নিউজ ডেস্ক:
আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট বা মূসক) ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২। কার্যকর হওয়ার আগেই বেশ কিছুদিন ধরে চলছে নানা বিতর্ক। বিশেষ করে মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, নতুন ভ্যাট আইনে সব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কার্যকর হলে নিত্যপণ্যের বাজারে অধিকাংশ পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। বাজার হবে অস্থিতিশীল।
তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বরাবরই দাবি করছে, নতুন ভ্যাট আইনে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থাকছে ভ্যাটের বাইরে। এমনকি বর্তমানে ভ্যাট আছে এমন অনেক প্রয়োজনীয় পণ্যে ভ্যাট থাকছে না নতুন আইনে। নতুন আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় হাজারের বেশি জিনিসপত্র ভ্যাটের বাইরে থাকবে।
এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, নতুন ভ্যাট আইনে জনসাধারণের সুবিধায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে কোনো ভ্যাট আরোপ করা হবে না। একই সঙ্গে ছোট ব্যবসায়ীরা ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ভ্যাট অব্যাহতি পাবেন। ফলে নতুন ভ্যাট আইন উদ্বেগের কিছু নেই। তিনি বলেন, অনেক সময় আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা সম্বলিত এ আইন নিয়ে অপব্যাখ্যা হয়। সব সময় এর জবাব দিতে গেলে রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ে। ব্যবসায়ীরা নতুন এ আইন নিয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান ও সহায়তা করবেন বলে আশা করি।
এনবিআর সূত্র জানায়, নতুন ভ্যাট আইনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে অন্তত এইচ এস কোডের আওতায় ৬০০ থেকে হাজার পণ্য ভ্যাটের বাইরে থাকবে। সব মিলিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় হাজারের বেশি জিনিসপত্র ভ্যাটের বাইরে থাকবে। এমনকি বর্তমানে ভ্যাট দিতে হয় এমন অনেক পণ্যে নতুন আইনে ভ্যাট থাকছে না। যেমন : বোতলজাত সয়াবিন তেলে বর্তমান আইনে ভ্যাট দিতে হচ্ছে। কিন্তু নতুন ভ্যাট আইনের আওতায় ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে।
অর্থনীতির ভাষায় আমরা পণ্যের তিন অবস্থা দেখতে পাই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও চূড়ান্ত পণ্য। বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট/মূসক) আইনে কৃষি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও চূড়ান্ত পণ্যে ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। যেখানে নতুন ভ্যাট আইনে শুধু চূড়ান্ত পণ্যের ক্ষেত্রে ভ্যাট দিতে হবে বলে এনবিআর জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমান আইন অনুসারে কৃষিজাত কোনো পণ্য কেটে কিংবা বয়েল করে প্যাকেটজাত দ্রব্য হিসেবে বিক্রির ক্ষেত্রে ভ্যাট প্রযোজ্য হবে। যেমন, প্যাকেটজাত কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মুরগি, গরু কিংবা খাসির মাংস ইত্যাদি। কিন্তু নতুন আইনের ওইসব পণ্য ভ্যাটের বাইরে থাকবে। এছাড়া সরাসরি খেত বা খামার থেকে আসা পণ্য এমনিতেই ভ্যাটের আওতামুক্ত থাকছে। সে হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্যে ভ্যাট থাকছে না।
এ বিষয়ে এনবিআর সদস্য ও ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, নতুন ভ্যাট আইনের কারণে ভোক্তা পর্যায়ে খরচ বাড়বে না। জীবনযাত্রার মানে এর কোনো ঋণাত্মক চাপ তৈরি হবে না। বর্তমান আইনে ১৫টি সেবা ও প্রায় ৭০টি পণ্য ব্যতীত সব ক্ষেত্রে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য। ১৫% ভ্যাট নতুন নয়। ১৫টি সেবায় সংকুচিত ভিত্তিমূল্য ও প্রায় ৭০টি পণ্যে ট্যারিফ ভ্যালুর কারণে বিক্রয় পর্যায়ে কম ভ্যাট দিতে হলেও ক্রয়পর্যায়ে পরিশোধিত ১৫% ভ্যাট ফেরত পাওয়া যায় না। ফলে ভ্যাট বেশি হয়। যারা বিক্রিতে ১৫% ভ্যাট দেন তারা আগে কেনার সময় পরিশোধিত ১৫% ভ্যাট ফেরত পান। ফলে তাদের শুধু সংযোজনের ওপর ভ্যাট দিতে হয়।
আবাসন খাতে নতুন ভ্যাটের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, নির্মাণ সংস্থায় (যেমন সরকারি নির্মাণ) বর্তমানে ৬% ভ্যাট। উপকরণে দেন ১৫%। মোট ভ্যাট বেশি হয়। নতুন আইনে নির্মাণে ১৫% দিলেও ২৫% গড় সংযোজনে ২.২৫% নিট ভ্যাট হবে যা ৬% থেকে অনেক কম। এখানেও ভ্যাট কমবে।
রেজাউল হাসান বলেন, গরিবের ব্যবহার্য নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছু অব্যাহতিপ্রাপ্ত। এ ধারা নতুন আইনেও অব্যাহত থাকবে। বরং হিসাবভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হলে জনগণের পরিশোধিত মূসক সরকারি কোষাগারে পৌঁছানো নিশ্চিত হবে বিধায় সরকার গরিবের জন্য বেশি অর্থ বরাদ্দ করতে পারবে।
এনবিআর থেকে আরো জানা যায়, বর্তমানে যেসব ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত মূল্য বা ট্যারিফ মূল্য রয়েছে, নতুন ভ্যাট ব্যবস্থায় সেসব ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট পরিশোধ করে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করা হলে ওই স্তরে ভ্যাটের প্রকৃত ভার ২ বা ৩ শতাংশের বেশি হবে না বিধায় মূল্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই। তাছাড়া মূল্য বৃদ্ধি পায় নানা কারণে। যেমন মফস্বল থেকে শাক-সবজি ঢাকায় পৌঁছাতে দুই-তিন গুণ মূল্য বেড়ে যায়। সেখানে ভ্যাটের কোনো প্রভাব নেই। ঠিকভাবে হিসাবপত্র রেখে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করলে অনেক ক্ষেত্রে মূল্য কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এনবিআর মনে করে নতুন ভ্যাট আইনে বার্ষিক ত্রিশ লাখ টাকা বিক্রয়কারী সব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটমুক্ত রাখা হয়েছে। তাই নতুন ভ্যাট ব্যবস্থায় ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানকে এমনিতেই ভ্যাট সংক্রান্ত হিসাবপত্র রাখতে হবে না।