষ পদ পাওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ট্রোল করা নেটিজেনদের দাবিই সত্য হলো! ছাত্রলীগ ফিরে আসলো ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী হয়ে!
জানা যায়, নবগঠিত কমিটির সভাপতি মাসুদ কিবরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি প্রথম বর্ষে থাকাকালীন সদ্য নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নভেম্বরে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীকে র্যাগিংয়ের অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক পরমা মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া কমিটির সহকারি সাধারণ সম্পাদক মুক্তাদির করিম কুয়াশার বিরুদ্ধেও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে।
ছাত্র ইউনিয়নের নতুন এই কমিটি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।
রাকিব হোসেন নামের একজন ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামের ফেসবুক গ্রুপে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মতো ঐতিহ্যবাহী একটা সংগঠনের ব্যানারে এসব ছাত্রলীগ কর্মীর প্রত্যাবর্তনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’
ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগের বিষয়ে মাসুদ কিবরিয়া বলেন, ‘প্রথম বর্ষে হলে সিটের জন্য আমি কিছুদিন ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। পরে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলে তারা আমাকে হল থেকে বের করে দেয়। তাছাড়া ছাত্রলীগের রাজনৈতিক মতাদর্শ আমার কখনই পছন্দ ছিল না।’
ছাত্র ইউনিয়নের সদ্য বিদায়ী সভাপতি শাকিলা খাতুন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। তারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন। এজন্যই আমরা তাদেরকে কমিটিতে রেখেছি। তবে তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’