নিউজ ডেস্ক:
মন নরম করা, আখেরাতের স্মরণ বৃদ্ধি করা এবং দুনিয়ার সম্পদ, খ্যাতি ও ক্ষমতার মোহ হ্রাস করার পেছনে কবর জিয়ারতের রয়েছে শক্তিশালী প্রভাব। তাই তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য কবর জিয়ারতকে সুন্নত আমল করে দিয়েছেন।
তবে কবর জিয়ারতের এই আমল কি শুধুই পুরুষের জন্য সুন্নত? নাকি পুরুষদের মতো নারীদের জন্যও তা সুন্নত- এটা নিয়ে সমাজে বিভ্রান্তি রয়েছে। সেই সঙ্গে কিছু প্রান্তিকতাও দেখা যায়- যার কোনোটাই সমর্থনযোগ্য নয়।
নারীদের কবর জিয়ারত প্রসঙ্গে বিপরীতমুখী দু’ধরণের হাদিস পাওয়া যায়। ইমাম তিরমিজি (রহ.) তার প্রসিদ্ধ সুনানে (১০৫৬) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারতকারী নারীদের ওপর অভিশাপ করেছেন।’
বর্ণিত হাদিসের বিপরীত বর্ণনা পাওয়া যায় মুস্তাদরাকে হাকিমে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবী কন্য হজরত ফাতেমা (রা.) প্রতি জুমাবারে তার চাচা হজরত হামজা (রা.)-এর কবর জিয়ারত করতেন। তিনি সেখানে নামাজ পড়তেন, কান্নাকাটি করতেন। -মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৩৯৬
কবর জিয়ারত নিয়ে এমন বিপরতমুখী দু’ধরণের হাদিসের সুন্দর ব্যাখা দিয়ে এর সমন্বয় করতে যেয়ে ইমাম তিরমিজি (রহ.) লিখেছেন, ইসলামি স্কলারদের মতে, যে হাদিসে কবর জিয়ারতকারী নারীদের অভিশাপ করা হয়েছে; ওই হাদিসটি ইসলামের প্রথম যুগের। যখন কবর জিয়ারত ইসলামে নিষিদ্ধ ছিল। পরবর্তীতে যখন নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়ে কবর জিয়ারতের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে তখন সে অনুমতি নর-নারী নির্বিশেষে সবার জন্যই দেওয়া হয়েছে।’
তাই তো আমরা দ্বিতীয় হাদিসে দেখতে পাচ্ছি, নবী কন্য হজরত ফাতিমা (রা.) প্রতি জুমাবার নিজের চাচার কবর জিয়ারত করতে যেতেন। নবী কন্যার মতো নবী পত্নী হজরত আয়েশা সিদ্দিকাও (রা.) কবর জিয়ারত করতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি মুলাইকা বলেন, একদিন হজরত আয়েশা (রা.) কবরস্থান থেকে আসলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কোথা থেকে আসলেন? তিনি বললেন, আমি আমার ভাই আবদুর রহমান ইবনে আবু বকরের কবরের কাছ থেকে আসলাম। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেননি? তিনি উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে কবর জিয়ারতের আদেশ করেছিলেন। -মুস্তাদরাকে হাকিম: ১৩৯২, সুনানে বায়হাকি: ৬৯৯৯
সারকথা হলো, পুরুষদের মতো নারীরাও কবর জিয়ারত করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, কবর জিয়ারতের নামে বেপর্দা হওয়া যাবে না। শরয়ি পর্দার পূর্ণ অনুগামী হয়ে পুরুষদের সংশ্রব ও সংমিশ্রণ এড়িয়ে এবং কবরের পাশে উচ্চ স্বরে বিলাপ বর্জন করে যদি কোনো নারী কবর জিয়ারত করতে যায় কিংবা আগ্রহী হয়- তবে ইসলাম তাকে স্বাগত জানায়।